সাংহাইয়ের এক ব্যস্ত রেস্তোরাঁয় সেদিন সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছিল। চুলার হাঁড়িতে স্যুপ ফুটছে, অপেক্ষায় গ্রাহকেরা। একটু পরেই তা টেবিলে টেবিলে পরিবেশন করা হবে। ঠিক তখনই, নেশায় বুঁদ হয়ে দুই কিশোরের মাথায় অদ্ভুত খেয়াল চাপল। তারা গোপনে গিয়ে এক হাঁড়ি স্যুপে প্রস্রাব করে দিল। এই ঘটনার দায়ে ওই দুই কিশোরকে ৩ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২২ লাখ ইউয়ান বা প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৮১ টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ঘটনাটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে চীনের সবচেয়ে বড় হটপট চেইন হাইদিলাও–এর সাংহাই শাখায় ঘটেছে। এই ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ১৭ বছর বয়সী ওই দুই কিশোর। তারা নিজেদের এই ‘কীর্তি’ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রাহকেরা। এ কারণে গত শুক্রবার আদালত চীনের দুটি ক্যাটারিং কোম্পানিকে ওই ক্ষতিপূরণ দিতে দুই কিশোরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সেদিন ওই স্যুপ কেউ খেয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এরপরও ঘটনার পরবর্তী কয়েক দিনে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া ৪ হাজারের বেশি গ্রাহককে তাদের বিল ফেরত দেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ গুণ অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হাইদিলাও।

গত মার্চে হাইদিলাও ২ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ানের বেশি ক্ষতিপূরণের দাবি দাবি করে আদালতে মামলা করে। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এ অর্থের মধ্যে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া অর্থও ধরা হয়েছে।

গত শুক্রবার এই মামলার রায়ে সাংহাই আদালত বলেছেন, ওই দুই কিশোর ‘অপমানজনক কাজের’ মাধ্যমে কোম্পানির সম্পত্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। এ ছাড়া এই ঘটনা ‘জনগণের মধ্যে প্রবল অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে’।

রায়ে আরও বলা হয়, ওই কিশোরদের অভিভাবকেরা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এই ক্ষতিপূরণের অর্থ তাঁদের পরিশোধ করতে হবে।

এই ক্ষতিপূরণের মধ্যে আছে—কার্যক্রম ও সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য ২০ লাখ ইউয়ান; সব হাঁড়ি, চুল্লি, এমনকি টেবিলও বদলে ফেলাসহ জীবাণুমুক্তকরণ বাবদ এক ক্যাটারারকে ১ লাখ ৩০ হাজার ইউয়ান এবং আইনি খরচ বাবদ ৭০ হাজার ইউয়ান।

আদালত রায়ে আরও বলেছেন, হাইদিলাও তাদের গ্রাহকদের যে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তা বিলের বাইরে এবং তাদের ‘স্বেচ্ছায় নেওয়া ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত’। তাই এর দায়ভার ওই কিশোরদের ওপর চাপানো যাবে না।

হাইদিলাও ইতিমধ্যে তাদের সব সরঞ্জাম বদলে ফেলেছে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করেছে।

চীনের হটপট চেইন হাইদিলাও প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল সিচুয়ান প্রদেশের ছোট্ট শহর জিয়ানইয়াং থেকে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এই চেইন রেস্তোরাঁটির এক হাজারের বেশি শাখা আছে। আর তাদের পরিচিতি শুধু সুস্বাদু খাবারের জন্য নয়—খাবারের অপেক্ষার সময় নারী গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ম্যানিকিউর ও শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া কটন ক্যান্ডির জন্যও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউয় ন

এছাড়াও পড়ুন:

রেস্তোরাঁয় কী অপরাধ করেছে দুই কিশোর, যার ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে ৩ লাখ ডলার

সাংহাইয়ের এক ব্যস্ত রেস্তোরাঁয় সেদিন সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছিল। চুলার হাঁড়িতে স্যুপ ফুটছে, অপেক্ষায় গ্রাহকেরা। একটু পরেই তা টেবিলে টেবিলে পরিবেশন করা হবে। ঠিক তখনই, নেশায় বুঁদ হয়ে দুই কিশোরের মাথায় অদ্ভুত খেয়াল চাপল। তারা গোপনে গিয়ে এক হাঁড়ি স্যুপে প্রস্রাব করে দিল। এই ঘটনার দায়ে ওই দুই কিশোরকে ৩ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২২ লাখ ইউয়ান বা প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৮১ টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ঘটনাটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে চীনের সবচেয়ে বড় হটপট চেইন হাইদিলাও–এর সাংহাই শাখায় ঘটেছে। এই ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ১৭ বছর বয়সী ওই দুই কিশোর। তারা নিজেদের এই ‘কীর্তি’ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রাহকেরা। এ কারণে গত শুক্রবার আদালত চীনের দুটি ক্যাটারিং কোম্পানিকে ওই ক্ষতিপূরণ দিতে দুই কিশোরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সেদিন ওই স্যুপ কেউ খেয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এরপরও ঘটনার পরবর্তী কয়েক দিনে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া ৪ হাজারের বেশি গ্রাহককে তাদের বিল ফেরত দেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ গুণ অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হাইদিলাও।

গত মার্চে হাইদিলাও ২ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ানের বেশি ক্ষতিপূরণের দাবি দাবি করে আদালতে মামলা করে। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এ অর্থের মধ্যে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া অর্থও ধরা হয়েছে।

গত শুক্রবার এই মামলার রায়ে সাংহাই আদালত বলেছেন, ওই দুই কিশোর ‘অপমানজনক কাজের’ মাধ্যমে কোম্পানির সম্পত্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। এ ছাড়া এই ঘটনা ‘জনগণের মধ্যে প্রবল অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে’।

রায়ে আরও বলা হয়, ওই কিশোরদের অভিভাবকেরা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এই ক্ষতিপূরণের অর্থ তাঁদের পরিশোধ করতে হবে।

এই ক্ষতিপূরণের মধ্যে আছে—কার্যক্রম ও সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য ২০ লাখ ইউয়ান; সব হাঁড়ি, চুল্লি, এমনকি টেবিলও বদলে ফেলাসহ জীবাণুমুক্তকরণ বাবদ এক ক্যাটারারকে ১ লাখ ৩০ হাজার ইউয়ান এবং আইনি খরচ বাবদ ৭০ হাজার ইউয়ান।

আদালত রায়ে আরও বলেছেন, হাইদিলাও তাদের গ্রাহকদের যে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তা বিলের বাইরে এবং তাদের ‘স্বেচ্ছায় নেওয়া ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত’। তাই এর দায়ভার ওই কিশোরদের ওপর চাপানো যাবে না।

হাইদিলাও ইতিমধ্যে তাদের সব সরঞ্জাম বদলে ফেলেছে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করেছে।

চীনের হটপট চেইন হাইদিলাও প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল সিচুয়ান প্রদেশের ছোট্ট শহর জিয়ানইয়াং থেকে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এই চেইন রেস্তোরাঁটির এক হাজারের বেশি শাখা আছে। আর তাদের পরিচিতি শুধু সুস্বাদু খাবারের জন্য নয়—খাবারের অপেক্ষার সময় নারী গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ম্যানিকিউর ও শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া কটন ক্যান্ডির জন্যও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্যুপের পাত্রে প্রস্রাব করায় জরিমানা ৩ লাখ ডলার