‘হাসিনা-মনমোহন চুক্তির’ ১৫ বছর পূর্তিতে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের বিক্ষোভ
Published: 12th, January 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে কিছু চুক্তি সই হয়েছিল। সেই চুক্তিগুলোকে একসঙ্গে ‘হাসিনা-মনমোহন চুক্তি’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সেই চুক্তির ১৫ বছর পূর্তির দিনে চুক্তিগুলোকে ‘অসম ও অধীনতামূলক’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবালসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
ফয়জুল হাকিম বলেন, দিল্লি বা ওয়াশিংটনে বসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নির্ধারিত হতে দেওয়া হবে না। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধান অজিত দেভালের বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীদের টেবিলে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হলো। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নীরব কেন?
ফয়জুল হাকিম বলেন, ছাত্র–শ্রমিক ও জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে সৃষ্ট জুলাই অভ্যুত্থান শুধু ছাত্রদের একক সংগ্রামের ফসল, এমন বয়ান দেওয়া থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
কাজী ইকবাল বলেন, সাম্রাজ্যবাদী ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থান ভারতের তাঁবেদার পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে উচ্ছেদ করেছে। এখন ভারতের শাসকশ্রেণি, সরকার ও গণমাধ্যম অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
সীমান্ত হত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ঢাকা অঞ্চলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।
ছাত্র ফেডারেশনের সহসভাপতি দীপা মল্লিক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র–শ্রমিক ও জনতা ভারতের আধিপত্য থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে।
আরও পড়ুনআশা-নিরাশার দোলায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক২২ জুন ২০১৩সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা অঞ্চলের সভাপতি এহতেশাম ইমন। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের বাড্ডা অঞ্চলের সংগঠক রফিক আহমেদ, কদমতলী অঞ্চলের সংগঠক কাইয়ুম হোসেন ও টঙ্গী অঞ্চলের সংগঠক সুমন মল্লিক এবং প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের সংগঠক মো.
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সময় ভারতের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনেও বিক্ষোভ দেখান দলটির নেতা–কর্মীরা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক