আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের দমনমূলক নারী নীতিমালাকে চ্যালেঞ্জ করতে মুসলিম নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালালা ইউসুফজাই। তিনি বলেন, নারীদের পড়াশোনা ও কাজ করতে না দেওয়াসহ তালেবানের আরও যে নীতিমালাগুলো আছে, তাতে ‘ইসলামি কিছু’ নেই।

গতকাল রোববার ইসলামাবাদের সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মালালা বলেন, সরকার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ন্যায্যতার আড়ালে তাদের অপরাধ ঢেকে রাখে। অথচ এগুলো ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যায় না। খবর: বিবিসি

ইসলামি দেশগুলোর নারী শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তানে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে মালালা এমন আহ্বান জানান। সম্মেলনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নারী শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও শিক্ষাবিদ অংশ নেন।

২৭ বছর বয়সী মালালা মুসলিম নেতাদের বলেন, ‘সহজ কথায় বলতে গেলে আফগানিস্তানে তালেবান নারীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে না।’

মালালার মতে, তালেবান সরকার আবারও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে।

মালালা বলেন, যেসব নারী তালেবানের অন্ধকার আইনগুলো ভঙ্গ করে, তাদের মারধর, আটক এবং ক্ষতি করার মধ্য দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। 

মালালার মন্তব্যের বিষয়ে তালেবান সরকারের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছিল বিবিসি। তবে তালেবান সরকার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তালেবান সরকার আগে বলেছিল, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা অনুসারে নারীর অধিকারকে সম্মান করে।

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে কোনো বিদেশি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো বলেছে, নারীদের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করার নীতি পরিবর্তন করা দরকার।

গতকাল মালালা বলেন, ‘আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

মালালা আরও বলেন, নিজ দেশে ফিরতে পেরে তিনি ‘উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত’।

মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মালালা। ১৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে তিনি যখন স্কুলে পড়তেন, সে সময়ে পাকিস্তানের তালেবান জঙ্গিরা স্কুলবাসের ভেতরে তাকে গুলি করেছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা মালালা নারীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করছেন।

প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকায় ২০১২ সালের পর মালালা হাতে গোনা দু–একবার পাকিস্তানে গেছেন। আর এবার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আবারও পাকিস্তানে ফিরেছেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ