স্বামীর মৃত্যুর খবরে স্ট্রোক করে মারা গেলেন স্ত্রীও
Published: 24th, January 2025 GMT
নেত্রকোনা শহরের দক্ষিণ সাতপাই এলাকায় রেলওয়ে সিগন্যালের পাশের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম রফিক বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুশোকে স্ত্রী রিনা বেগমও রাতে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের মৃত্যু হয়। রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক ছিলেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নে কুনিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম রফিক বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে মৎস্য খামারে মোটরপাম্পের সুইস দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে আহত হন। ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
রফিকুল ইসলাম রফিকের লাশ সাতপাই বাসায় নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর স্ত্রী রিনা বেগম চিৎকার দিয়ে বলেন ‘তুমি লাশের কাঠিয়ায় (খাটিয়া) শুয়ে আছো কেন? আমাকে রেখে তুমি কোথায় যাও’। এসব কথা বলে তিনিও মাটিতে শুয়ে পড়েন। স্ট্রোকজনিত কারণে রিনা বেগমের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন তাঁকে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসক।
নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় রিনা বেগমের। একই দিনে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করেন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ সাতপাই এলাকায় রেলওয়ে সিগনালের পাশে জামে মসজিদের সামনে স্বামী-স্ত্রীর জানাজা শেষে সাতপাই পৌর কবরস্থানে লাশ দুটি দাফন করা হয়। রিনা ও রফিক দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেও বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।
সম্পাদনা : হাবিব
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ