ময়মনসিংহে সড়কে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের শিক্ষাসহায়তা চেক বিতরণ
Published: 12th, February 2025 GMT
ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাংবাদিক সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা বৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠান হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে টানা এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও জেলা প্রশাসকের সাক্ষাৎ না পাওয়ায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান করা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুফিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা ১১টা থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভা চলছিল। সেটি শেষ হয় পৌনে একটায়। সভাটি দীর্ঘ হওয়ায় দ্রুত শেষ করতে তাগাদা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আমি সভা শেষ করে দেখি, সাংবাদিকেরা রাগ করে চলে গেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রোগ্রামের জন্য সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। এখানে আমার করার কী আছে বলেন?’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে শিক্ষাসহায়তা বৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এসডি) এম আবদুল্লাহ জেলা প্রশাসকের অফিসকক্ষে প্রায় এক ঘণ্টা বসে থাকেন। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসকের সাক্ষাৎ পাননি। তখন পাশের সম্মেলনকক্ষে সভা করছিলেন জেলা প্রশাসক। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ময়মনসিংহে কর্মরত ২১ জন সাংবাদিক সন্তানের মধ্যে শিক্ষাসহায়তা বৃত্তির চেক বিতরণ করা হয়।
সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এসডি) এম আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি খাইরুল বাশার।
অনুষ্ঠানে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবাদিক সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু ময়মনসিংহে এসে আমরা ভিন্ন অভিজ্ঞতা পেলাম। বাংলাদেশে আমলাশ্রেণি পর্যায়ের মধ্যে যাঁরা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা নিজেদের রাজা মনে করেন, আর যাঁরা জেলায় বসবাস করে, তারা সবাই প্রজা। এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে আমরা যতই পরিবর্তনের গল্প শোনাই না কেন, এটার কোনো উন্নতি হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সময় নির্ধারণ করে ঢাকা থেকে নির্দিষ্ট কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে করতে হয়, সেভাবে করেছি এবং এসেছি। কিন্তু এখানে এসে এক ঘণ্টা বসে থাকার পরও ন্যূনতম সৌজন্যতা প্রদর্শন করা হয়নি।’
সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠান থাকলেও অনুষ্ঠানটি করা যায়নি। পুরো ঘটনাই আমাদের জন্য বিব্রতকর ও লজ্জাজনক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ ক কল য ণ ট র স ট র চ ক ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ