দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবসা বেড়েছে। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির ব্যবসায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। টাকার অঙ্কের গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসা বেড়েছে ৬১ কোটি টাকা। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল শনিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফার তথ্য আজ রোববার স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি।

কোম্পানির মুনাফা হিসাব করা হয় মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দেওয়ার পর। একটি কোম্পানি নির্দিষ্ট একটি সময়ে ব্যবসা ও অন্যান্য খাত থেকে যে আয় করে তা থেকে ওই কোম্পানির পণ্য উৎপাদন খরচ, ঋণের সুদসহ অন্যান্য আর্থিক খরচ ও সরকারকে দেওয়া কর বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে সেটিই কোম্পানির মুনাফা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো একটি খাতে খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেলে ভালো ব্যবসা করার পরও কোম্পানির মুনাফা কমতে পারে বা কখনো কখনো লোকসানও হতে পারে।

জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে ব্যবসায় ভালো করার পরও আমাদের মুনাফা কমে গেছে। প্রথমত, করের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের বাজেটে করহার বৃদ্ধির কারণে এ বাবদ খরচ গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকঋণের সুদহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বাবদ খরচও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির মুনাফায়।’

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে, অর্থাৎ তিন মাসে কোম্পানিটি ৪৮৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪২৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৬১ কোটি টাকার বা সাড়ে ১৪ শতাংশ। ব্যবসা বাড়লেও আগের বছরের চেয়ে মুনাফা কমেছে কোম্পানিটির। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা প্রায় ২৩ লাখ টাকা বা ১০ শতাংশ কমে গছে। চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যবসা বৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান দুটি কারণ ছিল, কর ও সুদ ব্যয় বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়া। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে কোম্পানিটি কর বাবদ সরকারকে দিয়েছে ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে কর বাবদ কোম্পানিটির খরচ ছিল দুই কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির কর বাবদ খরচ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। একইভাবে বেড়েছে আর্থিক খরচ, যার বড় অংশই মূলত ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায়। চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির ঋণসুদসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৪২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই খাতে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।

এদিকে মুনাফা কমে যাওয়ার খবরে আজ ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদের শুরু হয় দরপতনে। প্রথম এক ঘণ্টায় অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য প ক স ফ টওয় য র র র পর ম ণ র ব যবস বছর র ব প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা আসলে কত লাখ, ৩২ নাকি ৬০

চট্টগ্রাম জেলার আয়তন সব মিলিয়ে ৩ হাজার ২৮২ বর্গমাইল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার আয়তন ৬০ বর্গমাইলের মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন—দুই সংস্থার হিসাবেই রয়েছে এমন তথ্য। তবে নগর বা সিটি করপোরেশন এলাকায় জনসংখ্যা কত তা নিয়ে এই দুই সংস্থার হিসাবে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। সিটি করপোরেশনের হিসাবে যে সংখ্যক জনসংখ্যার কথা বলা হয়, তা পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবের প্রায় দ্বিগুণ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নগরে জনসংখ্যা আনুমানিক ৬০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৫০৭ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অবশ্য কোনো জরিপের ভিত্তিতে করা হয়নি, অনুমানের ভিত্তিতেই করা। উত্তর দিকে লতিফপুর-জঙ্গল সলিমপুর; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদী; পূর্ব দিকে কর্ণফুলী নদী থেকে হালদা, চিকনদণ্ডী এবং পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর, ভাটিয়ারী ও জঙ্গল ভাটিয়ারী—কাগজে–কলমে এটিই চট্টগ্রাম নগরের সীমানা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে সেখানে বসবাসকারী মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, জনসংখ্যার সঠিক হিসাব না থাকলে প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট নির্ধারণ, অবকাঠামোর আকার, সেবাদানের সক্ষমতা—সবকিছুতেই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে সরকারি সম্পদের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সেবা পায় না।

নথিপত্রে জনসংখ্যার হিসাব

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৫। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং ১৫টি উপজেলা এলাকা রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয় আনুমানিক ৬০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বলা হয় আনুমানিক ৭০ লাখ। অর্থাৎ করপোরেশন বলছে, তিন বছরে জনসংখ্যা ১০ লাখ বেড়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা দেখানো হয় আনুমানিক ৬০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বলা হয় আনুমানিক ৭০ লাখ। অর্থাৎ করপোরেশন বলছে, তিন বছরে জনসংখ্যা ১০ লাখ বেড়েছে।

নগরে ৭০ লাখের মতো জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ ভাসমান, এদের ভাসমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাঁদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, মাত্র ছয় বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৮৬৩ সালে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালটি। ১৯৮২ সালে পৌরসভাকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নামে যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর সময় জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখ। যদিও বিবিএসের হিসাবে ১৯৯১ সালে সিটি করপোরেশনে জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৬৬ হাজার।

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের টিকে থাকা নিয়ে নিরীক্ষকের শঙ্কা
  • চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা আসলে কত লাখ, ৩২ নাকি ৬০
  • গ্যাস চুরির অভিযোগে মুন্নু সিরামিক কারখানায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রাজশাহীর মানুষ