তিন জিম্মি—আয়ার হর্ন, সাগুই ডেকেল-চেন ও আলেকসান্দ্রে সাশা ত্রোফানভকে আজ শনিবার হামাস মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা এড়াতে মিসর আর কাতারের মধ্যস্থতার পর এই তিনজনের ইসরায়েলে ফেরার পথ খুলেছে। প্রায় এক মাস ধরে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও সম্প্রতি এটি নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, গাজা থেকে আরও তিন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল তার কারাগার থেকে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির ৪২ দিনের সময়সীমা পেরোনোর আগেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা কার্যত দূর হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব আনছে আরব দেশগুলো১৪ ঘণ্টা আগে

এর আগে হামাসের পক্ষ থেকে আরও জিম্মি মুক্তি না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সংগঠনটির অভিযোগ, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ভেঙেছে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনে তারা। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় আবারও যুদ্ধ শুরুর হুমকি দেয় ইসরায়েল। দেশটির রিজার্ভ বাহিনীকেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের পাকাপাকিভাবে সরিয়ে দেওয়া ও উপত্যকাটি নিজেদের দখলে নিয়ে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকে থাকার সম্ভাবনা ম্লান হয়ে পড়েছিল। ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ইসরায়েল স্বাগত জানালেও হামাস আর আরব রাষ্ট্রগুলো দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস নারী-শিশু-প্রবীণসহ ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে রাজি হয়। বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলে। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুনমুক্তি দিতে যাওয়া তিন জিম্মির নাম ঘোষণা হামাসের১৪ ঘণ্টা আগে

আজকের আগে পর্যন্ত হামাস ৩৩ জিম্মির মধ্যে ১৬ জনকে ছেড়ে দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে থাইল্যান্ডের একজন ছিলেন। গাজায় এখনো ৭৬ জন জিম্মি আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের অর্ধেক বেঁচে আছেন।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল, গাজা থেকে অবশিষ্ট জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে দ্বিতীয় পর্যায়ের শান্তি আলোচনার পথ উন্মুক্ত, চূড়ান্তভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর আগে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এবং খাবার, পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতিতে ভোগা গাজার পুনর্গঠন নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুনচুক্তি মেনে জিম্মি মুক্তিতে রাজি হামাস১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জিম্মিমুক্তি আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হামাস অভিযোগ করেছিল, গাজায় তাঁবু ও সহায়তাসামগ্রী ঢুকতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে হাজার হাজার মানুষকে তীব্র শীতের মধ্যে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও তারা হাজারো ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় ঢুকতে দিয়েছে। তারা নয়, বরং হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণসহায়তা দরকার, সে তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল। এ সহায়তা গাজার মানুষদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

আরও পড়ুনগাজায় আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ