কয়েকদিন ধরে আইলা ছাগাইয়া হাওরের নালা দিয়ে নামছে পাগনার হাওরের পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাইল্লানির বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতার মুখে পড়েছে জামালগঞ্জ উপজেলার হঠামারা মৌজার হঠামারা গ্রামের বোরো জমি। তলিয়ে যাচ্ছে বিশাল এলাকা।
এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার এমন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশনে গজারিয়া স্লুইসগেটের নালা খননের জন্য আবেদন করেছেন। দ্রুত এ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে আবেদন করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর।
আবেদন সূত্রে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের হঠামারা গ্রামের ৭ থেকে ৮ হাজার একর বোরো জমি রয়েছে প্রান্তিক কৃষকদের। এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে মাত্র সপ্তাহখানেক আগে। বাকি জমিতে এখনও চারা রোপণের কাজ চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ লক্ষ্মীপুর মৌজার পাগনার হাওরের পানি আইলা ছাগাইয়া হাওরের নালা দিয়ে নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় সেখানকার বেশির ভাগ জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ধানের চারা পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষক শঙ্কিত। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, কাইল্লানির বাঁধ দেওয়ায় তারা এ ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। গজারিয়া স্লুইসগেটের খাল খনন করে পানি নিষ্কাশন করলে হাওরের কোনো ক্ষতি হতো না। সে জন্য গজারিয়া খাল খনন করে স্লুইসগেট দিয়ে পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
কৃষক আমিন উদ্দিন জানান, হঠামারা গ্রামের হাওরে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। বুধবার রাতে লক্ষ্মীপুর ও ফেনারবাক মৌজার পানি হাওরে ঢুকে বোরো জমি ডুবে গেছে।
একই গ্রামের আব্দুল হেকিম জানান, কাইল্লানির বাঁধ বন্ধের কারণে পানি ফুলে হঠামারা মৌজার বোরো জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এক ফসলি বোরো জমি তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে কৃষকদের বিপর্যয়ে পড়তে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কয়েক কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়ে যাবে।
স্থানীয় কৃষক সংগঠক লক্ষ্মীপুর গ্রামের সিরাজুল হক অলি জানান, গজারিয়া খাল খনন করে স্লুইসগেট খুলে দিতে হবে। একই সঙ্গে ডালিয়া স্লুইসগেটের খাল আরও অন্তত ১০ দিন খোলা রাখতে হবে। এদিক দিয়ে পানি যাতে সুরমা নদীতে সহজে নেমে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। চলমান পরিস্থিতির কারণে কাইল্লানি বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে আরও দশ দিন পরে। তা না হলে যে ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণের আয়োজন, সেই ফসলেরই অস্তিত্ব থাকবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুশফিকীন নূর জানান, কৃষকদের আবেদন পেয়েছেন। পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলীকে দ্রুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
দেশের প্রতি চারজনের একজন মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন। আলোচক ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিবিএসের ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) তথ্য ব্যবহার করে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) নিরূপণ করা হয়েছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হলো দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি, যা শুধু আয় বা ভোগের মতো একক মাত্রার বাইরে গিয়ে দারিদ্র্যকে তার বিভিন্ন দিক থেকে বুঝতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের এ সূচকে তিনটি মাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই মাত্রাগুলোকে ১১টি আলাদা সূচকে ভাগ করা হয়েছে। যেমন জীবনযাত্রার মানের মধ্যে রয়েছে—বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, খাওয়ার পানি, বাসস্থান, রান্নার জ্বালানি, সম্পদ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
এমপিআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে রয়েছে, যা সংখ্যায় প্রায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, আর শহরে ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে এই দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা। শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রধান অতিথি আনিসুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে এমপিআই-কে দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি নতুন ও উদ্ভাবনী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই পদ্ধতি সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। তিনি এ সূচককে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ ছাড়া কিছু জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এমপিআই ব্যবস্থাটি আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য মাপকাঠিকে সম্পূরকভাবে সহায়তা করবে এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। সভাপতির বক্তব্যে মনজুর হোসেন জানান, জিইডি ভবিষ্যতেও নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করবে এবং নীতিনির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।