সরকারি আনন্দমোহন কলেজ আমার একসময়ের কর্মস্থল। গত বছরের শেষ দিকে একদিন গেলাম ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠে। কলেজ ভবনের আঙিনাতেই প্রাণিবিদ্যা ল্যাবরেটরির সামনে পেলাম মরিচ জবার দেখা। পরে লন্ঠন জবা পেলাম উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে।
মরিচ জবা তো নয়, যেন ভাঁজ করে রাখা একেকটি ছাতা। গাছজুড়ে ভাঁজ করে রাখা লাল ছাতার মতো ফুলের সমাহার। ছবি তুলে ফেললাম দ্রুত। ছোটবেলায় বাড়ির বাগানে ফোটা এই ফুল নিয়ে খেলেছি অনেক। সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
গুল্মজাতীয় একটি উদ্ভিদ মরিচ জবা। ফুল দেখতে পাকা মরিচের মতো হওয়ায় এর এমন নাম। মরিচ জবার গাছ সাধারণত ১ থেকে ৫ মিটার উঁচু হয়। অনেকে বাড়িতে বেড়া দেওয়ার জন্য এই গাছ লাগায়। শোভাবর্ধনেও এই ফুল গাছ বাড়ির চারপাশে রোপণ করা হয়। তবে আমাদের দেশে এখন আর এই ফুলগাছ অতটা চোখে পড়ে না।
মরিচ জবার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যালভাভিসকাস আরবোরিয়াস। এটি ম্যালভেইসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। পাতা সরল, একান্তর, বল্লমাকার, তিন লোববিশিষ্ট। কখনো কখনো লোববিহীনও হয়ে থাকে। পাতার কিনারাগুলো খাঁজকাটা থাকে। লম্বায় প্রায় ৯ সেন্টিমিটার, চওড়া ৬ সেন্টিমিটারের মতো। ফুল একক বা পাতার কক্ষে একত্রে কয়েকটি জন্মে। ফুল উজ্জ্বল লাল রঙের, ফানেলাকার কিন্তু মুখের দিকে সরু। বৃতি সবুজ রঙের। প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে, বেশি ফোটে শরতে এবং শীতের শুরুতে।
মরিচ জবার আদি নিবাস মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা। এর অনেক ইংরেজি নাম আছে—ওয়াক্স ম্যালো, টার্কস ক্যাপ (ম্যালো), টার্কস টারবান, স্লিপিং হিবিস্কাস, মানজানিলা, মানজানিটা (ডি পোলো), লেডিস টিয়ারড্রপ উল্লেখযোগ্য। ফুল পুরোপুরি খোলে না। প্রজাপতি ও হামিংবার্ডকে আকর্ষণ করে এই ফুল। ফুলে মধু থাকে। ডালপালা ও পাতা অবিকল জবার মতোই। ঝোপালো গাছ। ডালপালা এলানো থাকে। ফুল ঝুলন্ত। আকৃতি মরিচের মতো। পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গাঢ় লাল ও সাদা—দুই ধরনের ফুল পাওয়া যায়। শীতের প্রথম দিকে যখন অন্যান্য ফুল পাওয়া যায় না, তখন মরিচ জবা ফোটে। তাই এর চাহিদাও থাকে বেশি।
পূজার ফুল হিসেবে ও মালা তৈরির জন্য এ ফুলের বেশ কদর রয়েছে। ফুল বেশ কিছুদিন গাছে টিকে থাকতে পারে। একই সঙ্গে অনেক ফুল ফোটে, তাই খুব সহজেই এরা নজর কাড়তে পারে। এই গাছ দ্রুতবর্ধনশীল। বৃদ্ধির জন্য রোদের দরকার হয়।
উজ্জ্বল লাল ফুলের জন্য জনপ্রিয় মরিচ জবা। ফুল সম্পূর্ণভাবে ফুটলে পাপড়িগুলো পুংকেশরের চারপাশ আবৃত করে রাখে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে ভালোভাবে জন্মায়। বীজ বা কাণ্ড কেটে সহজেই বংশবিস্তার করা যায়।
মরিচ জবার ফুল, পাপড়ি ও গাছের ছালে রয়েছে ঔষধি গুণ। চোখ ওঠা, সর্দি ও কাশি, চুলের বৃদ্ধি, হাতের তালুতে চামড়া ওঠা ইত্যাদি রোগে কাজে লাগে এই ফুল।
আনন্দমোহন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে লন্ঠন জবা ফুল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ফ ল উদ ভ দ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সিডনিতে তিন তারকার হলো দেখা
দূর প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ দেশের চেনা মুখের দেখা মিলে গেলে সেটি কেবল একটি সাধারণ সাক্ষাৎ থাকে না। বরং হয়ে ওঠে দেশের স্মৃতি টেনে আনা এক মুহূর্ত, হয়ে ওঠে একটুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনির এডমন্ডসন পার্ক মলে।
বাংলাদেশের তিন অঙ্গনের তিন পরিচিত মুখ—ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, গায়ক তাহসান খান ও অভিনেতা মাজনুন মিজান সেখানে হঠাৎ একত্র হলেন। ব্যস্ত নগরের ভিড়ে এই তিন তারকার দেখা হয়ে গেল এক ‘অপ্রত্যাশিত’ আড্ডায়।
তিন ভুবনের তারকারা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস সম্প্রতি পরিবার নিয়ে সিডনিতে স্থায়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন নতুন করে জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। অভিনেতা মাজনুন মিজানও অনেক দিন ধরেই পরিবার নিয়ে সিডনিতে বসবাস করছেন।
ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা দেশে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ হলেও সিডনিতে তিনি অনেকটা পর্দার আড়ালেই থাকেন, তবু প্রবাসী বাঙালিদের কাছে তিনি প্রিয়জন।
অন্যদিকে গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান ছিলেন সফররত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে কনসার্ট করছেন তিনি। ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে সফল শো শেষে সিডনির কনসার্টেও হাজারো দর্শকের মন জয় করেছেন। এরপর সামনে রয়েছে মেলবোর্ন ও পার্থে তাঁর পরিবেশনা। সিডনিতে সফল কনসার্টের রেশ এখনো কাটেনি, এরই মধ্যে ঘটে গেল এই মিলন।