আ.লীগ রাজনীতি করার বিন্দু পরিমাণ অধিকার রাখে না: আখতার
Published: 12th, February 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, গণহত্যা চালানো আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার আর বিন্দু পরিমাণ অধিকার রাখে না। শহীদ ভাইয়ের লাশের শপথ নিয়ে বলছি, আওয়ামী লীগ যদি আর কোনো আপত্তিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে, আমাদের শরীরের শেষ রক্তবন্ধু দিয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।
বুধবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গাজীপুরের সংঘাতে নিহত কাশেমের জানাযায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে আগুন লাগাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কাশেম। শহীদ মিনারে জানাজা ও কফিন মিছিলের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কফিন মিছিলে অংশ নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ মুক্তির ৬ মাস পেরিয়েছে। আমাদের ভাইকে কুপিয়ে আহত করা হলো। এতটাই অসুস্থ হয়ে গেলেন যে তিনি শহীদ হলেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ত্রাসের রাজত্ব করেছিল। আমরা বিগত ফ্যাসিবাদের সময়ের আয়না ঘর দেখেছি। ২ ফিট বাই ৪ ফিট রুমে আমাদের ভাইদের রেখেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় অভ্যুত্থানের সময়ও আমাদের ভাইদের আয়না ঘরে রাখা হয়েছিলো। আমাদের ভাইকে হত্যার পেছনে যারা সক্রিয়, হুমকি দিয়েছে, পরিকল্পনা করেছে তারা সবাই পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ।’
আখতার বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্টে আমরা দেখেছি, পুলিশ শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ গণহত্যা করেছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল। ভারতে থাকুক আর যেখানেই থাকুক; দেশীয় শক্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আর কী প্রয়োজন প্রশ্ন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আজকে আয়না ঘর উন্মোচিত হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্টের মাধ্যমে হাসিনা যে সরাসরি গণহত্যায় জড়িত, সে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে, ছয় মাস পরেও আমাদের আওয়ামী লীগের দোসরদের হাতে নিহত হতে হয়। গণতন্ত্রকামী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের এটা সামগ্রিক ব্যর্থতা। আমরা এতদিনেও সুবিচার নিষিদ্ধ করতে পারি নাই।’
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের আর কি লাগবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে?’
হাসনাত বলেন, ‘আমরা দেখছি, কালচারাল এক্টিভিজম, শ্যাডো একটিভিজমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করেছে। এখন সেটার বৈধতা উৎপাদন করছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব রেখে আওয়ামী লীগ নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। হয় আওয়ামী লীগ থাকবে, না হয় আমরা থাকব। আমরা একসঙ্গে থাকতে পারি না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘৬ মাস পরেও বিপ্লবীদের শহীদ হতে হচ্ছে। ৬ মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি করল? আজকে আমাদের ভাইয়ের রক্তকে সামনে রেখে শপথ করতে হবে। গাজীপুরের মোজাম্মেল, জাহাঙ্গীর রাসেলের জন্যে আমাদের ভাই শহীদ হলেন। যারা নতুন করে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত তৈরি করছে, তাদেরও বিচার করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র ভ ই র জন ত কর ছ ল আখত র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)