ইবিতে ছাত্রীর পোশাক নিয়ে শিক্ষকের কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
Published: 29th, October 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রীদের পোশাক ও নিহত শিক্ষার্থী সাজিদকে নিয়ে এক শিক্ষকের বিরূপ মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝি। তবে অসাবধানতাবশত কিছু শব্দচয়নে ভুল হয়েছে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
স্কুল পরিচালকের বিরুদ্ধে ৮ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল্লাহ আল আসাদ নামের একজনের আইডি থেকে ‘ইবিয়ান পরিবার IUian Family’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে পোস্ট দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
অডিওতে শোনা যায়, সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া আন্দোলন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া প্রসঙ্গে কোনো এক শিক্ষার্থীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা আমার সাথে মিটিং করছে। মিটিং করার পরে প্রক্টরকে বললাম আমার এখানে সব ছাত্র-ছাত্রীরা আছে, আপনি আসুন। সেখানে অনেক রাত হয়ে গেছে, আর রাত হওয়ার পরেই ছেলেরা প্রক্টরকে বলে গেছে, স্যার, আমরা তো অনেক কাজ করছি। রাতের খাওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। সে লিখছে সুইট নাকি ৫ হাজার টাকা দিয়ে আন্দোলন বিক্রি করেছে। তাহলে আমি নাসির উদ্দিন সেখানে আছি। আমি ভিকটিম হলাম না?”
তিনি বলেন, “কোথাকার কোন একটা মৃত পোলা, যাই হইছে, সে তো চলে গেছে। ল্যাংটা মাইয়া কতগুলো নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। এক মাইয়া নিয়ে গেছে ওখানে আরেক হাইওয়ান। ও হাইওয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। ওটা তো ইনসান না, হাইওয়ান। মরে গেছি মরে। আল-কোরআনের টিচার। আমি গেছি। আমার সাথে গেছে জিন্সের প্যান্ট পরা, গেঞ্জি পরা মাইয়া। মরে গেছি আমি মরে।”
অডিওর শেষ দিকে এক শিক্ষার্থীকে তিনি বলেন, “তোমার যদি ইচ্ছা হয় যাও, লড়ো সেখানে। আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার হক আন্দোলনের, আমার জায়গা হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার তোমার নেই। এখন থেকে ক্লাস চলবে, পরীক্ষা চলবে, আন্দোলন চলবে, সবকিছু চলবে। ব্যাস, যাও। ঠিক আছে। এটার আমি বিভাগীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”
অডিওর পোস্টে সালমান খান নামে এক শিক্ষার্থী মন্তব্যে লেখেন, “একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে তিরস্কার করলে সেটি সুন্দর ও মার্জিত হবে। যে যত জ্ঞানী সে তত বিনয়ী। সবচেয়ে বড় কথা আল কুরআনের মতো বিভাগের একজন শিক্ষক, তার ওপর বিভাগীয় প্রধান। তার বাক্যচয়ন থেকে আমরা কিছু শিখব। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে শুনে মনে হলো, কোনো অশিক্ষিত গ্রামের মাতব্বরের বক্তব্য শুনলাম।”
রাইসা বিনতে রাশিদা লেখেন, “লজ্জাজনক মন্তব্য, এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে এই ভিডিও ওই সময় পোস্ট করার সাহস কেন হয়নি? উচিত ছিল ওইসময় পোস্ট করা।”
নুসরাত ঐশী লেখেন, “একটু ভালো রেজাল্টের আশায় এরে যেসব অমানুষরা ডিফেন্ড করতে আসবে ওরা সাজিদের বিচার চায় কিনা সন্দেহ.
ফাবিয়ান আরিফ লেখেন, “মাই গড, এমন আচরণ হতে পারে একজন শিক্ষকের? এমন সাহস কোথা থেকে পায়? আসলে দোষ তাদের না, দোষ আমাদের ছাত্রদের। আমরা চুপ করে থাকার জন্য তারা সাহস পায়।”
মেহেদী হাসান ইমন লেখেন, “যারা আন্দোলন করবেন, অবশ্যই আল কুরআন ডিপার্টমেন্টের হতে হবে। না হয় প্রিয় স্যার আন্দোলন করতে দিবে না।”
শরীফ উদ্দিন আমানউল্লাহ লেখেন, “ওইদিন আমরা উপস্থিত ছিলাম। স্যার একজন শিক্ষার্থীকে ধমক দিয়েছে তা ঠিক। ঐ ছাত্রের বিরুদ্ধে ডিপ্টের সকল শিক্ষার্থী স্যারের কাছে অভিযোগ করছে যে ঐ শিক্ষার্থীর আচার ব্যবহারে ডিপ্টের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। বারবার সে ডিপ্টের সিদ্ধান্তের বাহিরে কাজ করেছে। আল কোরআনের ছাত্র হয়েও সে যথাযথ আচরণ করেনি। এজন্যে তাকে ধমক দেওয়া হয়েছে। ঐদিনের ধমক যথাযথই ছিল। সকল ছাত্র উপস্থিত ছিল। সকল ছাত্রের চোখে সে অভিযুক্ত ছিল। সে হিসেবে সম্মানিত চেয়ারম্যান স্যার সঠিক কাজ করেছে।”
তিনি আরো লেখেন, “এখানে আপনারা বিষয়টার আগা মাথা না জেনে পানি ঘোলা করতে চাচ্ছেন। এটা কখনো ঠিক হবে না। যারা উপস্থিত ছিল তাদের সাথে কথা বলুন। মূল বিষয় জানুন। স্যার ঐদিন যা করেছে যা বলেছে, তা ১০০% ঠিক করেছে ঠিক বলেছে আল কোরআনের চেয়ারম্যান হিসেবে।”
সোহরাব উদ্দিন লেখেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন বিভাগের একজন শিক্ষক কর্তৃক এক ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় অপমান করা একদম অগ্রহণযোগ্য। একজন শিক্ষক হয়ে এমন আচরণ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানকে কলুষিত করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “এছাড়া, খুনের বিচার চাওয়া ছাত্রদের আন্দোলনকে ছোট করে বিভাগের সুনাম রক্ষার নামে এমন ভাষা ব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”
অডিওর বিষয়ে অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, “সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি আল-কুর আন বিভাগের সভাপতি হিসেবে শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহর জন্য বিভাগের ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি। আমার অফিসে বসেই কেইস এন্ট্রি করেছি।”
তিনি বলেন, “প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি এগিয়ে নিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ইবি থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু এ সত্ত্বেও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকসহ আমার আরেক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমার অসাবধানতাবশত কিছু শব্দচয়নে ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
এদিকে, বুধবার (২৯ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ও সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ইবি শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নারীর পোশাক নিয়ে কটুক্তিকারী শিক্ষকের বিচারসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
এতে শাখা ছাত্রদল, আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থী জোট, ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার পর ১০৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত হত্যার বিচার হয়নি, কোনো খুনিও গ্রেপ্তার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব এবং বিচার প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝির সাজিদ আব্দুল্লাহকে ‘কোথাকার কোন মৃত পোলা, যাই হোক সে তো চইলাই গেছে’ বলে হেয় করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও কটূক্তির মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। তার এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নৈতিক অধঃপতন এবং বিচারবোধহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এই ধরনের বক্তব্য শিক্ষকতার মহান পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিভিন্ন সময় সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আন্দোলন দমনে বিভিন্ন পক্ষের অনৈতিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে খুনিদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করতে হবে; নিহত সাজিদকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝিকে ন্যাক্কারজনক ও যৌন হয়রানী মূলক বক্তব্য দেওয়ার অপরাধে তাকে বহিষ্কার করতে হবে; সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকি-ধামকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাকি দাবিগুলো হলো- আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনে বাঁধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য ও প্রবৃত্তি যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকার ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে, কোনমতেই কোন আন্দোলনকারীর একাডেমিক ফলাফলের উপর বিরূপ প্রভাব যেন না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলেন, “কোনো শিক্ষক যদি এ ধরনের কোনো শব্দ ব্যবহার করে সেটা মানহানিকর ও অপমানজনক। তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে এ ধরনের বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অথরিটি হিসেবে তার পক্ষ হিসেবে সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আগামীতে কোনো শিক্ষক যেন এ ধরনের বক্তব্য না দেয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত করছি।”
ওই শিক্ষকের বিচারের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, “তোমরা শিক্ষার্থীরা অভিযোগপত্র দাও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখো কি করে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত স জ দ হত য র হত য র ব চ র আল ক রআন র একজন শ ক ষ উদ দ ন ম ঝ ন শ চ ত কর উপ চ র য এক শ ক ষ র একজন র জন য আল ক র র উদ দ ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।