‘বান্দ তো ভাইঙ্গাই রইছে। বৃষ্টি অইলেই গাঙ্গে ঢল আইবো। তখন ভাঙা দিয়া আবার পানি আইলে ফসল আর ঘর তোলন যাইতো না। আমগর মতো গরিব মানুষের না খাইয়া দিন কাডাইন লাগবো। বান্দের একটা ব্যবস্থা না অইলে বাঁচুনের আর কোনো উপায় থাকত না।’

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার খৈলকুড়া গ্রামের দিনমজুর আফছর আলী (৫৫)। ধারদেনা করে এ বছর ২৫ শতক জমিতে রোপা আমন চাষ করেছিলেন। কিন্তু মহারশি নদীতে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে তাঁর খেতে পানি ঢুকেছে। পানি সঙ্গে বালুমাটিও পড়েছে খেতে। ফলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

শুধু দিনমজুর আফছর আলীর নয়, উপজেলার কয়েক শ কৃষকের ফসলের এমন ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ সংস্কার না করায় বারবার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় কৃষকেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খৈলকুড়া গ্রামের ব্রিজপাড় হয়ে নলকুড়া ইউনিয়নে যাতায়াতের রাস্তা ও মহারশি নদীর বাঁধটি একই সঙ্গে ভেঙে গেছে। পানির স্রোতে বাঁধ ও রাস্তার ভাঙা অংশ কয়েকটি বসতঘরসহ আমনের খেতে মিশে গেছে। ভাঙনের মুখে ফসলের মাঠে বালুর চর জমে উঠছে। নদীর পানি একেবারেই কমে গেছে। খৈলকুড়া হয়ে নলকুড়া যাওয়ার রাস্তা ভেঙে থাকায় পথচারীদের কষ্ট করে ভাঙন অংশ পার হতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে মহারশি নদীর ব্রিজসংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের আমনের আবাদ প্লাবিত হয়। এতে এক মুহূর্তে ভেসে যায় অন্তত ১১টি পরিবারের বসতভিটা। ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ৫০টির বেশি মাছের ঘের। পানিতে ৩৪৫ হেক্টর জমির আমনের ফসল সম্পূর্ণ এবং ৫৭৫ হেক্টর আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়। পাশাপাশি ৩৫ হেক্টর সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে বাঁধ উপচে ঝিনাইগাতী বাজারেও পানি প্রবেশ করে।

আরও পড়ুনশেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, দুজনের মৃত্যু১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০২২ সালের ঢলে খৈলকুড়ার এই বাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই এ বছর আবারও একই জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হলো। বাঁধটি সংস্কারের জন্য বারবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আবারও ভাঙনে মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ল। খৈলকুড়া গ্রামের বিধবা রহিমা বেগম (৫০) বলেন, ‘ঢলের পানিতে গাঙের বান্দ ভাইঙ্গা সব শেষ অইয়া গেছে। ২০ শতাংশ আমন ফসলে মধ্যে ১০ শতাংশ জমিতে বালু পইড়া গেছে। অর্ধেক ফসল শেষ। ভিটামাটিসহ শেষ সম্বল দুইডা টিনের ঘর ভাইঙ্গা গেছে। ঘরে থাকা সব জিনিস ঢলের পানি ভাসাইয়া নিছে। অহন কই থাকমু? কী করমু?’

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

আশরাফুল আলম বলেন, বৃষ্টি না থাকায় নদীর পানি কমে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বছর মহারশি নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। খৈলকুড়া ব্রিজপাড় এলাকায় বাঁধ কিছুটা নিচু থাকায় পাহাড়ি ঢলের চাপে নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ লক ড় নদ র ব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে পাহাড়ি ঢল: ‘বান্দের ব্যবস্থা না অইলে বাঁচুনের কোনো উপায় থাকত না’

‘বান্দ তো ভাইঙ্গাই রইছে। বৃষ্টি অইলেই গাঙ্গে ঢল আইবো। তখন ভাঙা দিয়া আবার পানি আইলে ফসল আর ঘর তোলন যাইতো না। আমগর মতো গরিব মানুষের না খাইয়া দিন কাডাইন লাগবো। বান্দের একটা ব্যবস্থা না অইলে বাঁচুনের আর কোনো উপায় থাকত না।’

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার খৈলকুড়া গ্রামের দিনমজুর আফছর আলী (৫৫)। ধারদেনা করে এ বছর ২৫ শতক জমিতে রোপা আমন চাষ করেছিলেন। কিন্তু মহারশি নদীতে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে তাঁর খেতে পানি ঢুকেছে। পানি সঙ্গে বালুমাটিও পড়েছে খেতে। ফলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

শুধু দিনমজুর আফছর আলীর নয়, উপজেলার কয়েক শ কৃষকের ফসলের এমন ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ সংস্কার না করায় বারবার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় কৃষকেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খৈলকুড়া গ্রামের ব্রিজপাড় হয়ে নলকুড়া ইউনিয়নে যাতায়াতের রাস্তা ও মহারশি নদীর বাঁধটি একই সঙ্গে ভেঙে গেছে। পানির স্রোতে বাঁধ ও রাস্তার ভাঙা অংশ কয়েকটি বসতঘরসহ আমনের খেতে মিশে গেছে। ভাঙনের মুখে ফসলের মাঠে বালুর চর জমে উঠছে। নদীর পানি একেবারেই কমে গেছে। খৈলকুড়া হয়ে নলকুড়া যাওয়ার রাস্তা ভেঙে থাকায় পথচারীদের কষ্ট করে ভাঙন অংশ পার হতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে মহারশি নদীর ব্রিজসংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের আমনের আবাদ প্লাবিত হয়। এতে এক মুহূর্তে ভেসে যায় অন্তত ১১টি পরিবারের বসতভিটা। ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ৫০টির বেশি মাছের ঘের। পানিতে ৩৪৫ হেক্টর জমির আমনের ফসল সম্পূর্ণ এবং ৫৭৫ হেক্টর আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়। পাশাপাশি ৩৫ হেক্টর সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে বাঁধ উপচে ঝিনাইগাতী বাজারেও পানি প্রবেশ করে।

আরও পড়ুনশেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, দুজনের মৃত্যু১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০২২ সালের ঢলে খৈলকুড়ার এই বাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই এ বছর আবারও একই জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হলো। বাঁধটি সংস্কারের জন্য বারবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আবারও ভাঙনে মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ল। খৈলকুড়া গ্রামের বিধবা রহিমা বেগম (৫০) বলেন, ‘ঢলের পানিতে গাঙের বান্দ ভাইঙ্গা সব শেষ অইয়া গেছে। ২০ শতাংশ আমন ফসলে মধ্যে ১০ শতাংশ জমিতে বালু পইড়া গেছে। অর্ধেক ফসল শেষ। ভিটামাটিসহ শেষ সম্বল দুইডা টিনের ঘর ভাইঙ্গা গেছে। ঘরে থাকা সব জিনিস ঢলের পানি ভাসাইয়া নিছে। অহন কই থাকমু? কী করমু?’

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম বলেন, বৃষ্টি না থাকায় নদীর পানি কমে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বছর মহারশি নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। খৈলকুড়া ব্রিজপাড় এলাকায় বাঁধ কিছুটা নিচু থাকায় পাহাড়ি ঢলের চাপে নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ