দেশের মোট জনসংখ্যার পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। সর্বশেষ জনশুমারিই এমন তথ্য বলছে। তার মানে, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরই বেশি নারী। নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়ন ছাড়া এ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নও সম্ভব নয়। নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের অনেকগুলোর প্রকল্প ‘তথ্য আপা’। এটির মাধ্যমে নারীদের মধ্যে নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিসহ অনেকগুলো সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। দুঃখজনক হচ্ছে, সেই প্রকল্পের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা পাঁচ মাস ধরে বেতন–ভাতা পাচ্ছেন না।

নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, আইন, কৃষি ও ব্যবসায় সুবিধা দিতে ১৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মেয়াদ বাড়িয়ে তিন বছর ধরে চালু রাখা হচ্ছে প্রকল্পটি। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রকল্পটির মেয়াদ আরেক বছর বাড়ানো হয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পের নাম কিছুটা পরিবর্তন করলেও প্রকল্পটির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্নই থাকছে। এখন প্রকল্প চলমান আছে ঠিকই, বেতন নেই কর্মকর্তা–কর্মচারীদের।

‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের বর্তমান জনবল প্রায় দুই হাজার। বেতন বন্ধ থাকায় তাঁরা পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সংসার খরচের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষার খরচ নিয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রকল্প পরিচালক ও জাতীয় মহিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব শাহনাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট না থাকায় বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহে অর্থ ছাড় দিতে পারে। এরপর দুই কিস্তিতে বকেয়া বেতন দেওয়া হবে।

আমরা আশা করব, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গেই দেখবে। দ্রুত অর্থ ছাড়ের পর বেতন পরিশোধেও বিলম্ব হবে না, সেটিই কাম্য।

যুগ্ম সচিব আবার এ–ও জানাচ্ছেন, পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আর বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। তেমনটি ঘটলে এতগুলো কর্মকর্তা–কর্মচারীর কী হবে, সেটিও ভাবতে হবে সরকারকে। কারণ, অনেকে প্রকল্পটির সম্ভাবনা দেখে সুযোগ–সুবিধা বিবেচনা করে অন্যান্য সরকারি ছেড়ে এখানে যুক্ত হয়েছিলেন। এখন তাঁদের চাকরির বয়সও নেই। ফলে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের জীবনে বড় ধরনের সংকট নেমে আসবে।

প্রকল্পের তথ্যসেবা কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রকল্পটি নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্প কর্মকর্তার উদাসীনতা রয়েছে। এমন অভিযোগ ওঠা অবশ্যই হতাশাজনক। গ্রামে গ্রামে দরজায় দরজায় গিয়ে নারীদের সেবা দেওয়া ও জনসচেতনতা তৈরির এ প্রকল্প অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব, নারী উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটির স্থায়ীকরণ করা যায় কি না, সেই বিবেচনা করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পটিকে আরও সময়োপযোগী ও কার্যকর করা হোক।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতাকে মারধর, খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি কারাগারে

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলমের করা মামলায় সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন হাসান আল মামুন। খুলনা মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে আদালত চত্বরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা মামুনকে লক্ষ্য করে ডিম ও পচা আম নিক্ষেপ করেন। তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। পরে নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন সেনা সদস্যরা। 

মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ কে এম শহিদুল আলম বলেন, মামলাটিতে উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন হাসান আল মামুন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রোববার খুলনা মহানগর দায়রা জজ  আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আমরা জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় তৎকালীন ওসি মামুন নিজেই
ফখরুল আলমকে বেদম মারধর করেন। লাঠির আঘাতে ফখরুল আলমের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট মামুনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন ফখরুল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ