রিশাদকে সুপার ওভারে না দেখে অবাক হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
Published: 21st, October 2025 GMT
ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবার সুপার ওভার খেলল বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলায় আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ২১৩ রান করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসও থেমে যায় ২১৩ রানে। তাতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
নতুন এ অভিজ্ঞতায় শুরুটা হলো বাজে। বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে ১ রানের সমীকরণ মেলাতে না পেরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাটিং করে ১০ রান করে। বাংলাদেশ ৯ রানের বেশি করতে পারেনি। অথচ ম্যাচ জয়ের সূবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল দল। নিষ্প্রাণ ব্যাটিংয়ে ম্যাচ হেরেছে স্বাগতিকরা। ৬ বলে ১১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে অতিরিক্ত ৩ রান পায় বাংলাদেশ।
স্পিনার আকিল হোসেন দুইটি ওয়াইড ও একটি নো বল করেন। নো বলের ফ্রি হিট সৌম্য সরকার কাজে লাগাতে পারেননি। সৌম্য ও সাইফ ইনিংস শুরু করেন। পরে সৌম্য আউট হলে শান্ত ব্যাটিংয়ে আসেন। ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি তাতেও। শেষ বলে ৩ রানের প্রয়োজন ছিল। সাইফ ১ রানের বেশি নিতে পারেনি।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছেন, ‘‘আমাদের জন্য এটা (সুপার ওভার) একটা নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। প্রথমবারের মতো সুপার ওভার খেলেছি। আমার মনে হয় ব্যাট করা সহজ উইকেট ছিল না। সুপার ওভারে, আমাদের ১১ রান প্রয়োজন ছিল এবং একটি বাউন্ডারি পরিস্থিতি বদলে দিতে পারত।’’
মূল ম্যাচে রিশাদ ১৪ বলে ৩৯ রান করেন ৩টি করে চার ও ছক্কায়। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দুইশর বেশি পুঁজি পায়। কিন্তু সুপার ওভারে তাকে ব্যাটিংয়ে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়েছে অনেকেই। তবে অধিনায়কের কণ্ঠে রিশাদকে নিয়ে প্রশংসা ছিল, ‘‘রিশাদ এই মুহূর্তে খুব ভালো করছে। সব ব্যাটসম্যানই লড়াই করছিল কিন্তু সে আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছিল।’’
রিশাদকে ব্যাটিংয়ে আসতে না দেখে অবাক হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। সংবাদ সম্মেলনে আকিল হোসেন বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। মানে, যে ব্যাটসম্যান ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক বলে মনে হয়েছিল, প্রায় ১৪ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত ছিল। আর সে সুপার ওভারে নেই। শর্ট সাইডে সে দুটি ছক্কা মেরেছে। আমরা সবাই একটু অবাক হয়েছিলাম যে, সে ব্যাটিং করতে আসেনি যা আমাদের পক্ষে কাজ করেছে।’’
এদিকে হিসেবের গণ্ডগোলে সাইফকে দিয়ে মূল ম্যাচে শেষ ওভার করতে হয়। শেষ ৬ বলে ৫ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সাইফ প্রথম দুটি ডটের পর চতুর্থ বলে আকিল হোসেনকে আউট করেন। শেষ বলেও উইকেট পেতে পারতেন। কিন্তু সোহান ক্যাচ মিস করায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। তার বোলিং নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আর কোন বিকল্প ছিল না। আমি ভাবছিলাম আমরা কি আরেকটি উইকেট পেতে পারি.
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র র ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
সন্ধ্যার আকাশ ঢেকে গেছে নরম কুয়াশায়। আকাশের বুক জুড়ে নরম কুয়াশার পরত, আর মাটির উপর ঝলমলে হাজার প্রদীপের সারি। সব মিলিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যা যেন আজ অন্যরকম।
ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শুরু করে বাদামতলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট প্রদীপ—যেন কারো সূক্ষ্ম আঁচড়ে আঁকা আলোর নদী। প্রতিটি শিখা যেন অন্ধকারকে ভাঙতে চায়, হৃদয়ের অজানা এক অদৃশ্য পথ দেখায়।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের ৫ রুট, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বসেছে প্রতিমার হাট
প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে দীপাবলি উদযাপন করা হয়। দীর্ঘ সময় পর সোমবার (২০ অক্টোবর) দ্বিতীয়বারের মতো এবার শ্যামা কালীপূজাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করে ‘বাণী অর্চনা সংঘ’। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি আলপনা আর মাটির প্রদীপে আজ আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
এর আগে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন ট্রান্সপোর্ট চত্বরে। কেউ হাতে প্রদীপ নিচ্ছেন, কেউ ঝাড়বাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউবা বন্ধুর সঙ্গে হাসিতে মেতে উঠছেন।
সন্ধ্যা নামতেই এক জাদুকরী দৃশ্যে রূপ নেয় পুরো ক্যাম্পাস। সারি সারি প্রদীপের আলোয় ক্যাম্পাসের লাল ইটের পথ হয়ে ওঠে সোনালি। বাতাসে ভেসে আসছে ধূপের গন্ধ। হাসির ঝলক আর আলোর মায়ায় মুহূর্তগুলো থেকে যায় স্মৃতির ভাঁজে।
এক শিক্ষার্থী বললেন, “সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, ব্যস্ততা— আজকের এই সন্ধ্যা যেন একটু থেমে থাকার দিন। প্রদীপ জ্বালানোটা শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা উপলক্ষ।”
বাণী অর্চনা সংঘের সভাপতি অনিক মালো বলেন, “ক্যাম্পাসে দীপাবলীর উৎসব উদযাপন করতে পেরে নিজের কাছে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সব অপশক্তি দূর হবে, এটা আশা করি।”
মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি প্রদীপের আলো বাতাসে কাঁপছে, যেন এক জীবন্ত শিখা। কেউ বাজি ফুটাচ্ছে, কেউ কেউ শাড়ি পরে এসেছে–মনোযোগ ভালো ছবির ফ্রেমে। সেলফি তুলছে। তবে উৎসবের মধ্যে কোথাও নেই বিশৃঙ্খলা— আছে শুধু উচ্ছ্বাস আর আলোর স্নিগ্ধতা। মিষ্টিমুখ চলছে, কেউ মিষ্টি মুখে তুলে বলছে, “এত সুন্দর ক্যাম্পাস আগে দেখিনি!”
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ঋতু রানী বলেন, “পরিবারের বাইরে প্রথমবারের মত দীপাবলি পালন করছি। সবারর অংশগ্রহণে বেশ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হচ্ছে।”
ট্রান্সপোর্ট চত্বরে তখন চলছে আরেক দৃশ্য। গানের আসর বসেছে ছোট করে। কেউ গিটার হাতে, কেউ তাল দিচ্ছে তালি দিয়ে। লালন গীতির সুরের ভেলায় মিলেমিশে যাচ্ছে দীপের আলো আর তারুণ্যের হাসি। রাত যত গভীর হচ্ছে, প্রদীপগুলো তত নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখে তখনও জ্বলছে আলো। সেই আলো শুধু প্রদীপের নয়। একাত্মতার, সৌন্দর্যের, আর জীবনের প্রতি ভালোবাসার আলো।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন, “শ্যামা পূজায় পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তি বিরুদ্ধে আমরা প্রদীপ প্রজ্বলন করি। আমরা চাই এই প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সব খারাপ শক্তির বিনাশ হোক।”
আজকের এই এক হাজার প্রদীপের সন্ধ্যা যেন শুধু আলোর উৎসব নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অন্তরের এক দীপান্বিত যাত্রা। প্রতিটি শিখা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবন ছোট ছোট আলোয় পূর্ণ, আর সেই আলোর উষ্ণতায় আমরা সবাই এক।
ঢাকা/মেহেদী