ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতি, আতঙ্কিত চালক ও যাত্রীরা চান নিরাপত্তা
Published: 17th, February 2025 GMT
একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। দিনে-রাতে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও চলছে ডাকাতি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৫ আগস্টের পর তা বেড়েছে। বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী, রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও স্থানীয় তৈরি পোশাকশ্রমিকেরা বেশি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘ঝামেলা এড়াতে’ মহাসড়কে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা মামলা করতে চান না। অনেক সময় পুলিশও ডাকাতির ঘটনায় ছিনতাইয়ের মামলা কিংবা শুধু জিডি নিয়েই দায় শেষ করেন। কিছু ঘটনায় হওয়া মামলায় ডাকাত দলের সদস্যরা ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আসামিরা আবার ডাকাতিতে জড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাওয়া যায়নি। তবে এই মহাসড়কে চলাচলকারী কুমিল্লা অঞ্চলের হালকা যানবাহনের চালকেরা নিজেদের ভার্চ্যুয়াল গ্রুপে শেয়ার করা তথ্যের বরাত দিয়ে বলছেন, গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি। অপর দিকে শেষ ছয় মাসে ঢাকা–চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ এলাকার মাইক্রোবাসচালক সাদেকুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চালকদের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। কারণ, ডাকাত দল যাত্রীদের সর্বস্ব নিয়ে পালানোর সময় কৌশলে চালকদেরই অপরাধী বানাচ্ছে। এতে চালকেরা বিনা অপরাধে আইনি ঝামেলার শিকার হচ্ছেন। আমরা নিরাপদ মহাসড়ক চাই।’
ঘটনা অনেক, মামলা কমথানাগুলো থেকে পাওয়া পুলিশের হিসাব বলছে, গত ছয় মাসে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি থানায় অন্তত ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জ থানায় ১৩টি, বন্দরে ৪টি ও আড়াইহাজারে ২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ছয় মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ছিনতাই মামলা হলেও সোনারগাঁ থানায় কোনো মামলা হয়নি। যদিও এ সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ অংশে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গত ৮ ডিসেম্বর সোনারগাঁর মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেলসহ নেতাদের বহনকারী একটি গাড়িতে ডাকাত দল আক্রমণ করে। এ সময় নেতাদের মারধর করে মালামাল লুটে নেওয়া হয়।
এত কষ্ট করে বিদেশে অর্থ উপার্জন করেছি, কিন্তু ঘরে ফিরেছি শূন্য হাতে। ঘরে আমার দুইটা ছেলে, তাদের জন্য একটা চকলেটও আনতে পারিনি। সেদিন মনে হচ্ছিল প্রাণটা নিয়ে অনেক কষ্টে ঘরে ফিরেছিছিনতাইয়ের শিকার মো.আবু হানিফ, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আরাগ আনন্দপুর গ্রামের প্রবাসী
মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা বিচার করা যাবে না বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক ও বর্তমান দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে আসে। মামলা হয় আরও কম। কোনো ক্ষেত্রে ডাকাতির মামলা না নিয়ে চুরি কিংবা ছিনতাই মামলা নেওয়া হয়। কখনো আবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ভুক্তভোগীদের থানা থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি হলেও পুলিশের খাতায় তার সামান্যই উল্লেখ থাকে।
মহাসড়ক এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রীরা ভয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়েন। আদালত ও থানার হয়রানির ভয়ে তাঁরা মামলা এড়িয়ে যান। বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটলে মামলা হয়। এরপর পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করলেও দ্রুতই তাঁরা জামিনে বের হয়ে আবার ডাকাতিতে জড়াচ্ছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর ছিনতাইকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বহনকারী গাড়িউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন য় ন র য়ণগঞ জ র ছয় ম স
এছাড়াও পড়ুন:
তারুণ্যের চোখে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে “তারুণ্যের ভাবনায় কেমন বাংলাদেশ চাই” শীর্ষক অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) রয়েল রিসোর্টে উৎসবমুখর পরিবেশে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সোনারগাঁ জনকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন।
প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হোসেন ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি তার তরুণ প্রজন্ম। তাদের চিন্তা, উদ্যম ও সৃজনশীলতা দিয়েই গড়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ। তরুণদের দায়িত্ব শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, বরং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসা।
সভাপতির বক্তব্যে মো. আতাউর রহমান বলেন, “তরুণ প্রজন্মের চিন্তা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে আলোকিত বাংলাদেশ। ঐতিহ্যের মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা যদি সততা, মানবতা ও উন্নয়নের দৃষ্টিতে কাজ করে, তাহলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণরা দেশপ্রেম, ঐক্য ও দায়িত্ববোধের শপথ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজ উন্নয়ন ও জাতি গঠনের কাজে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব ও তরুণদের মুক্ত মতবিনিময়। এতে আশা ও প্রেরণার আলো ছড়িয়ে দেয় রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের এই অনন্য আয়োজন।