শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার শতবর্ষী কাকরকান্দি ফুটবল মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসায় খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। সপ্তাহে এক দিন হাট বসলেও বর্জ্য ও খুঁটি পোঁতার কারণে মাঠে গর্তে সৃষ্টি হয়ে ধীরে ধীরে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠে ফুটবল অনুশীলন ও টুর্নামেন্ট বন্ধ আছে।

খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি উপজেলার সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়েরা গণস্বাক্ষরসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।

জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন এই মাঠে ১৯২৫ সালে সুনামগঞ্জ থেকে আসা ধর্মপ্রচারক সাঙ্গীন সাংমা গারো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম ফুটবলের প্রচলন করেন। তাঁর উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দা পরদ চন্দ্র দিও ২ একর ৭০ শতক জমি জনকল্যাণে দান করেন। সেই জমিতেই প্রতিষ্ঠিত হয় এই ঐতিহাসিক খেলার মাঠ। ওই মাঠকে কেন্দ্র করে গারো খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়ে ওঠে প্রথম স্থানীয় ফুটবল সংগঠন ‘কচ্ছপ ক্লাব’।

স্বাধীনতার পর মাঠের পাশে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি ক্লাব গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন এই মাঠে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে হতো জমজমাট ফুটবল টুর্নামেন্ট। প্রতিদিন স্থানীয় খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করতেন। স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আয়োজন হতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও মেলা। ২০০২-০৩ সাল থেকে মাঠটিতে সাপ্তাহিক গরুর হাট বসতে শুরু করে। গরুর হাটের জন্য খেলার মাঠ ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। এতে মাঠের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গরুর বিষ্ঠা, খুঁটি পোঁতা ও বর্জ্যের কারণে মাঠে গর্ত সৃষ্টি হয়ে ধীরে ধীরে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তরুণ প্রজন্মও মাঠ থেকে বিমুখ হয়ে যায়।

খেলার মাঠে বসেছে গরু-ছাগ‌লের হাট। শেরপু‌রের না‌লিতাবাড়ী উপ‌জেলার কাকরকা‌ন্দি মাঠে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

শতবর্ষী স্টিমারে কীভাবে চড়বেন, খরচ কত

অপেক্ষার পালা শেষ। প্রায় তিন বছর পর আবার জলে ভাসবে পি এস মাহসুদ। ঢাকা–বরিশাল নৌপথে চলার জন্য শতবর্ষী এই স্টিমারটি সংস্কার করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২১ নভেম্বর শুরু হবে চলাচল।

এক সময় ঢাকার সদরঘাট থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার চলাচল করত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীর অভাবে ২০২২ সালে স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিন বছর ধরে অচল থাকা মাহসুদকে নতুন রূপে সাজায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন ঢাকা থেকে বরিশাল যাবে স্টিমারটি। প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে, বরিশাল পৌঁছবে রাতে। আগে স্টিমার চলাচল করত রাতে। কিন্তু এবার দিনে স্টিমার চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে মানুষ আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি স্টিমারটির ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘পি এস মাহসুদ কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদীজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।’

স্টিমার চলা তো শুরু হচ্ছে, কিন্তু এতে একসঙ্গে কত যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে, ভাড়া কেমন পড়বে, টিকিট কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনেকের কৌতূহল। এই প্রতিবেদন তাদেরই জন্য।

কতজন যেতে পারবে

বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল রুটে অনেক বিলাসবহুল লঞ্চ চলালচল করে। লঞ্চগুলো তিন-চারতলা হয়ে থাকে। তবে শতবর্ষী স্টিমার দোতলা। এ কারণে বেশি যাত্রী একসঙ্গে স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবার ১০০ থেকে ১৫০ যাত্রী স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন।

স্টিমারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি থাকবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন। এই কেবিনে দুটি শয্যা থাকবে। সেখানে দুজন অনায়াসে ভ্রমণ করা যাবে। প্রতিটি কেবিনের বাইরে চেয়ার পাতা থাকে। সেখানে বসে নদীপথের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতেও কেবিন সুবিধা রয়েছে। তবে সেটি দ্বিতীয় শ্রেণির। এটি অবশ্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়। এখানেও দুটি করে শয্যা থাকবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২২টি কেবিন রয়েছে স্টিমারে। প্রতিটি কেবিনে দুজন করে যাত্রী থাকলে মোট ৪৪ জন যাত্রী কেবিনে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এ ছাড়া স্টিমারের দোতলার মাঝখানের জায়গা তৃতীয় ক্যাটাগরির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখানে যাত্রীদের বসার জন্য চেয়ার থাকবে। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থাকবে না। এখানে ৫০ জনের মতো যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঅক্টোবরেই নদীতে ফিরছে স্মৃতিময় স্টিমার০৬ অক্টোবর ২০২৫

ভাড়া কেমন

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন ভাড়া সবচেয়ে বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কেবিনের ভাড়া এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ভাড়া ৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ দুজন গেলে মাথাপিছু ৩ হাজার টাকা খরচ হবে সারা দিনের জন্য।

দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই কেবিনের যাত্রীকে মাথাপিছু ২২০০ টাকার কিছু বেশি খরচ করতে হবে।

আর চেয়ারে বসে যেতে চাইলে প্রতি যাত্রীকে ২ হাজার টাকা খরচ করা লাগতে পারে।

বিআইডব্লিউটিসির ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রমণের খরচের মধ্যে যাত্রীদের জন্য কমপ্লিমেন্টারি নাশতার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর পরপরই শুরু হবে নাশতা পর্ব।

শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদ তিন বছর পর আবার নদীপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করছে। গতকাল শুক্রবার সদরঘাটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শতবর্ষী নিষিদ্ধ গান—‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’
  • শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু
  • শতবর্ষী স্টিমারে চড়বেন কীভাবে, কত খরচ
  • শতবর্ষী স্টিমারে কীভাবে চড়বেন, খরচ কত