উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকাল পেট্রোল পাম্প বন্ধের ঘোষণা
Published: 5th, February 2025 GMT
নওগাঁয় বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অভিযানে কয়েকটি পেট্রোল পাম্প উচ্ছেদের প্রতিবাদে সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য উত্তরবঙ্গের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রংপুর বিভাগে তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ফলে পুরো অঞ্চলে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে, বিপাকে পড়েছেন যানবাহন মালিক, চালক ও সাধারণ মানুষ।
এদিকে পাম্প বন্ধ থাকায় জ্বালানি নিতে এসে দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই অভিযোগ করেন, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে জ্বালানি বিক্রয় বন্ধ করে দেওয়ায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও মালবাহী যানবাহনের চালকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা পড়েছেন বিপাকে। যারা ধর্মঘটের খবরে আগাম জ্বালানি তেল সংগ্রহ করেছিলেন তারাই কেবল এখন মোটরসাইকেল চালাতে পারছেন।
অনিক নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, “দেশে একের পর এক ভোগান্তির সংবাদ দেখছি। নওগাঁর কোথায় কি হয়েছে সে জন্য রংপুরের পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধ করে রাখার কোনো মানে হয় না। যেটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অযৌক্তিক। আমাদের ভোগান্তি তৈরি করে পেট্রোল পাম্পের মালিকরা আন্দোলন করে তাদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে। তাই বিনা নটিসে এমন ভোগান্তিকারী তেল পামগুলোর লাইসেন্স বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।”
পিকআপ চালাক আসলাম ও সাইফুল জানান, তারা রংপুর থেকে ভাড়া নিয়ে দেশের যেকোনো জেলায় যান। প্রতিদিনের ন্যায় আজ সকালে তারা নগরীর শাপলা চত্বরে ওয়াই-ফাই পিকআপ স্ট্যান্ডে এসেছে। যথারীতি ভাড়া পেয়ে তেল নিতে এসে দেখে পামগুলো বন্ধ। পেট্রোল পাম্পে বসে নিরুপায় হয়ে অলস সময় পার করছেন তারা। সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি তাদের।
আরেক ক্রেতা রাকিব হোসেন বলেন, “হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এখন আমরা তেল কোথায় পাবো। অন্তত দুই বা তিনদিন আগে এটা জানানো দরকার ছিল। এইভাবে পাম্প বন্ধ করা ঠিক হয়নি। দ্রুত এগুলো খুলে দেওয়া দরকার।”
এ বিষয়ে রংপুর পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাইফুল ইসলাম নামে এক নেতা বলেন, “নওগাঁয় সওজ কর্তৃপক্ষ কোনো নোটিশ ছাড়াই কয়েকটি পেট্রোল পাম্প উচ্ছেদ করেছে। এটি সম্পূর্ণ অন্যায়। আমাদের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তেল পাম্পের ধর্মঘট চলবে।”
এদিকে হঠাৎ করে পাম্প বন্ধের ফলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রামসহ পুরো বিভাগেই জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ঢাকা/আমিরুল/ইমন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ম প বন ধ বন ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের
দীর্ঘ ২২ বছর পর আবার চাকা ঘুরতে যাচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের। এরই মধ্যে কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার জনের। সরকারি মালিকানাধীন বস্ত্রকলটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। আজ সোমবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারখানাটি পরীক্ষামূলক চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিপিপিতে নেওয়ার পর রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের নাম বদলে রাখা হয়েছে বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি পুরোদমে চালু হলে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আজ দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএলের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল, গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টি লাইন ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান, গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান ও বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রাজশাহীতে অবস্থিত সরকারি এই টেক্সটাইল মিলটি ২২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি পিপিপিতে চালুর উদ্যোগ নেয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রায় ২৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাকে প্রাণ-আরএফএল উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানাটিতে তৈরি হবে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, জুতা ও তৈরি পোশাক। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটিতে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবরে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিসেম্বরে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয় গ্রুপটি। এরপর তিন মাসের মাথায় কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটি পুরোদমে চালু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে তারা উত্তরবঙ্গে এই বৃহৎ শিল্প প্রকল্প শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে রাজশাহীর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে।
আনিসুর রহমান বলেন, কারখানায় বর্তমানে সীমিত পরিসরে জুতা ও ব্যাগ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে রাজশাহীর প্রায় এক হাজার লোক কাজের সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হবে।
রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে কারখানা চালু করার প্রক্রিয়ায় কয়েক শ গাছ ও পুকুর ভরাটের বিষয়ে রাজশাহীতে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনও করেছে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তাঁরা সঠিক উপায় অবলম্বন করেই এগুলো করেছেন। বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন। তার বিপরীতে তিন হাজার নতুন গাছ লাগানো হয়েছে।