গত এক দশকে আমের মৌসুম দীর্ঘ হয়েছে। গ্রীষ্ম-বর্ষা ছাড়িয়ে আম এখন পৌঁছে গেছে শীত মৌসুম পর্যন্ত। এ বছর শরৎ-হেমন্তেও বাজারে পর্যাপ্ত আম দেখা গেছে। ফল বিক্রেতারা বলেছেন, এই আম আমদানি করা নয়; দেশে চাষ করা।
খুবই আনন্দের খবর। এই সময়ে দেশে সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করা আম বিক্রি হতো। অমৌসুমি এই আম ‘কাটিমন’ নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মনে পড়ল প্রায় আট বছর আগে দেখা কাটিমন আমের একটি বাগানের কথা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর গ্রামে এনামুল হকের বাগানে প্রথম এই আম দেখি। তখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প থেকে ওই প্রদর্শনী বাগানটি সৃজন করা হয়েছিল।
শুরুতে ভিয়েতনাম থেকে এই আমের কিছু সায়ন সংগ্রহ করেন এনামুল হক। তারপর ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী কিছু ক্ষীরশাপাতি ও লক্ষ্মণভোগ জাতের আমগাছে ভিনিয়ার গ্রাফটিং পদ্ধতিতে জাত পরিবর্তন করেন। এই পদ্ধতিকে ‘টপ ওয়ার্কিং’ও বলা হয়। পরের বছর থেকেই গাছগুলোতে ফলন আসতে শুরু করে। নিজের বুদ্ধিমত্তা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে এনামুল সফল হন। এই উদ্যোগের মাত্র আট বছর পর কাটিমন আমের বিপুল উৎপাদন রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো।
অমৌসুমি এই আমের এমন সহজলভ্যতাই প্রমাণ করে দেশে কাটিমন আমের উৎপাদন বেশ বেড়েছে। দেশের কোন অঞ্চলে চাষ হচ্ছে এই আম, তার সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে একদিন হাজির হলাম নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায়। সাপাহারের উদ্যমী কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে পৌঁছালে তিনি আমাদের লেমন পাতার বিশেষ চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। সেখানে খানিকটা সময় ব্যয় করে আমরা বেরিয়ে পড়ি। পরবর্তী গন্তব্য সাপাহারের কুচকুরিলার ডাঙাপাড়া গ্রাম।
আমরা গেলাম নাসির উদ্দীনের কাটিমন আমের বাগানে। হেমন্তের প্রায় উত্তাপহীন সময়েও গাছভর্তি আম দেখা গেল। কোনো গাছে মুকুল, কোনো গাছে আমের গুটি, কোনো গাছে আধা পাকা, আবার কোনো গাছে পাকা আম। পর্যায়ক্রমে এসব আম পেড়ে বিক্রি করা হবে। দুই একর জায়গায় প্রায় ৯০০ গাছ নিয়ে তাঁর এই বাগান। গাছ ও ফলগুলো এখনো নাগালের মধ্যে। বোঝা গেল বাগানের বয়স বেশি নয়। ২০১৯ সালে সৃজিত এই বাগানে ২০২২ সাল থেকে পূর্ণমাত্রায় ফলন শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। কলম বিক্রি করেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকার।
নাসির উদ্দীন শস্য-ফসল রেখে কেন এই আম চাষে ঝুঁকেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এল। তিনি জানালেন,Ñঅমৌসুমি এই আম চাষ অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক। আমের মৌসুমে তিনি এ বাগানের কোনো আম নেন না। কারণ, তখন বাজারদর গড়পড়তা কম থাকে। তিনি মনে করেন অমৌসুমি হওয়ায় এই আমের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কতিপয় অসাধু উদ্যোক্তা বেশি মুনাফার লোভে অপরিপক্ব আম বাজারে নিয়ে আসেন। ভোক্তারা এই আম কিনে ঠকেন এবং তাতে দুর্নামও হয়। এসব কারণে কাটিমন আম নিয়ে বাজারে কিছু নেতিবাচক কথা শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো সঠিক সময়ে আম সংগ্রহ করা হলে সেই পরিপক্ব আমের স্বাদ সত্যিই দারুণ। এ কারণে শুধু অমৌসুমি বলেই নয়, স্বাদের দিক থেকেও কাটিমন আম এগিয়ে আছে বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।
তবে সবচেয়ে দরকারি কথা হচ্ছে, কেউ যদি এই আম চাষ করতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে তাঁকে অবশ্যই সঠিক চাষপদ্ধতি জেনে কাজটা শুরু করতে হবে। ভালোভাবে না জেনে বাগান করতে গেলে শুধু যে তিনি ক্ষতিগ্রস্তই হবেন না, এই আমের ফলন, স্বাদ ও চাষপদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তফসিল বাতিলের দাবিতে শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের মশালমিছিল
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়ে শরীয়তপুরে মশালমিছিল করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের জাজিরা উপজেলার মিরাশা এলাকায় মিছিলটি হয়। মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ, উদ্ধার করা হয়েছে ৬৪টি মশাল।
জাজিরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে জাজিরার মিরাশা এলাকার মিছিলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা অংশ নেন। দুই শতাধিক মানুষ হাতে মশাল নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ ছাড়া রাতে সদর উপজেলার একটি এলাকায় আওয়ামী লীগের আরও কিছু লোক মশাল নিয়ে মিছিল করেন। তবে সদরের কোনো এলাকায় ওই মিছিল হয়েছে, তা জানতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল রাতের ওই দুটি মিছিলের দুটি ভিডিও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মশাল হাতে দলটির নেতা-কর্মীরা তফসিলকে অবৈধ দাবি করে এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় অনেকের মুখে মাস্ক ছিল।
আরও পড়ুনজাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি ১৬ ঘণ্টা আগেজাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের জাজিরার মিরাশা এলাকায় মিছিল হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ততক্ষণে মিছিলকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ওই স্থান থেকে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। মিছিল করার কাজে ব্যবহৃত ৬৫টি মশাল উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেব।’