পৌষ মেলার ঘোড়দৌড়ে হর্ষধ্বনিতে মুখর চারপাশ
Published: 11th, January 2025 GMT
মাঠ থেকে আগেই কাটা হয়েছে ফসল। ধু ধু মাঠে হিম হিম শীত উপেক্ষা করে হাজারো দর্শকের ঢল নামে। সবার দৃষ্টি মাঠে। নির্দিষ্ট পথে খুরের আওয়াজ তুলে প্রাণপণে ছুটছে ১৬টি ঘোড়া। কে কাকে টেক্কা দিয়ে সামনে যেতে পারে, চলে সেই লড়াই। হর্ষধ্বনি আর উপস্থিত দর্শকদের করতালিতে মুখর পুরো মাঠ।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর ডোমকান্দি মাঠে বসা চার দিনব্যাপী পৌষ মেলায় প্রধান আকর্ষণ ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় উৎসব। শনিবার মেলার শেষ দিনে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে সিরাজগঞ্জের ‘অ্যারাবিয়ান হর্সের’ ঘোড়সওয়ার ইমরান হোসেন ও ‘খ’ বিভাগে বগুড়ার ধুনট উপজেলার খাটিয়ামারির ‘আল্লাহর দানের’ ঘোড়সওয়ার ফরহাদ হোসেন চ্যাম্পিয়ন হয়।
পৌষ মেলা উপলক্ষে আশপাশের অর্ধশত গ্রামে উৎসব আমেজ বিরাজ করে। মেলা উপলক্ষে মেয়ে জামাই ও আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। আজকের ঘোড়দৌড় দেখতে মাঠে হাজারো মানুষের ঢল নামে। ঘোড়সওয়ারদের রণকৌশল আর ঘোড়ার খুরের টগবগ শব্দ উপভোগ করেন হাজারো দর্শক। চর ডোমকান্দি গ্রামের তরুণসমাজ আয়োজিত এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ‘অ্যারাবিয়ান হর্স’, ‘আল্লাহর দান’, ‘সালমান রাজ’, ‘কাটিং মাস্টার’, ‘আল্লাহ ভরসা’, ‘রাহিম টুয়েন্টি ফোর’, ‘অমিদ্র সুজন’, ‘মহাজন’, ‘সুজন অগ্নি’, ‘হঠাৎ আক্রমণ’, ‘শাহ জালাল’, ‘বিজলী রানী’, ‘কিং কোবরা’, ‘নাগরাজ’সহ ১৬টি ঘোড়া।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেলা তিনটায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসতে শুরু করেন দর্শকেরা। খেলা শুরুর আগেই চর ডোমকান্দি ফসলি মাঠ ভরে যায়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলে দর্শকের করতালিতে মুখর হয় চারপাশ। প্রতিযোগিতা শেষ হয় সন্ধ্যা ছয়টায়।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঘোড়সওয়ার ইমরান হোসেনকে রেফ্রিজারেটর এবং ফরহাদ হোসেনকে ৩২ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন পুরস্কার দেওয়া হয়। ইমরান হোসেন বলেন, ‘এক যুগ ধরে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছি। কোথাও ঘোড়দৌড়ের খবর পেলেই সেখানে ছুটে যাই।’
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী এরফানুর রহমান। স্থানীয় সমাজসেবক আবদুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাজাত হোসেন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারাজুল ইসলাম, এম রুবেল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মেলা কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ বলেন, পৌষ মেলা উপলক্ষে আশপাশের প্রতিটি গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন নিমন্ত্রণ খেতে আসে। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা মেলার প্রধান আকর্ষণ। এ উপলক্ষে গ্রামজুড়ে আনন্দের বন্যা বইছে। প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে-জামাতা ও অতিথিদের মাছ মাংস, মিঠাই-মিষ্টান্ন, শীতের পিঠা-পুলি ও পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের মহান মে দিবস আজ
আজ ১ মে বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করতে হবে। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মে দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’
আজ সকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সেদিন দাবি আদায়ের জন্য পথে নেমে এসেছিলেন।
কিন্তু বিক্ষোভ দমনে সেদিন বর্বর কায়দা অবলম্বন করা হয়েছিল। পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শ্রমিকেরা। সে ঘটনায় তখন সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়ে ওঠে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মদানের মধ্য দিয়েই।
সরকারের পক্ষ থেকে ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ পালনের নানা আয়োজন রয়েছে আজ। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেন।কর্মসূচিমহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা।
আজ সকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ-স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।
মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে নয়াপল্টনে আজ বেলা দুইটায় শ্রমিক সমাবেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টির শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা তিনটায় আলোচনা সভা, জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পল্টন মোড়ে সকাল নয়টায় ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে সকাল ১০টায় শ্রমিক সমাবেশ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কমরেড মণি সিংহ সড়কে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল সাড়ে আটটায় সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।