মোটরসাইকেলকে জায়গা দিতে গিয়ে খাদে গরুবোঝাই ভটভটি, দুই ব্যবসায়ী নিহত
Published: 25th, October 2025 GMT
নওগাঁর ধামুইরহাটে গরুবোঝাই ভটভটি (ইঞ্জিনচালিত যান) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বিহারীনগর-পিড়লডাঙ্গা বাইপাস সড়কের তালঝাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ভটভটির চালক আড়ানগর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান মওলা (৩৫) ও একই গ্রামের বাসিন্দা ও গরুর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ভুট্টু (৪০)। আহত ব্যক্তিরা হলেন গরুর ব্যবসায়ী আড়ানগর গ্রামের বাসিন্দা জিহাদ (২৫), ফতেপুরের জাইদুল ইসলাম (৫৫), নাজিম উদ্দিন (৭০) ও মোটরসাইকেলের চালক দিনাজপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তাঁদের মধ্যে সেলিম রেজা ও নাজিম উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ধামুইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে উপজেলার আড়ানগর এলাকা থেকে ওই ভটভটিতে করে জয়পুরহাটের গরুর হাটে যাচ্ছিলেন কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। পথে তালঝাড়ি এলাকার ডবল ব্রিজের কাছে একটি মোটরসাইকেলকে জায়গা দিতে গিয়ে ভটভটির নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। একপর্যায়ে ভটভটি ও মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ভটভটির চালক মাসুদুর রহমান ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ভুট্টু মারা যান। খবর পেয়ে ধামুইরহাট থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করেন।
পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ধামুইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ম ইরহ ট ব যবস য় ই ভটভট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বতন্ত্র নারী পরিচালক মাত্র ১৩৮ কোম্পানিতে
দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানির বোর্ড তথা পরিচালনা পর্ষদে একজন করে স্বতন্ত্র নারী পরিচালক রাখার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩৮টি প্রতিষ্ঠান নিয়মটি পরিপালন করেছে। যদিও ৩১ ডিসেম্বর এ বাধ্যবাধকতার সময় শেষ হতে চলেছে।
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে বাকি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ।
আজ বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) যৌথভাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে দেন। কোম্পানির বোর্ড তথা পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার বিষয়ে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইসিএবির সভাপতি এন কে এ মবিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইসিএবির জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড লিডারশিপ কমিটির চেয়ারপারসন জেরীন মাহমুদ হোসেন।
গোলটেবিলে আইসিএবির করা একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরেন এ কাসেম অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও আইসিএবির জিআইএলসির সদস্য সানজিদা কাসেম। তিনি জানান, বর্তমানে নয়টি খাতে ২১ জন নারী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বোর্ড সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশে কোম্পানির বোর্ডে বা পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র নারী পরিচালক রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। সার্বিকভাবে পরিচালক ধরে হিসাব করলে এই হার প্রায় ২০ শতাংশ।
আইএফসির ইএসজি অফিসার লোপা রহমান কোম্পানি পর্ষদে নারীর অংশগ্রহণের বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরেন। বৈশ্বিক তথ্য অনুসারে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারীদের বোর্ডে অংশগ্রহণ গড়ে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৩৭ শতাংশের বেশি। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় বাজারে এটা ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ।
আইসিএবির জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আরও ১৩৪ জন নারী এফসিএ রয়েছেন, যাঁরা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য শক্ত পাইপলাইন রয়েছে। এ ছাড়া ৭৫ শতাংশ নারী আইসিএবি সদস্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, যা পেশাগত দক্ষতা ও প্রস্তুতির অবস্থা জানান দেয়। তাই নারী পরিচালক বাড়ানোর সুযোগ তৈরির আহ্বান জানানো হয় প্রতিবেদনে।
কোনো কোনো কোম্পানির বোর্ডে দেখা যায় ৭ জনই এক পরিবারের সদস্য। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো কথা বলতে পারেন না। তাই বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়ার বিষয়টি আমরা করপোরেট সুশাসনের অংশ হিসেবে দেখছি। কমপ্লায়েন্স না থাকা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের অনেক সময় চলে যাচ্ছে।ফারজানা লালারুখ, কমিশনার, বিএসইসিসেমিনারে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেন লোপা রহমান। তিনি লিঙ্গবৈচিত্র্যপূর্ণ নেতৃত্ব কীভাবে শক্তিশালী বোর্ড কার্যকারিতা এবং উন্নত ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা অর্জনে অবদান রাখে, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী গবেষণা প্রমাণ করে যে নেতৃত্বে নারীর প্রতিনিধিত্ব বেশি এমন কোম্পানিগুলো মূল আর্থিক ও শাসনব্যবস্থার সূচকগুলোতে বেশি ভালো পারফর্ম করে।
বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, ‘কোনো কোনো কোম্পানির বোর্ডে দেখা যায় ৭ জনই এক পরিবারের সদস্য। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো কথা বলতে পারেন না। তাই বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়ার বিষয়টি আমরা করপোরেট সুশাসনের অংশ হিসেবে দেখছি। কমপ্লায়েন্স না থাকা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের অনেক সময় চলে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর কোম্পানি সচিব নিয়োগ দিচ্ছে না। আমরা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এখন বেবিসিটার হয়ে যাচ্ছি। তাই আমরা আর দায়িত্ব নিতে চাচ্ছি না।’
স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমোদনে বিলম্ব হয় বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুব রহমান। তিনি এ–সংক্রান্ত অনুমোদনের শর্ত শিথিলের আহ্বান জানান। তবে তিনি এ কথাও বলেন, যোগ্য প্রফেশনাল কম থাকায় স্বতন্ত্র পরিচালক পাওয়া চ্যালেঞ্জের।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরুন টি রহমান বলেন, সব পরিচালকের জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য থাকা উচিত। কারণ, অনেকেরই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে না।
গোলটেবিলে অংশ নিয়ে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বোর্ডে নারী পরিচালক থাকলে তা প্রতিনিধিত্বমূলক ও বৈচিত্র্যময় হয়। তবে এখানে নেতৃত্বের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের (আইসিএসবি) সভাপতি হোসেন সাদাত। তিনি বলেন, বোর্ডে অনেক সময় দিতে হয়, তাই তাঁদের সম্মানী বাড়ানো উচিত।
গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের এমডি ও সিইও ফারজানা চৌধুরী বলেন, যাঁরা পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের নেতৃত্বের দক্ষতা থাকে। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হতে পারে, কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাই স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ সংরক্ষণ করা উচিত।
আইসিএবির সভাপতি এন কে এ মবিন বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিরীক্ষা কমিটির প্রধান হয়ে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় দেখেছি, টেলিনরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) বোর্ড সদস্য হিসেবে তিন তিনের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। আমাদের দেশেও এমন নিয়ম করা যেতে পারে।’
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএ) সভাপতি দৌলত আখতার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য শাহারিয়ার সাদাত প্রমুখ।