ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ে যা বললেন পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 5th, February 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘‘সরকার একবারে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি। তবে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে, যাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা নিরাপদ বিকল্প তৈরি করতে পারে।’’
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নীতি থেকে বাস্তবায়ন: বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক আবর্জনা মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘যতদিন না একবারে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়, ততদিন ধাপে ধাপে এ থেকে সরে আসতে হবে।’’ পাশাপাশি, সরকার সব ধরনের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে—এমন গুজবকে ‘ভিত্তিহীন মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন এবং এটিকে প্লাস্টিক শিল্পের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ তৈরির চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন।
প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য হারিয়ে যায় না, বরং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যা মাছের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। এটি এমন একটি বিষয় যেখানে ব্যক্তি, সরকার ও ব্যবসায়ী—সবারই দায়িত্ব রয়েছে।’’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অধিকাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সহজলভ্য বিকল্প রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের আরো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।’’ পুরান ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক কারখানাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘এটি ধাপে ধাপে বন্ধ করার পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’
তিনি বলেন, ‘‘একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার—নিষিদ্ধকরণ একমাত্র সমাধান নয়, বরং ধাপে ধাপে ব্যবহার বন্ধ করা, পুনর্ব্যবহার ও পুনর্ব্যবস্থাপনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফিনল্যান্ড সরকার অত্যাধুনিক পুনর্ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র স্থাপনে আমাদের সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং আমরা শিগগিরই তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’’
তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান, ২০৩০ সালের আগেই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে একটি সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। একইসঙ্গে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অবৈধ পলিথিন কারখানা বন্ধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘নিয়মকানুন মেনে চলার প্রতি প্রতিরোধ অগ্রহণযোগ্য।’’
তিনি প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা যদি একযোগে কাজ করি, তবে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সম্ভব।’’
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.
সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক আবর্জনা হ্রাসে কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবহ র ব যবস একব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।
সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।