তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় ঘোষণা দিয়ে হামলার অভিযোগ
Published: 10th, February 2025 GMT
তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় অমর একুশে বইমেলার ‘সব্যসাচী’ স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আগেই দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার ঘোষণা অনুযায়ী হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেখক ও প্রকাশক শতাব্দী ভবকে মেলা থেকে বের করে নিয়ে যায় পুলিশ এবং স্টলটিও বন্ধ করে দেয়। তবে বাংলা একাডেমি বলছে তারা কোনো স্টল বন্ধ করেনি।
এই স্টলের বিরুদ্ধে নাস্তিকতা প্রচারের অভিযোগ তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত রোববার থেকে সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্ট দেওয়া হয়। শতাব্দী ভবও হামলা হওয়ার শঙ্কার কথা আগে জানিয়েছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। তিনি সেখানে ভিডিও বার্তাও দিয়েছিলেন। প্রকাশনা সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সানজানা মেহরিন একাধিক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে কিছু লোক তাদের স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল শিক্ষার্থী সব্যসাচী স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই দেখে ভিড় জমান। শতাব্দী ভব তখন সেখানে বসে ছিলেন। তসলিমা নাসরিনের বই কেন বেচছেন? শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে তাদেরকে ‘মৌলবাদী’ বলেন এ লেখক। একপর্যায়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাঁকে মারতে যান। তাঁকে কানে ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি দুই হাত একত্র করে দর্শনার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। পুলিশ এসে বাধা দেয় এবং তাঁকে নিয়ে চলে যায়।
মেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আগত দর্শনার্থীরা ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’; ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ ঘটনায় পাল্টা মিছিলও হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে তসলিমা নাসরিন গতকাল বিকেলে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘বইমেলার সব্যসাচী স্টল গুঁড়ো করে দিতে চেয়েছে। বইমেলা কর্তৃপক্ষের কী করা উচিত? সব্যসাচী স্টলের সবার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। যারা স্টল গুঁড়ো করে দেওয়ার, ধ্বংস করে দেওয়ার, প্রকাশককে আর লেখককে খুন করার হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। তা না করে তারা প্রকাশককে বলেছে মেলা থেকে বই সরিয়ে নিতে।’
এ বিষয়ে বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা সমকালকে বলেন, ‘এ ঘটনার পর পুলিশের সহযোগিতায় মব থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি কোনো স্টল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কোনো বইও নিষিদ্ধ করেনি।’
শতাব্দী ভবের স্ত্রী সানজানা মেহরিন গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে দুই দিন ধরে কিছু লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে আমাদের স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই বিষয়টি আমরা পুলিশ এবং বইমেলা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। তারা আমাদের বই সরিয়ে নিতে বললে, আমরা আজ বই সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও তারা এসে আমাদের স্টলে হামলা করেছে। ভবকে পুলিশ নিয়ে গেছে।’
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, শতাব্দী ভবকে পুলিশ জিম্মায় নিয়েছে। তাঁর প্রকাশনায় যদি নিষিদ্ধ বই থাকে, তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর স্টল বন্ধ থাকবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।