হাকালুকি হাওরপারে সম্ভাবনাময় ফসল হয়ে উঠেছে শর্ষের চাষ। বছরের দীর্ঘ সময় যে জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে, পানি সরে গেলেও যে জমির বেশির ভাগই একসময় পতিত পড়ে থাকত, অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সেই জমিতে এখন প্রতিবছর শর্ষের চাষ বাড়ছে। শর্ষে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এখন সেই জমি হলুদ বন্যায় ভাসছে। শর্ষের হলুদ ফুল ঢেউ খেলছে হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে।

মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলার হাওরপারের মাঠগুলো এখন শর্ষের আহ্লাদে আরেক রূপসী বাংলা হয়ে উঠেছে। চাষিদের দিন কাটছে শর্ষেখেতের পরিচর্যায়, শর্ষে ফুলের দিকে তাকিয়ে। এই শর্ষে চাষে অনেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। শর্ষেখেতে মৌ-চাষ করছেন অনেকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে ফুলে উড়ছে, ঘটছে প্রাকৃতিক পরাগায়ন। ফসল ভালো হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার হাকালুকি হাওরের হাল্লা এলাকায় দেখা গেছে, হাওরপারের এলাকাটি হলুদ হয়ে আছে। পর্যটন টাওয়ারের কাছে হলুদের বন্যা বইছে। বর্ষায় যেখানে পানি থইথই করে, পানি সরে গেলেও জমি পতিত থাকত; সেই জমিনে এখন শর্ষের ফুল বেণিখোলা কিশোরী হয়ে ঢেউ খেলছে। অনেকটা দূর পর্যন্ত শুধু হলুদেরই দেখা মিলছে। ফুলে ফুলে উড়ে বসছে মৌমাছির দল। কোনো জমিনে চাষিরা ঘাস, আগাছা বাছার কাজ করছেন। কেউ আলপথ ঘুরে ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। বিকেলের আলোতে হলুদ ফুল আরও প্রাণখোলা হয়ে ফুটছে। বাতাসে ভাসছে শর্ষে ফুলের শান্ত, মৃদু ঘ্রাণ। হাওরে ঘুরতে এসে শর্ষে ফুলে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকেরাও।

হাল্লা গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরার বাড়ি একেবারে হাকালুকির মধ্যে। আগে আমরার এ (শর্ষেখেতের) জমিন পাকাল (পতিত) থাকত। কৃষি অফিসাররা সার, বীজ দিবা কওয়ায় (দেবেন বলায়) আমরা চাষ শুরু করছি। দুই বছর ধরি সরিষাখেত কররাম (করছি)। বহুত মাইনসে (অনেক মানুষ) এবার খেত করছে। সরিষার ফলনও ভালা অইছে (হয়েছে)।’

একই গ্রামের দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি পাঁচ-সাত বছর ধরি খেত করছি। আগে অনেক জমিন পড়ি রইছে (পতিত থেকেছে)। আমি সরিষাখেত করি ভালা উপকার পাইরাম (পাচ্ছি)। এবার অন্যবারের থাকি (থেকে) ফসল ভালা অইছে দেখরাম (হচ্ছে দেখছি)।’ তিনি (দেলওয়ার হোসেন) জানিয়েছেন, তিনি ছয় কিয়ার জমিতে শর্ষেখেত করেছেন। আশা করছেন প্রতি কিয়ারে চার থেকে পাঁচ মণ ফসল পাবেন।

কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই একটু একটু করে চাষের আওতা বাড়ছে। এ বছর হাকালুকি হাওরের বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা, খুটাউরা, মুর্শিবাদকুরা, ধর্মদেহী; সুজানগর ইউনিয়নের বাঘমারা, বাঘেরকোনা, তেরাকুরি, ঝগড়ি; দাসেরবাজার ইউনিয়নের মাইজমজুরি, দ্বিতীয়ারদেহী, মালিশ্রী এবং বর্ণি ইউনিয়নের ছালিয়া, কাজিরবন্দ, মালামবিল এলাকার মাঠে শর্ষের চাষ হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গত বছর বড়লেখা উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শর্ষের চাষ হয়েছিল। চলতি বছর ২ হাজার ৫৫০ হেক্টরে শর্ষের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাকালুকি হাওরপারে শর্ষের চাষ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টরে। এ বছর বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১১ জাতের চাষ হয়েছে। হাওরপারে শর্ষে চাষে আগ্রহ বাড়ার বেশ কিছু অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এর মধ্যে আছে শর্ষের স্বল্প জীবনকাল, কম সময়ে ফসল এলেও এটি উচ্চ ফলনশীল। আছে শর্ষের বিভিন্ন জাতের সহজপ্রাপ্যতা। শর্ষে চাষে সেচ কম লাগে। অল্প উৎপাদন খরচ হওয়ায় কৃষকের ভালো মুনাফা হয়ে থাকে। প্রতি মণের দাম চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।

শর্ষের শুকনা গাছ বর্ষাকালে হাওরপারের চাষিরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। শর্ষের খৈল গোখাদ্য হিসেবে চাষিদের কাজে আসে। পারিবারিক ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করে অনেকেই শর্ষে চাষে বাড়তি আয় করেন। শর্ষেখেতের ওপর নির্ভর করে অনেকেই মৌ চাষ করছেন। হাওরপারের খেতে প্রায় ২০০ মৌ বাক্স রয়েছে। এতে মধু হয়, আবার প্রাকৃতিক পরাগায়নের কারণে শর্ষের উৎপাদন বাড়ে।

বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

মনোয়ার হোসেন বলেন, এবার ফসল খুবই চমৎকার হয়েছে। বিনা মূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়ার ফলে প্রতিবছর হাওরে শর্ষের আবাদ বাড়ছে। কৃষকদের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে কেউ শর্ষে চাষে আগ্রহী হলে তাঁকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সেবা ও কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ