মায়ের ছায়ায় ছায়ায় ঘুরে বেড়ায়। বাদামি রঙের রোমশ শরীর। স্বভাবে চনমনে। কিছুটা গরুর বাছুরের মতো দেখতে, তবে মুখাবয়ব লম্বাটে। দুটি নীলগাইয়ের শাবক তারা। শাবক দুটি মায়েদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনজুড়ে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে গাজীপুর সাফারি পার্কের কোর সাফারি এলাকায় বনের ভেতর তাদের দেখা মিলছে। মানুষের ছায়া দেখলেও শাবকদের নিয়ে দৌড়ে বনের অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে মায়েরা।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর প্রথমবার তারা শাবক দুটি দেখতে পায়। এরপর প্রতিদিন খাবার খেতে এলে নির্দিষ্ট স্থানে তাদের দেখা মিলছে। তবে শাবক দুটি স্ত্রী না পুরুষ, তা জানা যায়নি। নিরাপত্তার কারণে কাছাকাছি ‍গিয়ে তা নির্ধারণের চেষ্টাও করেনি কর্তৃপক্ষ।

পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক মো.

রাজু আহমেদ জানান, আগেও কয়েকবার সেখানে নীলগাই শাবক জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ দুটি শাবকসহ এখন নীলগাইয়ের পালে সদস্যসংখ্যা ১১। এর মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ৯টি। এর মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী নীলগাই।

আজ সোমবার দুপুরে পর্যটক বাসে চড়ে কোর সাফারির মূল ফটক পেরিয়ে বেশ কিছুটা ভেতরে গিয়ে দূর থেকে দেখা মেলে দুটি পূর্ণবয়স্ক মা নীলগাইয়ের। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের পাশে দেখা যায় শাবক দুটিকে। পর্যটক বাস দেখে অভ্যস্ত হওয়ায় তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মা নীলগাই দুটি বনের পাশের খোলা জায়গায় নেমে আসে। নেমে আসে দুটি শাবকও। মাঝেমধ্যে মায়ের দুধ পান করছিল তারা। আবার হেঁটে বেড়াচ্ছে। কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ দৌড়ে বনের ভেতর শাবক নিয়ে লুকিয়ে পড়ে মা দুটি। আবার বনের অন্য প্রান্তে দেখা যায় তাদের। পুরো সময় ধরে শাবক দুটি মায়ের কাছাকাছি অবস্থান করছিল।

পার্কের বন্য প্রাণী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নীলগাই সাধারণত শাবকের বিষয়ে সতর্ক থাকে। তারা শাবকের নিরাপত্তায় অনেক সময় কিছু না খেয়ে দীর্ঘ সময় তাদের নিরাপত্তা দিতে থাকে। এ জন্য এদের শাবক দেখার সুযোগ কম হয়। পার্কে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শাবকগুলো একটু পরিণত হওয়ায় মায়েরা তাদের নিয়ে বাইরে আসা শুরু করেছে। নীলগাই সাধারণত একসঙ্গে একটি থেকে তিনটি শাবকের জন্ম দেয়। জন্মের পর প্রায় ছয় মাস ধরে বাচ্চাগুলো দুধ পান করে। এরপর তারা মায়েদের সঙ্গে অন্যান্য খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হতে থাকে। অ্যান্টিলোপ প্রজাতির মধ্যে নীলগাই সবচেয়ে বড় প্রাণী। পুরুষ নীলগাইয়ের শিং থাকে। এদের গায়ের রং হয় কিছুটা কালচে। একই প্রজাতির স্ত্রীদের ক্ষেত্রে শিং থাকে না। স্ত্রী নীলগাইয়ের রং হয় কিছুটা বাদামি। এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয় দুই বছরে। পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় নেয় পাঁচ বছর।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একসময় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এই প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে ১৯৪০ সালের পর থেকে এ দেশের বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীটিকে আর দেখা যায়নি। তাই নীলগাইকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে ভারত সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশ অংশে বেশ কিছু নীলগাই স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে। এরপর সেগুলোকে সাফারি পার্কে এনে রাখা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্ধার হওয়া একটি স্ত্রী নীলগাইকে প্রথমে গাজীপুর সাফারি পার্কে আনা হয়। পরে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান থেকে আনা হয় একটি পুরুষ নীলগাই। এই দুটি নীলগাই ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। সাফারি পার্কে আসার পর দুটি নীলগাই থেকে পর্যায়ক্রমে শাবক পাওয়া গেছে।

গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুর সাফারি পার্কে নীলগাই নিয়মিত শাবকের জন্ম দিচ্ছে। পার্কের উন্মুক্ত ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ায় বংশবিস্তার ঘটছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ বক দ ট শ বক র জন ম দ

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে তরুণকে খুন করে দেহ টুকরা টুকরা করলেন বন্ধু

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ২০ বছর বয়সী এক তরুণ ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। সম্প্রতি পুলিশ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, এক নারীকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার জেরে ওই তরুণের বন্ধুই তাঁকে হত্যা করেছেন। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি, দেহটি টুকরা টুকরা করে ফেলেছিলেন।

২ ডিসেম্বর রমেশ মহেশ্বরী গুজরাটের মহেশ্বরী নখত্রানার মুরু গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন। এরপর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি নথিভুক্ত করে পুলিশ। এরপর ওই তরুণের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়।

তদন্ত করতে গিয়ে রমেশের বন্ধু কিশোরের ওপর সন্দেহ বাড়তে থাকে পুলিশের। একপর্যায়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিশোরকে আটক করে।

এই মামলার সঙ্গে এক কিশোরেরও সংশ্লিষ্টতা ছিল। ওই কিশোরের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিশোর স্বীকার   করেন, তাঁদের দুজনের পরিচিত এক নারীকে নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে তিনি রমেশকে খুন করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কিশোর ওই নারীকে ইনস্টাগ্রামে বার্তা পাঠিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ওই নারী রমেশকে এ কথা জানালে দুই বন্ধুর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কিশোর রমেশকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর তাদের জানিয়েছেন, তিনি রমেশকে তাদের এলাকার বাইরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে খুন করেন। তারপর একটি ছুরি দিয়ে তাঁর মাথা, হাত ও পা কেটে আলাদা করে ফেলেন। এরপর রমেশের দেহের টুকরাগুলো একটি গভীর কুয়োর মধ্যে ফেলে দেন। আর বাকি দেহটি কাছাকাছি এক জায়গায় মাটিচাপা দেন।

কিশোরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নখত্রানা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন গত সোমবার ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তারা মাটিচাপা দেওয়া দেহটি উদ্ধার করে। পরে কুয়া থেকে টুকরা টুকরা করে ফেলে দেওয়া দেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় আরও তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর
  • হাদিকে গুলি: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল
  • রণবীরের হাঁটুর বয়সি নায়িকা সারাকে কতটা জানেন?
  • শত বছরের পুরোনো বিমানবন্দরে হচ্ছে ৩ হাজার কোটি ডলারের শহর
  • চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা কেটেছে
  • ‘এরপর তাঁর পালা’: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রোকে ট্রাম্পের হুমকি
  • ৮ ম্যাচে মাত্র ২ জয় রিয়ালের, চাকরি হারানোর শঙ্কার মুখেও ‘ইতিবাচক’ আলোনসো
  • সাজিদকে উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ
  • নির্বাচন করব, পদত্যাগের বিষয়ে যথাসময়ে জানবেন: আসিফ মাহমুদ
  • নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে তরুণকে খুন করে দেহ টুকরা টুকরা করলেন বন্ধু