সুন্দরবনে বাঘ-হরিণ শিকার রোধে বসানো ক্যামেরা ভাঙল দুর্বৃত্তরা
Published: 28th, November 2025 GMT
সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকার ঠেকাতে সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে স্থাপন করা নজরদারি একটি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সুন্দরবনে অপরাধপ্রবণ ২৪টি স্থান শনাক্ত করে ক্যামেরা ট্র্যাপ বসানো হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরার নোটাবেঁকিতে স্থাপন করা দুটি ক্যামেরার একটি ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।
বন বিভাগের সূত্র জানায়, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২৪টি স্থানে মোট ২৪টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। অরণ্যক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বিভিন্ন ক্যাম্প ও স্টেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার গাছে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সাতক্ষীরা রেঞ্জে কোবাদক ও পুষ্পকাটিতে দুটি করে এবং দোবেকিতে ছয়টি—মোট ১০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের বিভিন্ন ক্যাম্প ও স্টেশনের আওতায় স্থাপন করা হয়েছে বাকি ১৪টি ক্যামেরা। সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনভূমির আয়তন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩১ হেক্টর। বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক, কৈখালি ও কদমতলা—এই চারটি স্টেশনের অধীনে রয়েছে ১০টি প্যাট্রোল ক্যাম্প।
নির্দিষ্ট মৌসুমে সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণের অনুমতি দেওয়া হলেও অনেক জেলে সেই সুযোগে বনের গভীরে প্রবেশ করেন। কেউ অনুমতি নিয়ে, কেউ আবার অনুমতি ছাড়াই মাছ-কাঁকড়া ধরার নামে ঢুকে বন্য প্রাণী, বিশেষ করে হরিণ শিকার করেন। কারা কোন পথ দিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করছেন, তা চিহ্নিত করতে এসব গোপন ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৯১১টি হরিণের ফাঁদ ও ৪৫ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনের অন্তর্গত বহু এলাকা খুবই দুর্গম। যৌথ অভিযান ছাড়া শিকারি ও বনদস্যুর তৎপরতা পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে হরিণ ও বাঘ শিকার ঠেকাতে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের ওপর গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।
ফজলুল হক আরও বলেন, নোটাবেঁকিতে বসানো ক্যামেরা দুটির মধ্যে থেকে একটি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুর্বৃত্তরা ভেঙে দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দুই মাস পর পর ক্যামেরার ধারণ করা ছবি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে হরিণ শিকার রোধে টানা অভিযান, তিন দিনে সাড়ে ৯ হাজার ফুট ফাঁদ উদ্ধার
মোংলার সুন্দরবনসংলগ্ন পশুর নদের তীরের কানাইনগর এলাকা। চারদিকে নোনা হাওয়া আর নদীর গন্ধে ভরা নীরবতা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সেই নীরবতা ভাঙে কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় একটি ঝুপড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ কেজি হরিণের মাংস, দুটি মাথা, আটটি পা ও আড়াই হাজার মিটার লম্বা ফাঁদ। ঘটনাস্থল থেকেই একজন শিকারিকে আটক করা হয়।
সুন্দরবনের বিভিন্ন টহলফাঁড়ি এলাকায় টানা অভিযান চলছে। গত তিন দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ৯ হাজার ৪১০ ফুট ফাঁদ।
এ বিষয়ে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম–উল–হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আটক শিকারির সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী শিকারের নানা আলামত। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান চলবে।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার বন বিভাগের চরপুটিয়া টহলফাঁড়ির বনরক্ষীদের টহলে গহিন জঙ্গলের চরের খাল এলাকা থেকে উদ্ধার হয় ৮০০ ফুট লম্বা হরিণ শিকারের পেতে রাখা ফাঁদ। একই দিনে হুলার ভারানী ও সূর্যমুখী খালসংলগ্ন বনাঞ্চলে হেঁটে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় আরও ১৩৫ ফুট লম্বা ফাঁদ।
এর আগের দিন মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরপুটিয়া ফাঁড়ির টহলে উদ্ধার হয় আরও দুটি ফাঁদ—একটি ৫০০ ফুট লম্বা, আরেকটি বস্তায় ভরা অবস্থায়। একই দিনে শেলার চর এলাকার ভাঙ্গার খাল থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০০ ফুট লম্বা ফাঁদ।
আরও পড়ুনসুন্দরবনের খালে নৌকায় ‘হিমায়িত’ ৪৮ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার১৪ অক্টোবর ২০২৫সোমবার শেলার চর টহলফাঁড়ির বনরক্ষীরা আদানি–গুড়গুড়ি বনাঞ্চলে টহলের সময় কেওড়া ও গরানগাছের মাঝখানে মালা ফাঁদ দেখতে পান। প্রায় ২০০ ফুট লম্বা এসব ফাঁদ জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। একই দিনে জোংড়া টহলফাঁড়ির বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার হয় আরও ২৫০ ফুট ফাঁদ। তার আগের দিন ২৩ নভেম্বর মুচিরদোয়ানি খালের পাশের বনাঞ্চল থেকে ১৫০ মিটার ফাঁদ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও শিকারি হিসেবে পূর্বে দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনের যেখানে কেওড়াগাছ বেশি, সেসব এলাকায় হরিণ চলাচল তুলনামূলক বেশি। শিকারিরা দড়ি দিয়ে ‘ডোয়া’ নামে লম্বা ফাঁদ তৈরি করে হরিণের চলার পথে রাখে। এতে চলাফেরার সময় হরিণ আটকা পড়ে। ‘ছিটকে ফাঁদ’ নামে আরেক ধরনের ফাঁদে ধরা পড়ে হরিণ। শিকারিরা সাধারণত দড়ির বোঝা নিয়ে বনে ঢোকে এবং ভেতরেই ফাঁদ তৈরি করে। পরে এসব ফাঁদ বস্তায় ভরে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়, বারবার ব্যবহারের জন্য।
আরও পড়ুনসুন্দরবনে ফাঁদে আটকে ছটফট করছিল প্রাণীটি১৯ অক্টোবর ২০২৫সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখন ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ পদ্ধতিতে সারিবদ্ধভাবে বনের ভেতর হেঁটে টহল দেওয়া হয়, যাতে চিরুনির মতো অগ্রসর হয়ে ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত করা যায়। বাঘ–কুমিরের ঝুঁকি থাকলেও নিয়মিত কাউন্ট ও কথা বলতে বলতে বনের ভেতর দিয়ে এগোলে নিরাপত্তা থাকে। তিনি বলেন, ‘হরিণকে বাঁচাতেই হবে, না হলে বাঘও বাঁচবে না। হেঁটে টহল দেওয়ায় অনেক ফাঁদ আগেই শনাক্ত হচ্ছে, এতে বহু হরিণ রক্ষা পাচ্ছে।’