চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুর জেরে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হাসপাতালটির কর্মচারীদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের মারামারি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা ও নাম-পরিচয় জানা যায়নি। রোগীর স্বজনদের দাবি, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন আহত হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশ, রোগীর স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট বিমানবন্দর সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন গোলাপগঞ্জের তানিম আহমদ (২৪) নামের এক তরুণ। তাঁকে প্রথমে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ইবনে সিনা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় তানিমের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ তোলেন স্বজনেরা।

সূত্রগুলো আরও জানায়, বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে রোগীর স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। হাসপাতালটির কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের কর্মচারীরা রোগীর স্বজনদের মারধর করে বাইরে বের করে দেন। পরে স্বজনেরা একত্র হয়ে হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তানিমের চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেটের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ওই রোগীর অবস্থা শুরু থেকে সংকটাপন্ন ছিল। হাসপাতালের একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিষয়টি তদারক করছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ওই রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর স্বজনেরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। একপর্যায়ে আইসিইউর সামনে ভাঙচুর ও এর ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় এক ব্যবস্থাপককে তাঁরা বেধড়ক মারধর করেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের প্রতিহত করেছেন। এতে হাসপাতালের সাত-আটজন আহত হয়েছেন। এর পরও তিনি বিষয়টি জানার পর সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। রোগীর স্বজনেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মারামারির ঘটনায় ওই রোগীর পাঁচ স্বজন আহত হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ইবনে সিনা হাসপাতালেরও কয়েকজন আহত হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে হাসপাতালের কতজন আহত হয়েছেন, সেটি জানা যায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র গ র স বজন স বজন র র ঘটন য় আহত হয় গতক ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির

স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক। 

নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। 

নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদারীপুরে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ