শেয়ারবাজারের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ
Published: 14th, February 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বা তহবিল রয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে যেসব ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে বর্ধিত মেয়াদ শেষে অবলুপ্তির প্রস্তাব করেছে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গত মঙ্গলবার টাস্কফোর্স মিউচুয়াল ফান্ড ও মার্জিন ঋণসংক্রান্ত বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিয়েছে। তাতে মিউচুয়াল ফান্ডসংক্রান্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে মেয়াদ শেষে মেয়াদি ফান্ডের অবলুপ্তির সুপারিশ করা হয়। তবে ইউনিটধারীদের মতামত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে মেয়াদি ফান্ডের বে-মেয়াদিতে রূপান্তর করা যাবে বলে সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্স তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ও পরিমাণ ফান্ড ঘোষণার সময় নির্ধারণ করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হবে না। বর্তমানে শেয়ারবাজারে যত মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, সেগুলোর প্রাথমিক মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনোভাবেই আর মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। তবে এরই মধ্যে যেসব ফান্ডের প্রাথমিক মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও ১০ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর বর্ধিত মেয়াদ শেষে ফান্ডগুলোকে অবলুপ্ত করতে হবে।
এ ছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপেরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড থেকে কাউকে কোনো ঋণ বা অগ্রিম প্রদান করা যাবে না। কোনো মিউচুয়াল ফান্ড কোনো একক কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো মিউচুয়াল ফান্ড তার মোট সম্পদের ৩০ শতাংশের বেশি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসেবে রাখতে পারবে না।
মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, মিউচুয়াল ফান্ডের ৬০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, ইকুইটি বা বর্ধিষ্ণু মিউচুয়াল ফান্ডের মোট সম্পদের ৫১ শতাংশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। আর বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ারবাজারের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ অর্থ ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের তহবিল থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও ছাড়া অন্য কোনো ইকুইটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে না।
টাস্কফোর্সের এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে বিএসইসিকে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা পরিবর্তন করতে হবে। তবে আইন পরিবর্তন করে টাস্কফোর্সের সব সুপারিশ গ্রহণ করা হবে নাকি কিছু সুপারিশ গ্রহণ করা হবে, তা নির্ভর করছে বিএসইসির সিদ্ধান্তের ওপর।
পুঁজিবাজার উন্নয়নে আইনকানুন সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশের জন্য গত ৭ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। তবে এ-সংক্রান্ত সরকারি চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ১০ জানুয়ারি। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক আল-আমিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ব এসইস
এছাড়াও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি
স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।
এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ক্যানসার কীভাবে হয়স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদেরডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।
নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সচেতনতা জরুরিনন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন