‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলাতে হবে’
Published: 23rd, October 2025 GMT
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
উপজেলা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২২ অক্টোবর) ঢাকার গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “কোনো আইনে নয়, ছাত্র জনতার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের রক্তের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন। তাই কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির উপর নয়, ড.
এ কথা শুধু তার একার নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ কথা বলেছেন। এর আগে সরকারের তথ্য উপদেষ্টা বলেছেন, প্রশাসন বিএনপি এবং জামায়াত ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে।”
আইআরআই প্রতিনিধিদের বৈঠকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে কিনা। উত্তরে আমি বলেছি, আমরা নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখেছে। আমাদেরকে প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে প্রচারণা করতে পারছি না। সরকার বলেছে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু এখনো সে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এ অবস্থায় আমরা কীভাবে নির্বাচন অংশগ্রহণ করবো?”
ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন, আগামী নির্বাচন সবচেয়ে সুন্দর গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার উপর বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি তা দেখলে কোনভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক হবে।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বলেন, “আগামী নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে নির্বাচনের পর গঠিত পার্লামেন্ট ক্ষণস্থায়ী হবে। তাই আমি প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো, যাতে করে নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে হয় সে ব্যবস্থা করার জন্য।”
হাওলাদার বলেন, “আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। তাহলে আমরা কিভাবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবো। সরকার যদি মনে করে, জাতীয় পার্টিসহ সকল দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি, তাহলে দ্রুত আমাদের মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশের সুযোগ দিতে হবে।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার অধ্যাপক ইউনূসকে স্মরণ করিয়ে বলেন, “এরশাদ সাহেব আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংক দিয়েছিলেন। সে ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে নিজে যেমন সম্মানিত হয়েছেন, তেমনি দেশও সম্মানিত হয়েছে। সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে অন্তত জাতীয় পার্টির ব্যাপার আপনি নিরপেক্ষ হবেন এটি প্রত্যাশা করি।”
বক্তব্য রাখেন- পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য- বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, মোবারক হোসেন আজাদ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নির্বাচন ক্রমান্বয়ে একটি অবধারিত বিষয়ে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে শঙ্কা দূর করে মানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। নির্বাচন হবে—বিষয়টি সবাই মেনে নিলেও ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না। প্রধান উপদেষ্টা ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন করে দেখানোর কথা বলেছেন, যার অপেক্ষায় সবাই।
আজ বুধবার দুপুরে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক্-নির্বাচনী উদ্যোগ ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকার একটি হোটেলে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভা শেষে প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনের পক্ষে প্রায় সবাই আছেন। রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাগরিক সম্প্রদায়, সেনাবাহিনী, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও নির্বাচন চায়। তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার বিষয়ে যে শঙ্কা, তা দূর হচ্ছে না।
আজ আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় চট্টগ্রামের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নারী অধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। সুষ্ঠু নির্বাচন, প্রয়োজনীয় সংস্কার, দুর্নীতির দমন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিসহ নানা প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন অংশগ্রহণকারীরা।
সভার আলোচ্য বিষয়গুলোর প্রসঙ্গ টেনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিকেরা সুশাসন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, আইনের শাসন, নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন। সবাই একটি দক্ষ প্রশাসন, একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং একটি নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চায়। এই দাবিগুলো রাজনীতিবিদেরা তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারের ভেতরে কীভাবে স্থান দেবেন, তা জানার জন্য নাগরিকেরা অপেক্ষায় আছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেড় বছর ধরে দেশে এত সংস্কারের আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিষয়ে কোনো বড় আলোচনা হয়নি। রাজনীতিবিদ, সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন—কারও তরফ থেকেই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যায়নি। চট্টগ্রামেও রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রায়ণ, দুর্নীতিমুক্ত থাকা এবং জবাবদিহির দাবিটি খুব বড়ভাবে এসেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে সামনে আনা এবং তাঁদের পরিবারের আত্মীয়স্বজনের সহায়সম্পত্তির বিষয়টিও ঘোষণার দাবি উঠেছে। বিগত ও বর্তমান সরকার তাদের মন্ত্রিপরিষদের বা সরকারপ্রধানের সম্পত্তির হিসাব দেবে—এমন ঘোষণা দিলেও তা পরিপূরণ না করায় মানুষের মধ্যে অনেক বড় হতাশা রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই ব্যর্থতা আগামী সরকারকেও তা না করার ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়ে গেল কি না।
এর আগে পরামর্শ সভায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, নাগরিকদের অধিকারসচেতন হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের জবাবের মুখোমুখি করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে সভায় জানান ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে যাওয়ার সময় মবের শিকার হব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’