নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শহরে প্রবেশ করলে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে (এনওয়াইপিডি) দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করাবেন।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, “এটা এমন কিছু, যা আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।”

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে দ্বিধাগ্রস্ত দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো: প্রেসিডেন্ট লি

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা

যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) স্বীকৃতি দেয় না যুক্তরাষ্ট্র, তবে মামদানির ব্যাখ্যা হলো, তিনি আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে সম্মান করবেন এবং নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করাবেন।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।

জোহরান মামদানি বলেন, “আমি চাই এই শহর (নিউ ইয়র্ক) আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে দাঁড়াক।”

নিউ ইয়র্ক বিশ্বে ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল। মামদানি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত তিনি যখন ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগানকে নিন্দাই জানাননি। যদিও তিনি বলেছিলেন, স্লোগানটির ব্যবহার তিনি নিরুৎসাহিত করবেন।

তবে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনের পরিপন্থি হতে পারে এবং বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। প্রথমত, তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে শহর বা রাজ্যের কোনো আইন ভঙ্গ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি যদি অপরাধে অভিযুক্তও হন, রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কারণে তাকে কূটনৈতিক দায়মুক্তি দেওয়া হবে।

আগামী নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে এগিয়ে থাকা নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেছেন, ফেডারেল সরকার যেখানে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে রাজ্য ও স্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের উদ্যোগী হতে হবে।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটা এমন এক সময় যখন নেতৃত্বের জন্য আমরা ফেডারেল সরকারের দিকে তাকাতে পারি না। এটা এমন এক মুহূর্ত যখন শহর ও রাজ্যগুলোকে দেখাতে হবে কীভাবে নিজেদের মূল্যবোধ, নিজেদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো যায়।”

মামদানি উদাহরণ টেনে বলেন, ২০০৪ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোর মেয়র হিসেবে গ্যাভিন নিউসম ফেডারেল আইন অমান্য করে সমলিঙ্গ দম্পতিদের বিয়ের লাইসেন্স দিয়েছিলেন।

তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালে যার বিরুদ্ধে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, সেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।

তবে কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথিউ সি.

ওয়াক্সম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, মামদানির এই পরিকল্পনা ‘আইন প্রয়োগের নীতির চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল বেশি’, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এ ধরনের গ্রেপ্তারের নজির নেই।

গত জুলাইয়ে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, মামদানির গ্রেপ্তার হুমকিকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “দেখো, দুনিয়ায় যথেষ্ট পাগলামিই হচ্ছে, মনে হয় সেটা কখনোই শেষ হবে না।” 

এরপর তিনি মন্তব্য করেন, “এটা অনেক দিক থেকে হাস্যকর, কারণ এটা একেবারেই সিরিয়াস কিছু নয়।”

“আমি সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে আসব, দেখা যাবে কী হয়,” বলেন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহুর সুরে সুর মিলিয়ে ট্রাম্প মামদানিকে উদ্দেশ্য করে যোগ করেন, “ওর ভালো আচরণ করা উচিত। না হলে ও বড় সমস্যায় পড়বে।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগ ও ৭ অক্টোবরের হামলায় নেওয়া জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। 

তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্রই থাকবে না।

নেতানিয়াহুর এই হুংকারের পর জোহরান মামদানি তাতে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলেন। 

জোহরান মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। মুসলিমবিদ্বেষ ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার এই তরুণ নেতা। অবশ্য, ট্রাম্প তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। যদিও নিউ ইয়র্ক শহরে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে মামদানির। 

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র গ র প ত র কর ন উ ইয়র ক ম মদ ন র

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ