ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ‘অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পরিমাপের জন্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশকিছু সূচকের কার্যক্রম রয়েছে। যদিও এসব সূচক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে এবং কেন পরিবর্তিত হচ্ছে তার প্রকৃত চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে না। এ প্রেক্ষিতে ডিসিসিআই ‘অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এর কার্যক্রম রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও পরর্বতীতে ধাপে ধাপে সারা দেশে সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক’ শীর্ষক আলোচনা সভার ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এসব কথা বলেন।

আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান ও  আশরাফ আহমেদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এর মহাপরিচালক মো.

নূরুল আলম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাপোর্ট টু সাসটেইএ্যাবল গ্রাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেসার আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি অধিশাখা) ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুন, অর্থমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বাজেট পরিবীক্ষণ শাখা) ড. এ কে এম আতিকুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) নওশাদ মোস্তফা, পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সালিম আল মামুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম, র‌্যাপিডের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. দীন ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস)’র গবেষণা পরিচালক ডা. মোহম্মদ জসিম উদ্দিন এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)-এর সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিষ্ট মিয়া রহমত আলী অংশগ্রহণ করেন।

তাসকীন আহমেদ বলেন, “ত্রৈয়মাসিক ভিত্তিকে প্রকাশিতব্য এ সূচকের মাধমে বিশেষকরে শিল্প খাতে উৎপাদন, বিক্রয়, অর্ডার প্রবাহ, রপ্তানির প্রবণতা, কর্মসংস্থান, ব্যবসায়িক আস্থা এবং বিনিয়োগের প্রবৃত্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া পাবে। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে এ সূচকে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, পাইকারী ও খুচরা বাণিজ্য, আবাসন, পরিবহন ও স্টোরেজ এবং ব্যাংক খাতের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. একেএম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী।

ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, “তৈরি পোষাক খাত অনেক ধরনের সুবিধা বেশি পাচ্ছে, তাই এর সাথে অন্যান্য খাতের তুলনার বিষয়টি তেমন যৌক্তিক নয়।”

এনপিওর মহাপরিচালক নূরুল আলম বলেন, “গবেষণা কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহে আরো সচেতন হতে হবে, যা প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে আরো সহায়ক হবে এবং শিল্প সংশ্লিষ্ট সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা নির্ধারণের উপর জোরারোপ করা আবশ্যক।”

এসএসজিপির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেসার আহমেদ বলেন, “এলডিসি উত্তরণের আগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিদ্যমান সুবিধার বেশিরভাগই বাংলাদেশ ব্যবহার করেছে, তাই এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে এ সুবিধা বঞ্চিত হওয়া পরিবেশ মোকাবিলায় আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুন বলেন, “অর্থনীতি, শিল্প খাত, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ওপর বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থা থাকলেই, বিনিয়োগ প্রাপ্তির পাশাপাশি বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ সম্ভব।”

বিএফটিআই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সাইফ উদ্দিন আহমেদ দেশের বিভিন্ন সংস্থার তথ্যের সাথে ঢাকা চেম্বারের গবেষণার তথ্যের সমন্বয়ের ওপর জোরারোপ করেন, সেই সাথে এ গবেষণায় খাত ভিত্তিক আরো বহুমুখী তথ্যের সংযোজনের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) নওশাদ মোস্তফা বলেন, “এসএমইদের জন্য নীতিমালা ইতোমধ্যে বেশ সহজ করা হয়েছে। তবে ঋণ প্রাপ্তিতে কি ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে, উদ্যোক্তাদের থেকে এধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সে অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করতে সহজ হবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা) ড. সালিম আল মামুন বলেন, “জেলাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষি খাতের তথ্য জরুরী, তাই এ গবেষণায় এ খাতের তথ্য সম্পৃক্তকরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া আবশ্যক।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, “প্রতিষ্ঠিত ফর্মুলা ব্যবহার করে এ গবেষণাটি পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, সেই সাথে প্রসিদ্ধ কোন জার্নালে পরিচালিত গবেষণার সার-সংক্ষেপ প্রকাশের উদ্যোগী হওয়া জরুরি।”

র‌্যাপিড এর গবেষণা পরিচালক ড. দীন ইসলাম বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পরিচালিত গবেষণার কার্যপদ্ধতি সংশোধন করা যেতে পারে।”

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উদ য গ ড স স আই প রণয়ন আহম দ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে: ইফতেখারুজ্জামান

অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি আইন করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সংস্কার কমিশনের প্রধান হওয়ার পরও তাঁকে অন্য মাধ্যম থেকে অধ্যাদেশের খসড়া পেয়ে মতামত দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘কর্তৃত্ববাদের পতন–পরবর্তী গণমাধ্যম পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এক প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ সরকারের সময় পাস হওয়া বেশ কয়েকটি অধ্যাদেশের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন। ‘আমাকে সম্পৃক্ত হতে দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা বলছি না, আমি পেরেছি’ বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘দুদক সংস্কার কমিশন যে আশু বাস্তবায়ন প্রস্তাবগুলো সরকারকে দিয়েছিল, অধ্যাদেশ করার সময় তার শতভাগই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কমিশনের প্রস্তাবনায় দুদকের জন্য একটি ‘বাছাই’ ও ‘পর্যালোচনা’ কমিটির কথা বলা ছিল। অধ্যাদেশ করার সময় ‘বাছাই’ শব্দটি রেখে ‘পর্যালোচনা’ শব্দটি ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটা জানার পর তিনি শীর্ষ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তাঁরা ‘পর্যালোচনা’ রাখতে রাজি হন। এরপর তিনি জানতে পারেন, সেটা বাতিল করা হয়েছে।

দেশে সংস্কারের পথে বড় অন্তরায় আমলাতন্ত্র বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আর এর পেছনে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে রাজনীতিবিদদের “আওয়ার টাইম” সংস্কৃতি। ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলাম, এবার আমাদের পালা।’ রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্রের এমন মানসিকতার কারণে সংস্কারের সম্ভাবনা ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে: ইফতেখারুজ্জামান