টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কায় ইতালি, ২৮ বছর পর নরওয়েকে বিশ্বকাপে ফেরালেন হলান্ড
Published: 17th, November 2025 GMT
সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে নরওয়ের বিপক্ষে গতকাল রোববার রাতে ইতালিকে জিততে হতো বড় ব্যবধানে। কিন্তু বড় ব্যবধানে দূরে থাক, উল্টো নরওয়ের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি ইতালি। ঘরের মাঠে উড়ে গেছে ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে।
এই হারের পর ইতালির এখন আর সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই। প্লে-অফের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। অন্য দিকে বাছাইপর্বে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরল নরওয়ে। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিল দেশটি। এবার আর্লিং হলান্ড-আলেক্সান্দার সরলথদের হাত ধরে বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন পূরণ করল দেশটি।
সান সিরোতে গতকাল গোলের শুরুটা অবশ্য ইতালিই করেছিল। ফ্রান্সিসকো পিও এসপোসিতোর গোলে ১১ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। এরপর ম্যাচের ৬৩ মিনিট পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারে ‘আজ্জুরি’রা। কিন্তু ৬৩ মিনিট থেকে দেখা মেলে অন্য এক নরওয়ের। প্রথমে গোল করে নরওয়েকে সমতায় ফেরান আন্তোনিও নুসা। এরপর এক মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করেন হলান্ড। আর যোগ করা সময়ে ইতালির জালে চতুর্থবার বল জড়ান স্ট্রান্ড লারসেন।
আরও পড়ুনহলান্ড এখন মেসি–রোনালদোর পর্যায়ে০৩ নভেম্বর ২০২৫এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে গ্রুপ ‘আই’-এর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লড়াই। যেখানে ৮ ম্যাচের সব কটিতে জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল নরওয়ে। সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইতালি আছে দুইয়ে।
এর ফলে ২০১৮ ও ২০২২–এর পর এখন ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়েও শঙ্কায় পড়ল ইতালি। চারবারের বিশ্বকাপজয়ীদের প্লে-অফ অভিজ্ঞতাও কিন্তু সুখকর নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপে ওঠার লড়াইয়ে প্লে-অফে তারা সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল। চার বছর পর ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও ভেঙে যায় প্লে-অফে উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে ১-০ গোলের হারে।
হলান্ডদের উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব শ বক প ব যবধ ন হল ন ড
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
‘আমরা বসেছিলাম বাসটির সামনে থেকে দুই সিট পড়ে। যতটুকু মনে পড়ে, সামনে একটি মোটরসাইকেল বেপরোয়াভাবেই চলছিল। ডানে-বাঁয়ে বারবার কাত হচ্ছিল সেটি। মোটরসাইকেলটিকে অতিক্রম করতে গিয়ে বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই। হুঁশ আসার পর নিজেকে ঝোপঝাড়ের মধ্যে পাই। তখন স্ত্রী আর ছেলে কোথায় আছে, সে চিন্তা হচ্ছিল বারবার।’
কিছুটা দম নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিজয় কুমার দেব। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। গতকাল সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড পৌর সদরের পন্থিছিলা বটতল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন পাঁচজন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২১ জন, যাঁদের মধ্যে বিজয় কুমার দেব ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছেন। রাতে হাসপাতালে যখন বিজয় কুমারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন সবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর শার্টের এক পাশে রক্তের দাগ স্পষ্ট।
বিজয় কুমার দেব সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক। চার দিন আগে তাঁর শাশুড়ি মারা যান। সে কারণে স্ত্রী কণিকা চৌধুরী ও ছেলে অর্ণব দেবকে নিয়ে মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। কণিকা চৌধুরী বাঁশবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও অর্ণব দেব আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিজয় কুমার দেব জানান, বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ফিরছিলেন সিডিএম নামের বাসে করে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী যেখানে বসেছিলেন এর দুই আসন পড়ে ছিল তাঁদের ছেলে। দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত না হলেও স্ত্রী মাথায় আঘাত পেয়েছেন। সেখানে সেলাই দেওয়া হয়েছে। তবে ছেলের অবস্থা গুরুতর। তাঁর হাত ভেঙেছে এবং মুখ ও মাথায় আঘাত রয়েছে।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। এরপর ঘটনাস্থল থেকে আরও ২১ জনকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরও একজন।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছে ধাক্কা দেয়। এরপর খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা চারজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৬ জনকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে এবং ১ জনকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার উপল চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচজনকে ক্যাজুয়ালটিতে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। একজনের বুকে আঘাত রয়েছে। তাঁকে অস্ত্রোপচার শেষে ক্যাজুয়ালটিতে ভর্তি করা হয়েছে। দুজন পর্যবেক্ষণে আছেন। প্রয়োজন হলে ভর্তি নেওয়া হবে।’
সাধারণত মাথায় আঘাত থাকলে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওয়ার্ডটিতে ভর্তি থাকা ১০ জনের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রেজিস্ট্রি খাতার তথ্য অনুযায়ী, নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ব্যক্তিরা হলেন অর্ণব দেব (২৩), জমির হোসেন (৩০), মোজাম্মেল হক (৬০), রিজভী (৩২), শিখা (৪৫), অর্ণব (৬), রিংকু দাশ (৪০), নিশান দাশ (১৫), ইমন (১৯) এবং আরেকজন অজ্ঞাতপরিচয় তরুণ (২৫)। তাঁদের প্রত্যেকের মাথায় ও হাত-পায়ে আঘাত রয়েছে।
হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে দেখা গেছে, সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। আহত ব্যক্তিদের কারও হাতে, কারও পায়ে ব্যান্ডেজ। প্রায় সবার মাথায় সেলাই ও ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। কথা বলতে এগিয়ে গেলেও তাঁরা কথা বলতে পারছেন না। ইশারায় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার খোরশেদ আনোয়ার বলেন, ভর্তি থাকা ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।