নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে রুবেল মিয়া (৪২) নামের পাঁচ মামলার এক আসামির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার হাতিরদিয়া বাজারসংলগ্ন নদ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

রুবেল মিয়া কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের নলবাইদ এলাকার হাবিব উদ্দিনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে কুলিয়ারচর ও শিবপুর থানায় চুরি, ছিনতাই, মাদক, হত্যাসহ পাঁচটি মামলা আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল নয়টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে একজনের লাশ ভেসে থাকার খবর জানতে পারে মনোহরদী থানা-পুলিশ। এক ঘণ্টা পর অজ্ঞাতপরিচয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক মো.

আশরাফ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্ত করেন। এরপর জানা যায়, তাঁর নামে পাঁচটি মামলা আছে।

লাশ উদ্ধারের স্থানটির এক পাশে নরসিংদীর মনোহরদীর হাতিরদিয়া এবং অপর পাশে গাজীপুরের কাপাসিয়ার সনমানিয়া এলাকা। পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার রাত তিনটার দিকে কাপাসিয়া থানার একটি টহল দল সনমানিয়া এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যান থামায়। পিকআপটিতে তিনটি গরু ও কয়েকজন লোক ছিলেন। পুলিশ দেখে তাঁরা পালানোর চেষ্টা করেন। ধাওয়া দিলে পিকআপটি সেতু পার হয়ে মনোহরদীর দিকে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে সেতুর অপর প্রান্তে আরেকটি গাড়ি চলে আসায় সেটি আটকে যায়। তখন লোকজন পিকআপ ফেলে পালিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গরু ও কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে।

মনোহরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহাতাব রহমান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন ছিলেন রুবেল মিয়া। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তিনি নদে ঝাঁপ দেন। কিন্তু নদ সাঁতরে পাড়ে উঠতে না পেরে ডুবে যান। আজ সকালে তাঁর লাশ ভেসে ওঠে। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা

রংপুরের পীরগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইংয়ের এক কেন্দ্রীয় সংগঠকের করা হত্যাচেষ্টার মামলাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

মামলার কয়েকজন আসামি ঘটনার দিন কারাগারে ছিলেন, একজন ছিলেন বিদেশে। তাঁদের অভিযোগ, হয়রানি ও মামলা বাণিজ্যের জন্যই তাঁদের আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, বাদীর তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহার হয়েছে।

পুলিশ, আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন মিঠিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর সরকার। তিনি এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক এবং রংপুর বিভাগীয় সার্চ কমিটির প্রধান বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার নাম এসেছে।

এজাহারে বলা হয়, গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে শহর থেকে ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে কুতুবপুর মৌজার পাল্লার পাতা এলাকায় হামলার শিকার হন হাফিজুর। তিনি উল্লেখ করেন, আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা ভ্যান থামিয়ে গালিগালাজ করেন। তখন ভ্যান থেকে নেমে আসামিদের ‘মোবাইল ফোনের আলোতে চিনতে পারিয়া’ তাঁদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। এরপর ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলামের নির্দেশে আসামিরা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাঁকে গুরুতর জখম করেন।

হাফিজুর আরও দাবি করেন, এর আগের বছর ৪ আগস্ট মহাসড়কে অনুষ্ঠিত এক দফার আন্দোলনকালে একই আসামিরা তাঁর ওপর হামলা চালায়, যাতে ২০ থেকে ৩০ জন আহত হন।

কারাগারে ছিলেন দুই আসামি

মামলায় উল্লেখিত ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র। ৬ নম্বর আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে পিন্টু জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২৭ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও শহিদুল ইসলাম কারাগারে ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন ও জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম।

মো. মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুল ইসলাম ১৬ জুন থেকে কারাগারে আছেন। নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দুর্নীতি দমন আইনের মামলায় ১৯ জুন কারাগারে যান। ১৩ জুলাই তিনি জামিন পান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী হাফিজুর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ৬ জুলাই তাঁর ওপর হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তবে তিনি মামলার ঘটনায় গত বছরের ৪ আগস্টের ঘটনাও তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষ্য, তখন কেউ জেলে ছিলেন না। হুকুমদাতা হিসেবে যেকোনো জায়গা থেকে হুকুম দিতে পারেন।

বিদেশে থেকেও আসামি

মামলার ৫ নম্বর আসামি সিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী। তিনি মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন। সিরাজুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ৪ জুলাই দিবাগত রাত তিনটার সময় থাইল্যান্ডে যাই, দেশে ফিরি ২০ জুলাই। তাহলে আমাকে “মোবাইলের আলোতে” দেখল কীভাবে? মামলা দিয়ে বাণিজ্য করতেই আমার নাম দিয়েছে।’ তিনি জানান, থানায় লিখিতভাবে তাঁর বিদেশে থাকার প্রমাণ দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই মামলায় স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার দুজন হাফেজকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ওই দিন (৬ জুলাই) পবিত্র ওমরাহ পালনে যেতে ঢাকায় এজেন্সির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। মামলায় আসামি হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের একজন ব্যবসায়ী ও একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকছেন।

এ বিষয়ে হাফিজুর বলেন, ‘আমি শুনতে পারছি, আরও একজন (আসামি) নাকি হজে ছিল। এটার ব্যাখ্যা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। যে উকিলের কাছ থেকে এজাহার করেছি, ওনার কাছ থেকে শুনে আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে পারব।’

বড় দরগাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাফিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, মামলায় চার ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়াকে মামলার দিনই গ্রেপ্তার করা হয়। মাফিয়া আক্তারের দাবি, মামলা থেকে নাম বাদ দিতে টাকা দাবি করেছে বাদীপক্ষের লোকজন, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশ্য হাফিজুরের দাবি, তিনি কোনো মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় দুটি ঘটনার উল্লেখ আছে। তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তদন্ত শেষ হলে আসামিদের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
  • অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি
  • মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার উপায়
  • তামান্না কী আধ্যাত্মিক মানুষ?
  • চাকসু নির্বাচন: প্যানেলে ভিপি-জিএস পদে নারী শুধু একজন
  • সুনামগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১
  • ঘরের চালে ঢিল ছোড়া নিয়ে বিরোধ, মীমাংসার পর মারামারিতে প্রাণ গেল একজনের
  • জাদুঘর থেকে উধাও ফারাওর সেই ব্রেসলেট চুরির পর সোনা পেতে গলিয়ে ফেলা হয়েছে
  • কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা