ট্রাম্প যেভাবে ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে বাজি ধরছেন
Published: 11th, December 2025 GMT
নতুন মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএস) আসলে কোনো কৌশল নয়। কারণ, কৌশল বলতে বোঝায় লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত উপায় ও সম্পদ প্রস্তুত করে রাখা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে যে ৩৩ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্পের এই প্রশাসন ভবিষ্যতেই বিশ্বাসী নয়। তাই ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করার প্রয়োজনও তারা দেখছে না।
ট্রাম্পের এনএসএসে একদিকে আত্মম্ভরিতা, অন্যদিকে ভয় ও দুশ্চিন্তা—দুটিই একসঙ্গে দেখা যায়। এসব নথিতে একবার বলা হয়েছে, ‘আমেরিকা ইতিহাসের সবচেয়ে মহান দেশ’; আবার একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকা আক্রমণের মুখে’। একবার বলা হয়েছে, ‘আমরা জিতছি’, পরমুহূর্তে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলছি’।
এটি শুধু অসংগত কথা নয়। এটি এমন এক রাজনৈতিক আন্দোলনের মানসিক অবস্থা, যা জনসংখ্যাগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে অস্তিত্বের সংকট হিসেবে দেখে।
আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের ইউক্রেন ছকের বিরুদ্ধে কতক্ষণ টিকবে ইউরোপ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫এনএসএসে বড় বড় লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ সম্পদ লাগবে, কত সময় লাগবে, কীভাবে লক্ষ্য অর্জন হবে—সেখানে এসবের কোনো ব্যাখ্যা নেই। একে ‘স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন’ বলার মানে হবে, এতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই।
এখানেই মূল সমস্যা। কারণ, যাঁরা মনে করছেন তাঁদের পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে পরিকল্পনা করছেন না। তাঁরা শুধু সুযোগ পেলেই নিজেদের স্বার্থে প্রচলিত সব আইনকানুন ভেঙে ফেলছেন; আর অন্যদের ক্ষতি হলেও নিজের লাভ তুলে নিচ্ছেন। ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন না।
এই ‘তুলে নেওয়া’ মনোভাব ৩৩ পৃষ্ঠার নথিতেই স্পষ্ট। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিদেশের সব মার্কিন দূতাবাসকে তাদের দেশে বড় ব্যবসার সুযোগ, বিশেষত সরকারি বড় প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘যেকোনো মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা বিদেশিদের সঙ্গে যে যোগাযোগ করবেন, তাঁর দায়িত্বের একটি অংশ হবে—আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতা করতে ও জিততে সাহায্য করা।’ অর্থাৎ কূটনীতি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা বাড়ানোর কাজে রূপান্তরিত হয়েছে।
নথিতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম গোলার্ধে কোন কোন ‘কৌশলগত অঞ্চল ও সম্পদ’ আমেরিকা কাজে লাগাতে পারে, তা চিহ্নিত করতে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরাসি পত্রিকা লা মঁদে এটিকে সরাসরি ‘অর্থনৈতিক লুটপাট’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
প্রশ্ন ওঠে, যখন তারা বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে, তখন কেন অভিবাসীদের এত খারাপভাবে উপস্থাপন করছে? পশ্চিম গোলার্ধে মনোযোগ দেওয়ার কথা বললেও কেন ইউরোপের অভিবাসননীতি নিয়ে তারা এত আক্রমণ করছে? এর কারণ, তাদের আসল ভয় চীন বা রাশিয়া নয়, সন্ত্রাসবাদও নয়। তাদের ভয় হলো আগামী দিনের আমেরিকা আগের মতো থাকবে না।মিত্রদেশগুলোর প্রসঙ্গে আসি। এনএসএসে ইউরোপ নিয়ে কঠিন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া কিংবা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষেত্রে ভাষা তুলনামূলকভাবে নরম। নথিতে বলা হয়েছে, ইউরোপ অভিবাসনের কারণে ‘সভ্যতা বিলুপ্তি’র ঝুঁকিতে আছে এবং ইউরোপ ‘অতিরিক্ত নিয়মকানুনের চাপে শ্বাসরুদ্ধ’। সেখানে আরও দাবি করা হয়েছে, ইউরোপকে তার নিজের প্রতিরক্ষার ‘প্রধান দায়িত্ব’ নিতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় জাতীয়তাবাদী ও জনতুষ্টিবাদী দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে তারা ইউরোপের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা বদলাতে চাইবে। এটি কোনো জোট পরিচালনা নয়। এটি সহযোগিতার নামে অন্তর্ঘাত; অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে জোটকে দুর্বল করার পদক্ষেপ।
মনরো ডকট্রিনের এই ‘ট্রাম্প সংস্করণ’ আসলে পুরোনো মহাশক্তির রাজনীতিকে নতুন রূপ দেওয়া। এটি এমন এক প্রেসিডেন্টের জন্য বানানো হয়েছে, যিনি জাতীয় স্বার্থ আর ব্যক্তিগত লাভের পার্থক্যই বুঝতে পারেন না।
আরও পড়ুনট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫ক্যাটো ইনস্টিটিউট একটি বড় অসংগতি দেখিয়েছে। তারা দেখিয়েছে, একদিকে প্রশাসন বলছে তারা আর ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ চায় না’, অন্যদিকে আবার বলে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যবস্থার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা হয়ে থাকতে হবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শুধু ওপরের মোড়ক। ভেতরে আছে আধিপত্য ধরে রাখার ইচ্ছা। তারা নেতৃত্বের সুবিধা নিতে চায়, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চায় না। সম্মান চায়, কিন্তু সম্পর্ক গড়তে চায় না।
এটি কোনো পররাষ্ট্রনীতি নয়। এটি এমন একজনের ধারণা, যিনি কখনো কথার দাম রাখতে বাধ্য হননি। এটি সব চিন্তাকে এক করে রাখে এমন কোনো আন্তর্জাতিক ধারণা নয়। এগুলোকে ধরে রেখেছে একটাই শত্রু; সেটি হলো ‘ভবিষ্যৎ’।
এনএসএসে জনসংখ্যাগত আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। অভিবাসনকে নীতিসংক্রান্ত সমস্যা হিসেবে নয়, বরং ‘আক্রমণ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সীমান্তকে বলা হয়েছে ‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান উপাদান’। নথিতে বাইরের হুমকি আর দেশের রাজনীতিকে এক করে ফেলা হয়েছে। অভিবাসী কমিউনিটি ও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনকে রাষ্ট্রীয় শত্রুর মতো দেখানো হয়েছে। এটি আসলে ‘গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ তত্ত্বের সরকারি সংস্করণ।
প্রশ্ন ওঠে, যখন তারা বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে, তখন কেন অভিবাসীদের এত খারাপভাবে উপস্থাপন করছে? পশ্চিম গোলার্ধে মনোযোগ দেওয়ার কথা বললেও কেন ইউরোপের অভিবাসননীতি নিয়ে তারা এত আক্রমণ করছে? এর কারণ, তাদের আসল ভয় চীন বা রাশিয়া নয়, সন্ত্রাসবাদও নয়। তাদের ভয় হলো আগামী দিনের আমেরিকা আগের মতো থাকবে না। এনএসএস কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নয়; এটি ভবিষ্যৎকে থামাতে না পারার ক্ষোভ। এ কারণেই অর্থনীতিতে আসে লুটপাটের মনোভাব। টেকসই সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা না থাকলে যা পাওয়া যায়, তা-ই নিয়ে নেওয়া হয়। জোটকে খরচ মনে হলে সেটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
এনএসএসের লক্ষ্য শুধু প্রকৃত হুমকি উপেক্ষা করা নয়। এর লক্ষ্য হলো হুমকির সংজ্ঞা বদলে দেওয়া। এর লক্ষ্য হলো জনসংখ্যাগত পরিবর্তনকে (যাঁদের ট্রাম্প ‘জঞ্জাল’ বলেন) হুমকি হিসেবে দাঁড় করানো। যদি ভবিষ্যৎ শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকার মতো না হয়, তবে সেই ভবিষ্যৎ সামলাতে জোট রক্ষার প্রয়োজন কী? ভবিষ্যৎকে শত্রু মনে করে যাঁরা পররাষ্ট্রনীতি লিখছেন, তাঁদের তৈরি নথিই এনএসএস। তবে সময়কে থামানো যাবে না। তাই সময়কে থামাতে না পেরে তারা ঘড়ি
ভেঙে ফেলছে; আর হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা–ই বগলদাবা করছে।
স্টিফেন হোমস নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব লর অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ : সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক লক ষ য আম র ক ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প যেভাবে ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে বাজি ধরছেন
নতুন মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএস) আসলে কোনো কৌশল নয়। কারণ, কৌশল বলতে বোঝায় লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত উপায় ও সম্পদ প্রস্তুত করে রাখা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে যে ৩৩ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্পের এই প্রশাসন ভবিষ্যতেই বিশ্বাসী নয়। তাই ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করার প্রয়োজনও তারা দেখছে না।
ট্রাম্পের এনএসএসে একদিকে আত্মম্ভরিতা, অন্যদিকে ভয় ও দুশ্চিন্তা—দুটিই একসঙ্গে দেখা যায়। এসব নথিতে একবার বলা হয়েছে, ‘আমেরিকা ইতিহাসের সবচেয়ে মহান দেশ’; আবার একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকা আক্রমণের মুখে’। একবার বলা হয়েছে, ‘আমরা জিতছি’, পরমুহূর্তে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলছি’।
এটি শুধু অসংগত কথা নয়। এটি এমন এক রাজনৈতিক আন্দোলনের মানসিক অবস্থা, যা জনসংখ্যাগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে অস্তিত্বের সংকট হিসেবে দেখে।
আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের ইউক্রেন ছকের বিরুদ্ধে কতক্ষণ টিকবে ইউরোপ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫এনএসএসে বড় বড় লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ সম্পদ লাগবে, কত সময় লাগবে, কীভাবে লক্ষ্য অর্জন হবে—সেখানে এসবের কোনো ব্যাখ্যা নেই। একে ‘স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন’ বলার মানে হবে, এতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই।
এখানেই মূল সমস্যা। কারণ, যাঁরা মনে করছেন তাঁদের পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে পরিকল্পনা করছেন না। তাঁরা শুধু সুযোগ পেলেই নিজেদের স্বার্থে প্রচলিত সব আইনকানুন ভেঙে ফেলছেন; আর অন্যদের ক্ষতি হলেও নিজের লাভ তুলে নিচ্ছেন। ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন না।
এই ‘তুলে নেওয়া’ মনোভাব ৩৩ পৃষ্ঠার নথিতেই স্পষ্ট। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিদেশের সব মার্কিন দূতাবাসকে তাদের দেশে বড় ব্যবসার সুযোগ, বিশেষত সরকারি বড় প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘যেকোনো মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা বিদেশিদের সঙ্গে যে যোগাযোগ করবেন, তাঁর দায়িত্বের একটি অংশ হবে—আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতা করতে ও জিততে সাহায্য করা।’ অর্থাৎ কূটনীতি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা বাড়ানোর কাজে রূপান্তরিত হয়েছে।
নথিতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম গোলার্ধে কোন কোন ‘কৌশলগত অঞ্চল ও সম্পদ’ আমেরিকা কাজে লাগাতে পারে, তা চিহ্নিত করতে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরাসি পত্রিকা লা মঁদে এটিকে সরাসরি ‘অর্থনৈতিক লুটপাট’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
প্রশ্ন ওঠে, যখন তারা বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে, তখন কেন অভিবাসীদের এত খারাপভাবে উপস্থাপন করছে? পশ্চিম গোলার্ধে মনোযোগ দেওয়ার কথা বললেও কেন ইউরোপের অভিবাসননীতি নিয়ে তারা এত আক্রমণ করছে? এর কারণ, তাদের আসল ভয় চীন বা রাশিয়া নয়, সন্ত্রাসবাদও নয়। তাদের ভয় হলো আগামী দিনের আমেরিকা আগের মতো থাকবে না।মিত্রদেশগুলোর প্রসঙ্গে আসি। এনএসএসে ইউরোপ নিয়ে কঠিন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া কিংবা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষেত্রে ভাষা তুলনামূলকভাবে নরম। নথিতে বলা হয়েছে, ইউরোপ অভিবাসনের কারণে ‘সভ্যতা বিলুপ্তি’র ঝুঁকিতে আছে এবং ইউরোপ ‘অতিরিক্ত নিয়মকানুনের চাপে শ্বাসরুদ্ধ’। সেখানে আরও দাবি করা হয়েছে, ইউরোপকে তার নিজের প্রতিরক্ষার ‘প্রধান দায়িত্ব’ নিতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় জাতীয়তাবাদী ও জনতুষ্টিবাদী দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে তারা ইউরোপের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা বদলাতে চাইবে। এটি কোনো জোট পরিচালনা নয়। এটি সহযোগিতার নামে অন্তর্ঘাত; অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে জোটকে দুর্বল করার পদক্ষেপ।
মনরো ডকট্রিনের এই ‘ট্রাম্প সংস্করণ’ আসলে পুরোনো মহাশক্তির রাজনীতিকে নতুন রূপ দেওয়া। এটি এমন এক প্রেসিডেন্টের জন্য বানানো হয়েছে, যিনি জাতীয় স্বার্থ আর ব্যক্তিগত লাভের পার্থক্যই বুঝতে পারেন না।
আরও পড়ুনট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫ক্যাটো ইনস্টিটিউট একটি বড় অসংগতি দেখিয়েছে। তারা দেখিয়েছে, একদিকে প্রশাসন বলছে তারা আর ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ চায় না’, অন্যদিকে আবার বলে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যবস্থার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা হয়ে থাকতে হবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শুধু ওপরের মোড়ক। ভেতরে আছে আধিপত্য ধরে রাখার ইচ্ছা। তারা নেতৃত্বের সুবিধা নিতে চায়, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চায় না। সম্মান চায়, কিন্তু সম্পর্ক গড়তে চায় না।
এটি কোনো পররাষ্ট্রনীতি নয়। এটি এমন একজনের ধারণা, যিনি কখনো কথার দাম রাখতে বাধ্য হননি। এটি সব চিন্তাকে এক করে রাখে এমন কোনো আন্তর্জাতিক ধারণা নয়। এগুলোকে ধরে রেখেছে একটাই শত্রু; সেটি হলো ‘ভবিষ্যৎ’।
এনএসএসে জনসংখ্যাগত আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। অভিবাসনকে নীতিসংক্রান্ত সমস্যা হিসেবে নয়, বরং ‘আক্রমণ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সীমান্তকে বলা হয়েছে ‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান উপাদান’। নথিতে বাইরের হুমকি আর দেশের রাজনীতিকে এক করে ফেলা হয়েছে। অভিবাসী কমিউনিটি ও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনকে রাষ্ট্রীয় শত্রুর মতো দেখানো হয়েছে। এটি আসলে ‘গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ তত্ত্বের সরকারি সংস্করণ।
প্রশ্ন ওঠে, যখন তারা বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে, তখন কেন অভিবাসীদের এত খারাপভাবে উপস্থাপন করছে? পশ্চিম গোলার্ধে মনোযোগ দেওয়ার কথা বললেও কেন ইউরোপের অভিবাসননীতি নিয়ে তারা এত আক্রমণ করছে? এর কারণ, তাদের আসল ভয় চীন বা রাশিয়া নয়, সন্ত্রাসবাদও নয়। তাদের ভয় হলো আগামী দিনের আমেরিকা আগের মতো থাকবে না। এনএসএস কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নয়; এটি ভবিষ্যৎকে থামাতে না পারার ক্ষোভ। এ কারণেই অর্থনীতিতে আসে লুটপাটের মনোভাব। টেকসই সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা না থাকলে যা পাওয়া যায়, তা-ই নিয়ে নেওয়া হয়। জোটকে খরচ মনে হলে সেটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
এনএসএসের লক্ষ্য শুধু প্রকৃত হুমকি উপেক্ষা করা নয়। এর লক্ষ্য হলো হুমকির সংজ্ঞা বদলে দেওয়া। এর লক্ষ্য হলো জনসংখ্যাগত পরিবর্তনকে (যাঁদের ট্রাম্প ‘জঞ্জাল’ বলেন) হুমকি হিসেবে দাঁড় করানো। যদি ভবিষ্যৎ শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকার মতো না হয়, তবে সেই ভবিষ্যৎ সামলাতে জোট রক্ষার প্রয়োজন কী? ভবিষ্যৎকে শত্রু মনে করে যাঁরা পররাষ্ট্রনীতি লিখছেন, তাঁদের তৈরি নথিই এনএসএস। তবে সময়কে থামানো যাবে না। তাই সময়কে থামাতে না পেরে তারা ঘড়ি
ভেঙে ফেলছে; আর হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা–ই বগলদাবা করছে।
স্টিফেন হোমস নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব লর অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ : সারফুদ্দিন আহমেদ