বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার জন্য বিচারের চেয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের দুই কর্মী। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

ছাত্রদলের এই দুই কর্মীর মধ্যে একজন ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রদলের সদস্য (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদমর্যাদার) ওমর ফারুক। অন্যজন সূর্যসেন হল ছাত্রদলের কর্মী আবু সাঈদ।

আরো পড়ুন:

উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ, শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ২৬ মাইক বন্ধ

দুই দফা সংঘর্ষ শেষে শান্ত আইডিয়াল ও সিটি কলেজ

সূর্যসেন হল ছাত্রদলের কর্মী আবু সাঈদ বলেন, “স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিগত ১৭ বছরে যত অপকর্ম করেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। এমন কী সব কিছু তদন্ত করে বের করাও সম্ভব নয়। তারা যত অপরাধ করেছে, তার কোনো সীমা নেই।”

“চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তারা প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এটা গণহত্যা। আর গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকে না। কিন্ত বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। আমরা এজন্যই আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ এবং তাদের সকল অপরাধের বিচার চাই।”

ওমর ফারুক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও প্রশাসনে ছাত্রলীগ ও তাদের দোসররা রয়েছে। তাদেরকে বহাল রেখে তথাকথিত সংস্কার চলতে পারে না।” 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে ওমর ফারুক বলেন, “আপনারা চাইলেই  ছাত্রলীগের মতো আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে পারেন। আপনারা যতক্ষণ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ না করবেন ততক্ষণ আমরা আমাদের অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”

গাজীপুরে আ ক ম মোজ্জামেল হকের বাড়িতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাশেম নামে কিশোরের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জোরদার হয়েছে। বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় কাশেম। তার মরদেহ নিয়ে শহীদ মিনার থেকে কফিন মিছিল করে শাহবাগে আসে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাসহ সারা দেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন বা খাটিয়া মিছিল করেছে।

এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের দুই কর্মী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অমরণ অনশনে বসেছেন। 

ঢাকা/সৌরভ/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ অনশন ছ ত রদল র দ ই কর ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা বাগেরহাটের ছাত্র সামিউল ইসলাম এখন চরম অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। হামলায় গুরুতর আহত হওয়ায় তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। এমনকি, ঠিকভাবে বসতেও পারেন না সামিউল।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বাগেরহাট কোর্ট চত্বরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হন সামিউল ইসলাম। এতে তার হাতের পেশি কেটে যায় এবং মাথা ও পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। 

এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা সামিউল ইসলামের। ২৬ জুন শুরু হতে যাওয়া পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা দাবি জানিয়েছেন, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়, সেরকম ব্যবস্থা করা হোক সামিউলের জন্যও।

সামিউলের প্রতিবেশী শামসুদ্দোহা বলেছেন, “সামিউল হামলায় আহত হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যায় ভুগছে। সরকারিভাবে যেভাবে অসুস্থদের সহায়তা দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেভাবে তাকেও সুযোগ দেওয়া হোক।”

সামিউলের বাবা আইয়ুব আলী শেখ বলেছেন, “আমার একমাত্র ছেলে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। এখনো তার পিঠ ও হাতে ব্যথা আছে। অনেক খরচ করে চিকিৎসা করালেও উন্নতি হয়নি। সরকার যেন উন্নত চিকিৎসা ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়।”

সামিউলের মা রুবিয়া বেগম বলেছেন, “ছাত্রলীগের হামলায় ওর যা অবস্থা হয়েছে, তা বলার মতো না। আমরা ওকে ভয়ে কোথাও নিতে পারিনি। এখন সে কিছুই করতে পারে না। পরীক্ষা দিতে পারলে হয়ত ভবিষ্যতের একটা রাস্তায় পৌঁছাতে পারত।”

সামিউল ইসলাম বলেছেন, “আমি এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। খেতেও কষ্ট হয়। লেখালেখি করতে পারি না। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এখনো সুস্থ না হওয়ায় সব অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আমি চাই, সরকার যেন আমাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয় এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।”

আন্দোলনের সহযোদ্ধা মো. রেজুয়ান শেখ বলেন, “ছাত্রলীগ রামদা ও হকিস্টিক দিয়ে সামিউলের ওপর হামলা চালায়। সে এখন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাগেরহাট জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম শেখ বলেছেন, “সামিউলের চিকিৎসা এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সে আমাদের আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। তার বর্তমান অবস্থা আমাদের ব্যথিত করে।”

রাংদিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন বলেছেন, “সামিউল মেধাবী শিক্ষার্থী। সরকার যদি তাকে বিশেষ সুবিধা দেয়, তাহলে সে ভালো ফল করতে পারবে।”

ঢাকা/শহিদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিক সমাজ শাসকদের পক্ষে থাকে কেন?
  • ডাকসু নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা দাবিতে প্রশাসনকে ‘সালাম’
  • আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে নারী
  • সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল