জুলাই যোদ্ধাদের ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলা গুরুতর অসৌজন্যতা: জামায়াত আমির
Published: 18th, October 2025 GMT
জুলাই সনদ সই করার দিনে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ বিক্ষোভ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বাহাসের মধ্যে এবার প্রতিক্রিয়া জানালেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জুলাই যোদ্ধাদের স্বৈরাচারের দোসর বলাটা গুরুতর অসৌজন্যতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। দয়া করে দায়িত্বশীল কোনো জায়গা থেকে আমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করা জাতির গর্বিত লোকগুলোর ব্যাপারে এমন কথা বলব না।’
আজ শনিবার সালাহউদ্দিনের এক বক্তব্যের পর তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলার মধ্যে বিকেলে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন জামায়াত আমির।
ওই পোস্টে কারও নাম উল্লেখ না করে শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘কেউ এমন আচরণ করলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা আমরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব, ইনশা আল্লাহ।’
সেই পোস্টের নিচে আমিন জালাল তালুকদার নামের একজন কমেন্ট করেন—‘সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন “জুলাই যোদ্ধাদের ভেতরে কিছু গুপ্ত ফ্যাসিস্ট ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে” এখানে ভুল কোথায়? উনি জুলাই যোদ্ধাদের ফ্যাসিস্ট বলেননি।’
গতকাল শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তাঁরা তিনটি দাবি নিয়ে বিক্ষোভের একপর্যায়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের জোর করে তুলে দেয়। এরপর ওই মঞ্চেই জুলাই সনদে সই করেন বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪ দলের নেতারা।
আরও পড়ুননাহিদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানে যা বললেন সালাহউদ্দিন১ ঘণ্টা আগেসেই প্রসঙ্গ ধরে আজ সকালে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব বিশৃঙ্খলতা হয়েছে, আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন আছে। দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারে না।’
এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে করা বক্তব্য প্রত্যাহারের পাশাপাশি সালাহউদ্দিন আহমদকে জুলাই যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
নাহিদ বলেন, ‘তিনি ভুলবশত, হয়তো তাঁর কাছে তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকমটা বলেছেন । যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না। যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না। সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল?’
নাহিদের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমেদ এক অনুষ্ঠানে বলেন, তাঁর বক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলার দায় তাঁর ওপর চাপানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন‘দোসর’ বলার জন্য সালাহউদ্দিনকে ক্ষমা চাইতে হবে: নাহিদ৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ জ ল ই সনদ
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, দাফন দিল্লিতে: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় আর দাফন দিল্লিতে। এখন দাফন-কাফন খুলে মাঝেমধ্যে একটু চিৎকার করে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। বাংলাদেশে যেন আর কখনো এ রকম স্বৈরাচার, সামরিক শাসক, ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি না হয়।’
আজ শুক্রবার রাত আটটায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী বাজারে মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা বিএনপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপি, খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র রক্ষায় ভূমিকা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।
৭ নভেম্বরের ঘটনা, ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু, সংসদীয় শাসনব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করা—এসব অর্জনও বিএনপির নেতৃত্বেই হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য দায়ী উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছেন, একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা বিএনপির সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী। বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হেফাজতুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা ওলামা দলের সভাপতি আলী হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে সালাহউদ্দিন আহমদ কোনাখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা, বরইতলী, সাহারবিল, ঢেমুশিয়া ও বদরখালী এলাকায় গণসংযোগ করেন। বেলা তিনটায় চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনছারুল ইসলাম চৌধুরীর জানাজায়ও অংশ নেন তিনি।