সুন্দরবনে হরিণ শিকারের ৫০ ফাঁদ ও কাঠ জব্দ
Published: 16th, October 2025 GMT
সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশনের ঘাগড়ামারী ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি হরিণ শিকারের ফাঁদ ও ২০ টুকরা কাঠ জব্দ করেছে বন বিভাগ। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে কুলতলী খাল সংলগ্ন জঙ্গল থেকে এসব উদ্ধার করা হয়।
ঢাংমারী স্টেশনের ঘাগড়ামারী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘নিয়মিত টহলের সময় জঙ্গলে সন্দেহজনক নড়াচড়া চোখে পড়ে। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে হরিণ শিকারের জন্য পাতা ৫০টি ছিটকা ফাঁদ ও ২০ টুকরা কাঠ জব্দ করা হয়।’’
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে দুজন শিকারি ও কাঠ চোরকে শনাক্ত করা হয়েছে। বনকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তারা পূর্বে একই এলাকায় হরিণ শিকারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেল খেটেছিল। বনের সম্পদ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা/শহিদুল/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের খালে নৌকায় ‘হিমায়িত’ ৪৮ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার
রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের গহিন বনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফিরছিলেন একদল শিকারি। সত্যপীরের খাল পেরিয়ে শাকবাড়িয়া নদী ধরে নৌকাটি যখন লোকালয়ের দিকে এগোচ্ছিল, তখন হাজির হন কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে এক শিকারি নদীর তীরে লাফিয়ে পালিয়ে যান, আরেকজন ধরা পড়েন।
ওই নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ঝুড়ি ও চারটি কর্কশিটে বরফে রাখা প্রায় ৪৮ কেজি হরিণের মাংস ও ৮০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর তীরে এ ঘটনাটি ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকালে আটক ব্যক্তি ও উদ্ধার করা মাংস নিয়ে বনরক্ষীরা ফিরে আসেন কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট কার্যালয়ে।
আজ সকালে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শাকবাড়িয়া নদীতে টহল দিচ্ছিলাম। নদীর এক পাশে লোকালয়, অন্য পাশে সুন্দরবন। হঠাৎ দেখি, একটি নৌকায় দুজন ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে বসে আছেন। কাছে যেতেই একজন নদীর তীরে লাফিয়ে পালান, অন্যজনকে আটক করি। নৌকায় বরফে ঢাকা পাত্রে হরিণের মাংস ও মাছ ছিল। সেখানে সুন্দরবনে মাছ ধরার বড় চরেপাতা জালও পাওয়া গেছে।’
আটক ব্যক্তির নাম দিদারুল ইসলাম (৩৫)। তাঁর বাড়ি কয়রার মহারাজপুর গ্রামে। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ১ নম্বর কয়রা গ্রামের মনিরুল ইসলাম সরদার। বন বিভাগ জানিয়েছে, এ ঘটনায় কয়রা বন আদালতে মামলা করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করা হরিণের মাংস বিনষ্ট করা হবে। জব্দ করা মাছগুলো ইতিমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, লোকালয়ের পাশের ছোট নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। শিকারিরা সাধারণত কোনো প্রস্তুত ফাঁদ বহন করে নিয়ে যান না। মাছ ধরার জালের সঙ্গে দড়ি নিয়ে বনে যান। সেই দড়ি ব্যবহার করে নিজেরাই বানান ‘ডোয়া’ নামের ফাঁদ। হরিণের চলাচলের পথে এই ফাঁদ পেতে রাখা হয়। হরিণ ফাঁদে আটকা পড়লে তাঁরা বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জবাই করে মাংস লোকালয়ে এনে বিক্রি করেন। পরে ফাঁদগুলো মাটির নিচে পুঁতে রেখে যান, যাতে আবার ব্যবহার করা যায়।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘হরিণ শিকারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ “জিরো টলারেন্স”। শিকার হওয়ার পর মাংস উদ্ধার কোনো সাফল্য নয়, প্রকৃত সাফল্য হলো শিকার হওয়ার আগেই হরিণকে রক্ষা করা। আমরা হরিণের মাংসের ক্রেতা, বিক্রেতা ও শিকারিদের চিহ্নিত করছি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করেছি। অপরাধ উদ্ঘাটনে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।’