রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাসবাদ পরিচালিত কালো তালিকাভুক্ত দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফ্লোরিডার বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান এমপি।

তবে হোয়াইট হাউজ বলছে, বন্দিমুক্তি চুক্তির অংশ হিসেবে বাইডেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফ্লোরিডার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ফ্লোরিডা ফিনিক্স জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম প্রত্যাহারের ঘোষণাপত্রে বাইডেন লিখেছেন, “কিউবার সরকার গত ৬ মাসে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের জন্য কোনো সহায়তা প্রদান করেনি। কিউবা সরকার আশ্বাস দিয়েছেন যে, তারা নিকট ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করবে না।”

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার পর কিউবা ঘোষণা দেয়, তারা বিভিন্ন অপরাধের জন্য আটক ৫৫৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে চার বছর আগে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বিবিসির প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে। এরপর প্রায় পাঁচ দশক ধরে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পুরো সময়টায় ওয়াশিংটনে কিউবার ও হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দূতাবাস ছিল না। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়।

সন্ত্রাসবাদে উসকানিদাতার তালিকা থেকে কিউবাকে সর্বপ্রথম বাদ দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০২১ সালে আবারও দ্বীপ দেশটিকে কালো তালিকায় যুক্ত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে বৈদেশিক নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন জো বাইডেন। তারই অংশ হিসেবে ট্রাম্পের শপথ নেয়ার মাত্র পাঁচদিন আগে কিউবা নিয়ে এলো এমন সিদ্ধান্ত।

ফ্লোরিডা ফিনিক্সের খবর বলছে, বাইডেনের এই পদক্ষেপ স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে পারেন।

রিপাবলিকান সিনেটর রিক স্কট ‘এক্স’ পোস্টে লিখেছেন, “বিশ্বজুড়ে একনায়ক ও সন্ত্রাসীদের জন্য জো বাইডেনের বিদায়ী উপহার: সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক তালিকা থেকে কিউবাকে বাদ দেওয়া এবং তাদের জন্য আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলা।”

পোস্টে তিনি আরো লিখেছেন, “এই পদক্ষেপ বেপরোয়া ও বিপজ্জনক। বাইডেনের তোষণ সরাসরি কিউবার একনায়কদের হাতেই যাচ্ছে, যারা সন্ত্রাসবাদকে ইন্ধন জোগায় এবং তাদের জনগণকে নিপীড়ন করে। আমি প্রথম দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করব কমিউনিস্ট কিউবান শাসনব্যবস্থাকে জবাবদিহি করতে এবং কিউবান জনগণকে মুক্ত করতে।”

দক্ষিণ ফ্লোরিডার তিনজন কিউবান-আমেরিকান কংগ্রেস সদস্য বাইডেনের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য দ র জন

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ