কক্সবাজারে বাবাকে হত্যার পর মাটিচাপা, ছেলে গ্রেপ্তার
Published: 17th, September 2025 GMT
কক্সবাজার সদরে পারিবারিক কলহের জেরে বাবাকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে মাটিচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেইলপাড়া কুরিমারিয়ার ছড়া এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের নাম মোহাম্মদ ছৈয়দ (৫০)। অভিযুক্ত ছেলের নাম মোহাম্মদ রফিক।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছৈয়দের পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলছিল। কয়েক বছর আগে তারা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এসে খুরুশকুল এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পরিবারের সব সদস্যই রোহিঙ্গা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। পরে তারা ধানক্ষেতে সদ্য চাপা দেওয়া মাটির ভেতর থেকে গন্ধ বের হতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তার রফিকের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে শ্বশুর ছৈয়দ নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের ছেলে রফিকও কলহে জড়িয়ে পড়েন। রফিক লাঠি দিয়ে বাবাকে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে মৃত্যু হলে মরদেহ বস্তায় ভরে ঘরে রাখা হয়।
তিনি আরো জানান, ঘটনার ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে তার স্বামী হুমকি দিয়েছিল যে, বাবার মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে। এরপর সোমবার রাতেই ছৈয়দের স্ত্রী, দুই ছেলে রফিক ও সাহাবউদ্দিন মিলে বাড়ির পাশে ধানক্ষেতে লাশ মাটিচাপা দেন। পরে তারা সবাই আত্মগোপনে চলে যান।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস খান বলেছেন, “পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহতের ছেলে রফিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মামলার পর বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান