শিল্পকলায় নোবেল জয়ী নাট্যকারের ‘ডিজায়ার আন্ডার দ্য এলমস’
Published: 25th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হবে সাহিত্যে নোবেল জয়ী মার্কিন নাট্যকার ইউজীন ও নীলের রচিত বিখ্যাত নাটক ‘ডিজায়ার আন্ডার দ্য এলমস’। নাটকটি প্রযোজনা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নাট্যকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) ও রবিবার (২৬ অক্টোবর) এই দুইদিন টিকিটের বিনিময়ে সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি প্রদর্শিত হবে।
আরো পড়ুন:
রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলের ইউনেস্কোর পুরস্কার অর্জন
ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
নাটকটি অনুবাদ করেছেন কবীর চৌধুরী। পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবাইয়া জাবীন প্রিয়তা।
নাটকের বিখ্যাত এফরায়েম ক্যাবট চরিত্রে অভিনয় করা শিক্ষার্থী তাকরিম আহমেদ বলেন, “চরিত্রটি আমার কাছে সাধারণ কোনো চরিত্র নয়, বরং একটি প্রজন্মের প্রতীক। মঞ্চে তার নিঃসঙ্গতা অনুভব করা সহজ ছিল না। জমি মানেই তার জীবন, কিন্তু সেই বিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত তার কবর। বাইরে দৃঢ়, ভেতরে অসহায়, এই দ্বৈততাই নাটকের ব্যথা। ক্যাবটের মতো মানুষ আজো আছে, যারা ভালোবাসতে চায়, কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারে না। আশা করি, নাটকটি সবার ভালো লাগবে।”
অ্যাবেন চরিত্রে অভিনয় করা মনন মোস্তাকিন বলেন, “অ্যাবেন এমন এক ছেলে, যে ছোটবেলা থেকে মায়ের স্নেহ পায়নি। আর বাবার ওপর প্রচণ্ড রাগ জমে আছে। সেই রাগ আর ভালোবাসা দুইটাই তার মধ্যে লড়াই করে। এই দোটানার জায়গাটা মঞ্চে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি।”
অ্যাবি চরিত্রে অভিনয় করা শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার সায়মা বলেন, “অ্যাবি আসলে ভালোবাসা পেতে চায়। কিন্তু সমাজ তাকে সেই সুযোগ দেয় না। তাই সে যেমন ভালোবাসে, তেমন ভয়ও পায়। তার ভেতরে দোষ আর মায়া একসঙ্গে কাজ করে। আমি অভিনয়ের সময় চেষ্টা করেছি, যেন দর্শক ওর কষ্টটা বুঝতে পারে। অত্যন্ত সুন্দর ও বিখ্যাত এ নাটকটি দেখতে চলে আসুন শিল্পকলা একাডেমিতে।”
নাটকটির নির্দেশক জবি নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবাইয়া জাবীন প্রিয়তা বলেন, “নোবেলজয়ী বিখ্যাত নাট্যকার ইউজিন ও নীল-এর এ নাটকটি শুধু এক পারিবারিক সংঘাতের গল্প নয়। এটি মানুষের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা, অপরাধবোধ ও মুক্তির তীব্র অনুসন্ধানের নাটক। এই নাটকে যে মানুষদের দেখি— তারা সবাই ভালোবাসা খোঁজে। কিন্তু তাদের ভালোবাসা মিশে থাকে অধিকার, ঈর্ষা ও দোষবোধের সঙ্গে। সেই মিশ্র অনুভূতিই এই নাটকের মূলে থাকা ইচ্ছা বা ডিজায়ারকে জটিল করে তোলে। এই নাটকের পটভূমি সম্পূর্ণ আমেরিকান।”
তিনি আরো বলেন, “এই প্রযোজনার মাধ্যমে আমি দর্শকদের সামনে একটি আবেদন রাখতে চেয়েছি- মানুষ কি কখনো তার ইচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে নাকি প্রতিটি ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত তাকে তার নিজের তৈরি কারাগারে বন্দি করে ফেলে? আমার অভিনেতারা, আলো-সংগীত-ডিজাইনের সহকর্মীরা সবাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একসঙ্গে ভ্রমণ শুরু করেছে। এই ভ্রমণই আমাদের আসল প্রাপ্তি। দর্শক যদি সেই ভ্রমণে সামান্য সময়ের জন্যও আমাদের সঙ্গে অংশ নেন, তবেই আমাদের প্রয়াস সার্থক হবে।”
এছাড়া নাটকে অভিনয় করেছেন নাট্যকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাকরিম, মোস্তাকিন, সায়মা, শোভন, খুশি, মিঠুন, জ্যা চাকমা, অর্থি, পলক, রিভা, ইসরাত, সুরুজ ও তুলি।
আবহ সংগীতে আছেন নওমী, শোভন, পলক ও সুরুজ, মঞ্চ নির্মাণে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী স্পর্শ ও টনি, আলোক প্রক্ষেপণে আছেন খন্দকার রাকিবুল হক ও রাজিন, নাটকের পোস্টার বানিয়েছেন সাদিয়া নিশা এবং প্রকাশনায় ছিলেন মুগ্ধ আনন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন টক শ ল পকল ন ট যকল চর ত র ই ন টক ন টক র ন টকট
এছাড়াও পড়ুন:
কার্ড বেড়েছে আড়াই গুণ, লেনদেন ৩ গুণের বেশি
দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে নতুন কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। এ সময়ে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে তিন গুণের বেশি।
কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ জুলাই মাসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহার, লেনদেনের প্রবণতা ও বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের ধরনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
বর্তমানে দেশের ৫৬টি ব্যাংক ও ১টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) কার্ড সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ৪৮টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড, দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ড সেবা দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের আগস্ট শেষে দেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ। ২০২৫ সালের জুলাই শেষে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরে কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে ১৫৬ শতাংশ বা আড়াই গুণের বেশি। দেশে সর্বাধিক প্রচলিত তিন ধরনের কার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা। পাঁচ বছরে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি (১২০ শতাংশ) বেড়েছে। সেই তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের বৃদ্ধি কম, ৯৪ শতাংশ। সর্বশেষ পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও ২৩২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের আগস্টে মোট কার্ডভিত্তিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত বেতন ভাতা, নগদ উত্তোলন ও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ডেবিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এখনো এটির ব্যবহার শহরকেন্দ্রিক। শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় ১৬ গুণ। মূলত অনলাইন কেনাকাটা, ভ্রমণ ব্যয় ও নির্দিষ্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রিপেইড কার্ড জনপ্রিয়।
* ২০২০ সালের আগস্ট শেষে দেশে কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২২ লাখ, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ।* ২০২০ সালের আগস্টে কার্ডে লেনদেন হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৪৭৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার অবস্থান। একসময় ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো ভারতে, কিন্তু ভিসা জটিলতায় ভারতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমে যাওয়ায় দেশটি এখন ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। আর ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট কার্ড বিদেশে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। এরপর ব্যবহার হয় যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, চীন ও ভারতে। প্রিপেইড কার্ডও সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় যুক্তরাজ্যে।
গত জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা খরচ করেছেন গ্রাহকেরা। এর মধ্যে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র; বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো বিভিন্ন পরিষেবা বিল; ওষুধ ও ফার্মেসি, নগদ উত্তোলন, পরিবহন ও তহবিল স্থানান্তর হিসেবে ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ লেনদেন হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশে মোট ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। তবে জুনের তুলনায় জুলাইয়ে ভোক্তা ব্যয়ে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা বৃদ্ধি, ব্যাংকের বিভিন্ন প্রচারণামূলক অফার, দৈনন্দিন কেনাকাটায় ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সুবিধাজনক ভূমিকা ও এসব প্রতিষ্ঠানে কার্ড ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির কারণে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়।
অন্যদিকে জুলাই মাসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক–চতুর্থাংশ অর্থ খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। এরপর বিদেশিদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভারত, মোজাম্বিক, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকেরা বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন ক্রেডিট কার্ডে।