প্রায় দেড় বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পৌঁছেছে গমবাহী একটি জাহাজ। আজ শনিবার সকালে বন্দর জলসীমায় ‘এমভি নোর্স স্ট্রাইড’ জাহাজটি পৌঁছায়। জাহাজটিতে সরকারি চুক্তির আওতায় আমদানি করা ৫৬ হাজার ৯৫০ টন গম রয়েছে।

এই জাহাজের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে দেড় বছরের খরা কাটল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি হয়েছিল ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে। সে সময় খাতুনগঞ্জের সাবিসা মাল্টিট্রেড লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৭ হাজার ৩৯৯ টনের গম আমদানি করেছিল। তবে সরকারিভাবে গম আমদানির নজির রয়েছে ২০১৭ সালে।

এবার অবশ্য সরকারি পর্যায়ে চুক্তির অধীনে গম আমদানি হয়। জাহাজটিতে থাকা গমের ৬০ শতাংশ খালাস হবে বন্দর জলসীমায়। ছোট জাহাজে স্থানান্তর করে এই গম সরকারি খাদ্যগুদামে নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি সেভেস সিজ শিপিং লাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারি চুক্তির ২ লাখ ৪০ হাজার টন গমের প্রথম চালান এটি। এই চালানের ৩৪ হাজার ১৭০ টন চট্টগ্রামের বহিনোর্ঙরে খালাস হবে। সব প্রক্রিয়া শেষে রোববার বিকেলে জাহাজটি থেকে গম খালাসের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। বাকি ২২ হাজার ৭৮০ টন মোংলায় নিয়ে খালাস হবে। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় জাহাজটি বন্দর জলসীমায় পৌঁছাবে আগামী ২ নভেম্বর। তৃতীয় জাহাজটি ১১ নভেম্বর এবং চতুর্থ জাহাজটি ডিসেম্বরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের খড়গ থেকে বাঁচতে গত জুলাই মাসে বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারিভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির চুক্তি করে বাংলাদেশ। নানা উদ্যোগের পর বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশে সাধারণত সস্তা গম আমদানি বেশি হয়। এই তালিকায় বড় উৎস দেশ হলো রাশিয়া ও ইউক্রেন। প্রতি বছর এসব দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ গম আমদানি হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি খুব বেশি ছিল না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, গত ২২ বছরের মধ্যে ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সোয়া ২২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ১৭ লাখ টনের বেশি আমদানি হয়। সরকারি খাতে তিন লাখ টন আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যসহায়তা হিসেবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, কেয়ার বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রায় দুই লাখ টন গম এনেছে দেশটি থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ গম আমদানি হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে দেশটি থেকে সাড়ে চার লাখ টন গম আমদানি হয়। বেসরকারি সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নাবিল গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ এই গম আমদানি করে। প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়ার কারণে দেশটি থেকে উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানি হয়েছিল বলে সে সময়ের একজন আমদানিকারক প্রথম আলোকে জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র থ ক গম আমদ ন ল খ টন জ হ জট টন গম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা আসলে কত লাখ, ৩২ নাকি ৬০

চট্টগ্রাম জেলার আয়তন সব মিলিয়ে ৩ হাজার ২৮২ বর্গমাইল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার আয়তন ৬০ বর্গমাইলের মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন—দুই সংস্থার হিসাবেই রয়েছে এমন তথ্য। তবে নগর বা সিটি করপোরেশন এলাকায় জনসংখ্যা কত তা নিয়ে এই দুই সংস্থার হিসাবে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। সিটি করপোরেশনের হিসাবে যে সংখ্যক জনসংখ্যার কথা বলা হয়, তা পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবের প্রায় দ্বিগুণ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নগরে জনসংখ্যা আনুমানিক ৬০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৫০৭ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অবশ্য কোনো জরিপের ভিত্তিতে করা হয়নি, অনুমানের ভিত্তিতেই করা। উত্তর দিকে লতিফপুর-জঙ্গল সলিমপুর; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদী; পূর্ব দিকে কর্ণফুলী নদী থেকে হালদা, চিকনদণ্ডী এবং পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর, ভাটিয়ারী ও জঙ্গল ভাটিয়ারী—কাগজে–কলমে এটিই চট্টগ্রাম নগরের সীমানা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে সেখানে বসবাসকারী মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, জনসংখ্যার সঠিক হিসাব না থাকলে প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট নির্ধারণ, অবকাঠামোর আকার, সেবাদানের সক্ষমতা—সবকিছুতেই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে সরকারি সম্পদের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সেবা পায় না।

নথিপত্রে জনসংখ্যার হিসাব

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৫। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং ১৫টি উপজেলা এলাকা রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয় আনুমানিক ৬০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বলা হয় আনুমানিক ৭০ লাখ। অর্থাৎ করপোরেশন বলছে, তিন বছরে জনসংখ্যা ১০ লাখ বেড়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয় আনুমানিক ৬০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বলা হয় আনুমানিক ৭০ লাখ। অর্থাৎ করপোরেশন বলছে, তিন বছরে জনসংখ্যা ১০ লাখ বেড়েছে।

নগরে ৭০ লাখের মতো জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ ভাসমান, এদের ভাসমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাঁদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, মাত্র ছয় বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৮৬৩ সালে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালটি। ১৯৮২ সালে পৌরসভাকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নামে যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর সময় জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখ। যদিও বিবিএসের হিসাবে ১৯৯১ সালে সিটি করপোরেশনে জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৬৬ হাজার।

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের টিকে থাকা নিয়ে নিরীক্ষকের শঙ্কা
  • চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা আসলে কত লাখ, ৩২ নাকি ৬০
  • গ্যাস চুরির অভিযোগে মুন্নু সিরামিক কারখানায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রাজশাহীর মানুষ
  • ভারত থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি