কুষ্টিয়ায় মুফতি আমির হামজার নির্বাচনী গণমিছিল ও সমাবেশ
Published: 12th, December 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মুফতি আমির হামজার নির্বাচনী গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানাধীন ঝাউদিয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে এই মিছিলের আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
বিদায়ী সংবর্ধনা পেলেন আসিফ মাহমুদ
স্বাগত জানালেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে শঙ্কা দেখছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
মুফতি আমির হামজার নেতৃত্বে গণমিছিলটি ঝাউদিয়া বাজার এলাকায় বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করে। মিছিলে জামায়াতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তারা দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে মুফতি আমির হামজা বলেন, এলাকার উন্নয়ন, সুশাসন, শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও জনসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মতপ্রকাশ ও নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন এটাই গণতান্ত্রিক চর্চার ইতিবাচক দিক।”
মিছিল ও সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দার, সহকারী সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম রবিন, কুষ্টিয়া সদর থানা সেক্রেটারি ডা.
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রাম–ইউনিয়নে ঘুরে প্রার্থীদের গণসংযোগ, ‘সাড়া’ও পাচ্ছেন
নরসিংদীতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে দিন দিন উত্তাপ বাড়ছে। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন পাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন তাঁরা ছুটছেন সংসদীয় আসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে। এসব গণসংযোগে মানুষের ‘ব্যাপক সাড়া’ পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন প্রার্থীরা।
জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে একটি আসনে (নরসিংদী-৫) মনোনয়ন নিয়ে দলীয় অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। ফাঁকা রাখা আসনটি শরিক কোনো দলকে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
জামায়াতে ইসলামী পাঁচটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালিয়ে আসছে। দলীয় প্রার্থী নিয়ে প্রচারণায় আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও। সর্বশেষ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জেলার চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। একটি আসনে তৎপর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী।
১৯৯১ সালে জেলার পাঁচটি আসনেই জয় পেয়েছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালে তিনটি ও ২০০১ সালে চারটি আসনে জয় পেয়েছিল বিএনপি। ২০০৮ সালে পাঁচ আসনেই জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
নরসিংদী-৩ আসনে এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কোনো দলকে বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা আছে।নরসিংদী-১ (সদর)
১৯৯১ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন আসনটিতে সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক। ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন খায়রুল কবির খোকন। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি পদেও আছেন।
খায়রুল কবির খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন মানুষের কাছে যাই, তাঁরা কাছে এসে বলেন এত দিন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। এবার আপনাকে ভোট দিতে পারব আমরা। এতেই বুঝতে পারি, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম জনগণ ভুলে যাননি।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম ভূঁইয়া। তিনি জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমার দল ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি থাকবে না। কল্পনাতীত সাড়া পাচ্ছি মানুষের।’
এনসিপি থেকে আসনটিতে প্রার্থী করা হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সালকে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে উঠান বৈঠক করছি, শত শত মানুষ অংশ নিচ্ছেন। ভালোই সাড়া পাচ্ছি। মানুষ রাজনীতিতে নতুনদের দেখতে চান।’
এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জেলা শাখার উপদেষ্টা শওকত হোসাইন সরকার এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের জেলা শাখার সহসভাপতি মাহমুদুল হক ভূঁইয়া।
নরসিংদী-২ (পলাশ ও সদরের একাংশ)
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান নরসিংদী-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সাবেক এই মন্ত্রী ছাড়া এখানে আর কেউ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন না।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হয়েছেন জেলা সেক্রেটারি মো. আমজাদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার বেশ আগে থেকেই পলাশের জনগণের সঙ্গে আমার সেতুবন্ধ তৈরি হয়ে গেছে।’ তবে একটি বড় দলের কর্মীরা তাঁর লোকজনকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে এখানে প্রার্থী করেছে দলটি। তিনি বলেন, ‘পলাশের জনগণ অল্প সময়ে আমাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। আমার সাফল্য দেখতে চান তাঁরা। কিন্তু প্রতিনিয়ত হুমকির শিকার হচ্ছি আমরা। বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসব হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।’
তবে দুই প্রার্থীর এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন পলাশ উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিএনপির কেউ কোনো প্রার্থী বা তাঁদের কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন না। কারও পোস্টার সাঁটাতে না দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুহসিন আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ফারুক ভূঁইয়া, খেলাফত মজলিসের মো. আশরাফ হোসেন (শাহীন) দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় আছেন।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর)
আসনটিতে এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কোনো দলকে বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য জগলুল হায়দার (আফ্রিক) এখানে প্রচারণায় আছেন।
এদিকে বিএনপির চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর এলাহী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হারিস রিকাবদার এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল ইসলাম (মিন্টু)। তাঁরা দুই দলে ভাগ হয়ে সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক পক্ষে রয়েছেন মনজুর এলাহী ও তোফাজ্জল হোসেন আর অন্য পক্ষে রয়েছেন আবুল হারিস রিকাবদার ও আকরামুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে মনজুর এলাহী ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
শিবপুরের অনেক মানুষের মধ্যে এখনো বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার প্রভাব রয়েছে। আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্যসচিব আরিফ উল ইসলাম মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে আলোচনা আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার মরণোত্তর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হোক। দ্রুত এটি না করা হলে আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকব।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। ২০১০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী শিবপুর উপজেলা শাখার আমির মো. মোস্তাফিজুর রহমান কাওসার। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রাকীবুল ইসলামও প্রচার চালাচ্ছেন।
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব)
নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও মনোহরদী উপজেলা শাখার সভাপতি সরদার সাখাওয়াত হোসেন (বকুল) আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে এখানে জয় পেয়েছিলেন। এখানে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন ও স্বেচ্ছাসেবাবিষয়ক সহসম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর তাঁরা আর প্রচারে নামেননি।
সরদার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদিনই সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাঁদের কাছ থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা ও ইতিবাচক মনোভাব পাচ্ছি, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন আসনটি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালোই সাড়া পাচ্ছি। একসময় বেলাব ছিল বামপন্থীদের ঘাঁটি। যদি ভালো ভোট হয়, তবে আমি আশাবাদী।’
এখানে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোহরদী থানার সভাপতি সাইফুল্লাহ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মনোহরদী উপজেলা সহসভাপতি নাসির আল ফরিদী প্রচার চালাচ্ছেন। এনসিপি আসনটিতে প্রার্থী করেছে জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুনুর রহমানকে (জাহাঙ্গীর)।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা)
বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক আশরাফ উদ্দিনকে (বকুল) নরসিংদী-৫ আসনে প্রার্থী করেছে দলটি। নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। আশরাফ উদ্দিন বলেন, এলাকার ভোটারদের কাছ থেকে আশার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছেন। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসনে বিএনপি বিজয়ী হতে পারেনি। তিনি আশা করছেন, আসনটি পুনরুদ্ধার করে বিএনপিকে উপহার দিতে পারবেন।
এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূঁইয়া, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী রেজাউর রহমান। এই সাতজন একত্রে প্রার্থী বদলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিলের মতো নানা কর্মসূচি করেন।
জামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘লিখিতভাবে কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত তা বদলের দাবিতে আমরা সাত প্রার্থী একসঙ্গে আছি।’
আসনটিতে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামানকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন অনেক ভোটার। নির্বাচনী সমঝোতা হলে জামায়াত আসনটি ইসলামী আন্দোলনকে ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। এখানে জামায়াতের প্রার্থী রায়পুরা থানা শাখার আমির মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রচারণায় আছেন। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব নাজমুল হক সিকদার। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী জেলা সহসভাপতি তাজুল ইসলাম।