সাভারে ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা
Published: 29th, October 2025 GMT
ঢাকার সাভারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং সিটি ইউনিভার্সিটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। সাভার মডেল থানায় দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলায় ১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা, শিক্ষার্থীদের মারধর, ভাঙচুর, চুরি ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে মামলাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আকতার হোসেন।
অপর দিকে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের অবৈধভাবে আটক করে অসত্য–বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করা, মারধর করে গুরুত্ব জখম করাসহ ক্ষতিসাধনের অভিযোগে গতকাল রাত পৌনে একটার দিকে আরেকটি মামলা করেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ খান। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির অবস্থান সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায়।
এ সম্পর্কে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে মামলা করেছে। সিটি ইউনিভার্সিটির দায়ের করা মামলায় একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১ হাজারজনকে এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির দায়ের করা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রের থুতু ফেলার সময় অসাবধানতাবশত বিবাদী ফাহাদ নামের একজনের পায়ে পড়ে। ওই ছাত্র দুঃখ প্রকাশ করলেও ড্যাফোডিল কয়েক ছাত্র ঝগড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ফাহাদসহ অজ্ঞাত এক হাজারের অধিক ছাত্র নামধারী দুষ্কৃতকারী এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের (ড্যাফোডিল) কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ও প্ররোচনায় অস্ত্রসহ বেআইনিভাবে সমবেত হন। তাঁরা রাহাজানি, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করার উদ্দেশ্য নিয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির মেইন ফটকে নিরাপত্তায় থাকা সিকিউরিটি গার্ডদের গুরুতর আঘাত করেন। তবে মূল ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে হামলাকারীরা মূল ফটকের পাশের দেয়াল ওয়াল গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে কেটে বিশ্ববদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পেট্রলবোমা, হাতবোমা ছোড়েন এবং ছাত্রছাত্রীদের পরিবহনের ৫টি বাস ভাঙচুর করেন। ৩টি বাস, ৩টি মাইক্রোবাস, ১টি প্রাইভেট কার, ২টি মোটরসাইকেল বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর, দামি জিনিসপত্র লুটপাট ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। ইউনিভার্সিটির হিসাব শাখা থেকে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যান।
আরও পড়ুনসাভারে ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতে সংঘর্ষ, বাসে আগুন২৭ অক্টোবর ২০২৫এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। হামলাকারীরা ড্রোন ব্যবহার করে সিটি ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন স্থাপনা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। হামলার সময় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বাধা দিতে গেলে অস্ত্রসজ্জিত হামলাকারীরা তাঁদের মারধর করেন। মারধরে সিটি ইউনিভার্সিটির শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দায়ের করা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর গায়ে থুতু ফেলেন। তুচ্ছ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিটি ইউনিভার্সিটির একদল ছাত্র অস্ত্র, ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ নামের হোস্টেলে অতর্কিত আক্রমণ করে শিক্ষার্থীদের মারধর ও ভাঙচুর করেন। ওই হামলায় ড্যাফোডিলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুনসাভারে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটক ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর, মারধরের অভিযোগ২৭ অক্টোবর ২০২৫মামলার এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হামলার পর সিটি ইউনিভার্সিটির একটি গোষ্ঠী ড্যাফোডিলের ১১ জন ছাত্রকে জিম্মি করে সারা রাত আটক রেখে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায়, অমানবিক নির্যাতন, মারধর এবং ভয় দেখিয়ে অসত্য–বিভান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করে। সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো ও সহিংস দৃশ্য সাজানো হয়। ঘটনার ভিডিও ও ছবি পরিকল্পিতভাবে ধারণ করে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয় মূল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য। সিটি ইউনিভার্সিটি প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে। পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ এবং প্রমাণ ধংসের চেষ্টা করে তারাই মিডিয়া নাটক সাজিয়েছে।
আরও পড়ুনসাভারে সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা : ফাঁকা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে আছে ক্ষতচিহ্ন২৮ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট র শ ক ষ র থ ল ইউন ভ র স ট ইউন ভ র স ট ত দ য় র কর স ঘর ষ ব শ বব ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।