বড়পুকুরিয়ায় সব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ, ৮ জেলায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট
Published: 21st, October 2025 GMT
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে।
গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট এবং এর আগে ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে গর্ভনর ভালভ স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হয়। এসব কারণে কেন্দ্রটির ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের সংস্কারকাজ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলমান। ফলে তখন থেকে এই ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই ইউনিটটিতে উৎপাদন শুরুর আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন১২ দিন পর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ত্রুটির কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বন্ধ হওয়া তৃতীয় ও দ্বিতীয় ইউনিটে এক সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে ত্রুটি সারিয়ে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচলের চেষ্টা চলছে।
জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উত্তরাঞ্চলে চাহিদা পূরণে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্যদিকে সরবরাহে ঘাটতি। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। জাতীয় গ্রিড থেকেও মিলছে না চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ। জাতীয় গ্রিড থেকে কমিয়ে দেওয়া হয় দিনাজপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ত্রুটি দেখা দিলে প্রভাব পড়ে পার্বতীপুরে। বিশেষ করে পার্বতীপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ছেন। এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে ভ্যাপসা গরম। ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়ছে অঞ্চলটি। এই গরমে সেখানে বেড়েছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। সকাল, ভোর কিংবা গভীর রাতে চলে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট।
উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়াপড়া আবু সালেম বলেন, একদিকে গরম; অন্যদিকে রাত-দিন সমানতালে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। এ অবস্থায় সুস্থ থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পার্বতীপুর জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জহুরুল হক। তিনি বলেন, ছুটির দিন ছাড়া জোনটিতে প্রতিদিনের চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কয়েক দিন থেকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে পল্লীবিদ্যুতের প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট। এ ছাড়া বিদ্যুতের ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো জাতীয় গ্রিডে। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ১ হাজার ৬০০ টন কয়লা লাগে। ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টন কয়লা ব্যবহার করা হতো। ১২৫ মেগাওয়াট দ্বিতীয় ইউনিটে প্রতিদিন ৬০ তেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। এখানে ব্যবহৃত হতো ৮০০ থেকে ৯০০ টন কয়লা। ২০২০ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি সংস্কারের জন্য ওভার হোলিংয়ে আছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। তবে এ পর্যন্ত তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনো চালাতে পারেনি তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনযান্ত্রিক ত্রুটিতে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সরবরাহ করা কয়লার ওপর নির্ভর করে চলে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। এদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে তিন থেকে চার মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক আছেন। পার্বতীপুর শহরে নেসকোর বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে সাত মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ তিন মেগাওয়াট।
এ ব্যাপারে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তৃতীয় ও প্রথম ইউনিটটি মেরামতের কাজ চলমান। দুটি ইউনিট চালু হলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমবে আসবে। এক সপ্তাহের পর কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ব ত য় ইউন ট ব দ য ৎ উৎপ দ বড়প ক র য়
এছাড়াও পড়ুন:
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকরকর সিদ্দিক।
তিনি জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটের গভর্নর ভাল্ব স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১ নম্বর ইউনিটটি গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বন্ধ হয়ে গেছে।
মো. আবু বকরকর সিদ্দিক বলেছেন, বিকল হয়ে যাওয়া ইউনিটগুলো মেরামতের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করছি, বিকল যন্ত্রাংশ ঠিক করে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরবরাহ করতে পারব।
প্রতিদিন বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটে ৫০ মেগাওয়াট এবং ৩ নম্বর ইউনিট থেকে ১৬০ থেকে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। ২ নম্বর ইউনিটটি ২০২০ সাল থেকেই বন্ধ আছে।
ঢাকা/মোসলেম/রফিক