সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সদ্য ঘোষিত ২৮৪ সদস্যের এ কমিটি নিয়ে বৈষম্য করা হয়েছে অভিযোগ করে পদবঞ্চিতরা ঢাকা-রাজশাহী-রংপুর মহাসড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের এ কর্মসূচিকে বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেছেন কমিটির সদস্যরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২৮৪ সদস্যের এ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্য সচিব, ইকবাল হোসেন রিপনকে মুখ্য সংগঠক ও টি এম মুশফিক সাদকে মুখপাত্র করা হয়। এর পর থেকে এ কমিটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে শহরে পদবঞ্চিত সমন্বয়ক মুন্তাসির মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি করা হয়। মুন্তাসির মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে পদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা অনেকেই বাদ পড়েছেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বরে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। গত সোমবার দুপুরে একই স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এদিকে বিকেলে কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে শহরে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছে একটি পক্ষ। এর আগে পদবঞ্চিতদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা।
জানতে চাইলে নবনির্বাচিত আহ্বায়ক সজীব সরকার বলেন, ৬ মাসের জন্য জেলা, ৯টি উপজেলা ও থানার সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির নেতৃত্বে উপজেলা, থানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সজীব সরকার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে ছাত্রদল, শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধিরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। সরকার পতনের পর সবাই যার যার সংগঠনে ফিরে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দিতে চাইলে অন্য কোনো সংগঠনে যুক্ত থাকার সুযোগ নেই। যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই দুই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তারাও কমিটিতে পদ পাননি। কিছু ছাত্র প্রতিনিধি বাদ পড়েছেন, যারা উপজেলা, থানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটিগুলোতে স্থান পাবেন।’
সদস্য সচিব মেহেদী হাসান বলেন, কোনো সংগঠনের কমিটি বাতিলের জন্য মহাসড়ক অবরোধ হাস্যকর ও বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু না। তারা নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, যা অনভিপ্রেত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কমিটিতে স্থান পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, প্রমাণ করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদবঞ্চিত মুন্তাসির মেহেদী হাসান বলেন, বৈষম্যমূলক পকেট কমিটি করায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক প্রতিনিধি আন্দোলন করছেন। এরই মধ্যে ঘোষিত কমিটি থেকে ৫৩ জন পদত্যাগ করেছেন। যার কপি দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুখে অভিযোগ করলে হবে না। প্রমাণ দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। এর পর ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে আবারও অবরোধ শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ পদবঞ চ ত কম ট র এ কম ট য গ কর ত কম ট কম ট ত স গঠন গঠন র উপজ ল সরক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ