সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে দুর্গাপূজা মণ্ডপে জেলা প্রশাসক জাহিদুল
Published: 28th, September 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। শিল্পনগরী এই জেলার অনেকটা অবহেলিত ও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই পবিত্র প্রার্থনালয়।
এক পাশে গাজীপুরের কালীগঞ্জ এবং অপর পাশে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলা। নারায়ণগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সচরাচর এই পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন না।
তবুও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় অন্য সবার মতো তারাও সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তাদের উৎসবে মেতে উঠতে। মাসাধিককাল ধরে প্রতিমা নির্মাণ শেষে মহাষষ্ঠীর পূজার মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু হলো নারায়ণগঞ্জের শারদীয় দুর্গাপূজা।
শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তাসহ সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে দেখতে রবিবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপে প্রথম দিনেই উপস্থিত হয়ে সবাইকে চমকে দেন।
আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী বাদল দাস চৌধুরী বলেন, “আমাদের এই মন্দির জেলা সদর থেকে এত দূরে হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম স্যার আমাদের পূজা পরিদর্শনে আসায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
আমি আমার জীবনে এত আন্তরিক জেলা প্রশাসক কখনো দেখিনি। আমরা হিন্দু সম্প্রদায় যখন কোনো আবদার করি, তিনি কখনো না বলেন না। দ্রুততম সময়ে আমাদের অনুরোধ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের মন্দিরের পাশে একটি অতিথিশালা আছে, যেখান থেকে ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। আমরা জেলা প্রশাসক স্যারকে অতিথিশালাটি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। এতে আমরা খুব খুশি।”
রূপগঞ্জ উপজেলার শ্রী শ্রী জ্ঞোপাল জিউর মন্দির গোলাকান্দাইল (উত্তর) দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী অবিনাশ দাসও জেলা প্রশাসকের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, “উনার কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয়েছে তিনি খুব ভদ্র ও শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমাদের আয়োজনের প্রশংসা করে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এবং ভক্তবৃন্দ যাতে নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে পারেন সেই আহ্বান জানিয়েছেন।”
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, “আমরা যখন বড় হয়েছি, তখন কে কোন ধর্মের সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটাই বাংলাদেশের সৌন্দর্য। এটি ভবিষ্যতেও থাকবে। এটি ধরে রাখতে হবে। এটাই আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য। আমরা বিশ্ববাসীর সামনে এটি ফুটিয়ে তুলতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “উৎসব কখনো একা করা যায় না। সকলকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজন করতে হয়। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নিয়ে উৎসব পালিত হলে সেটি পূর্ণতা পায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে উৎসবের সৌন্দর্য বাড়ে। শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়, সে জন্য আমরা যত মণ্ডপ সম্ভব পরিদর্শনে যাব।
আমাদের অন্যান্য কর্মকর্তারাও যাবেন। সরকারের প্রতিটি দপ্তর স্বতঃস্ফূর্তভাবে নজর রাখছে। আমরা আশা করি এবারের উৎসবটি খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। এই দেশ আমাদের সবার। কোনো সমস্যা হলে সেটি আমাদের মিলেমিশে সমাধান করতে হবে। এটি অন্য কারো বিষয় নয়।”
তিনি আরো বলেন, “শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি রাখা হবে না। সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনে জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর।”
জেলা প্রশাসক প্রথমে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের শ্রীশ্রী জ্ঞোপাল জিউর মন্দির গোলাকান্দাইল (উত্তর) দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ এবং গোলাকান্দাইল উত্তরপাড়া রাধামাধব মন্দির সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তিনি মণ্ডপগুলোর সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন যে, শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতি বজায় রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হচ্ছে।
সব শেষে তিনি রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। সেখানে জেলা প্রশাসক পৌঁছালে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দর্শনার্থীরা তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জেলা প্রশাসক কিছুক্ষণ সেখানে সময় কাটান এবং সবার সঙ্গে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন। তিনি মণ্ডপে আর্থিক অনুদান প্রদান করে মন্দিরের উন্নয়নে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট কানিজ ফারজানা শান্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ পর ব শ মন দ র আম দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দিনভর আনন্দ আয়োজনে সাফল্য উদ্যাপন
ভালো ফলাফলের পাশাপাশি প্রথমে ভালো মানুষ হয়ে উঠতে হবে। দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। বই ও জ্ঞানের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ প্রযুক্তির জ্ঞান আহরণ করতে হবে। পাশাপাশি গান, আবৃত্তি, অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে।
শুক্রবার রংপুরে ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব-২০২৫’-এ কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমন্ত্রিত অতিথিরা এ কথাগুলো বলেন। ‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ স্লোগানে প্রথম আলোর আয়োজনে ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথমবারের মতো উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের পর আজ রংপুরে ছিল দ্বিতীয় আয়োজন। অন্য ছয়টি বিভাগীয় শহরে এ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন। সকাল থেকেই কৃতী শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকস ও ডিজিটাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থী আরেফা খানম এসেছেন এক দিনের জন্য চাপমুক্ত থাকতে। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা পড়াশোনার চাপে বেড়ানোর সুযোগ হয় না। তাই আজকের দিন বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে কাটাতে চান। কুড়িগ্রামের আবদুর রহিম এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। প্রথম আলোর সংবর্ধনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এইচএসসির কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার এই আয়োজন তাঁর ভালো লাগছে।
রংপুরে ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব-২০২৫’-এ আগত অতিথিরা। শুক্রবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে