সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা বর্তমানের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব, দাবি করছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগে পড়ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক সিমুলেশনের মাধ্যমে করা এক গবেষণায় এই ফল পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গবেষক দলটির সদস্যরা হলেন আবিয়াজ করিম, এ এফ এম আফনান উজ্জামান শেখ এবং সাজিদ আহমেদ চৌধুরী। সবাই আইইউবির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের প্রধান ও ফোটোনিকস সিমুলেশন ল্যাবরেটরির (আইইউবিপিএসএল) পরিচালক মুস্তাফা হাবিব চৌধুরী।

সিলিকনভিত্তিক পাতলা ফিল্মের সৌরকোষই বর্তমানে প্রচলিত। এটি সূর্যের মাত্র ১৫ শতাংশ আলো বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারে। তবে এই গবেষণায় উঠে এসেছে, সিলিকনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কাঠামোয় সাজানো হলে এবং অক্সিডেশন প্রতিরোধ করা গেলে রুপা, অ্যালুমিনিয়াম ও টাইটেনিয়ামের মতো ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণা (ন্যানো পার্টিকেল) আরও ভালোভাবে সূর্যের আলো ধরে রাখতে পারে।

বর্তমানে এই শিক্ষার্থীদের দুটি গবেষণা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস এবং কম্পিউটার প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (আইইইই) ডিজিটাল লাইব্রেরি ‘আইইইই এক্সপ্লোর’ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা ডেটাবেজ স্কোপাস-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিজেদের কাজকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বললেন দলের সদস্য আবিয়াজ করিম। সৌরকোষের আলো শোষণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো দলের লক্ষ্য জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম আছে। এগুলোর দক্ষতা মাত্র ১৫ শতাংশ। যদি আমরা এটিকে ৪৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারি, তাহলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

ধাতব কণার মুক্ত ইলেকট্রনগুলো আলো বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় তরঙ্গের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে বিদ্যুৎপ্রবাহ তৈরি করে। তবে বাতাসের সংস্পর্শে এলে ধাতব কণাগুলো ‘অক্সিডাইজ’ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে সাধারণ সিলিকনের অতি ক্ষুদ্র কণায় মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। গবেষণার এ বিষয়টি নিয়ে দলের আরেক সদস্য সাজিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাতাসের সংস্পর্শ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণার ওপর কাচের একটি পাতলা আবরণ দিতে হয়। আমরা প্লাজমনিক ধাতব কোর-ডাইলেকট্রিক শেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি উন্নত মানের থিন-ফিল্ম সৌরকোষ নকশা করেছি। এটি প্রচলিত সিলিকন ফিল্মের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।’

নির্দিষ্ট আকৃতির ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণাগুলোকে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ হিসেবে সাজিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখিয়েছেন তাঁরা। বিশেষ করে ‘বো টাই’ কাঠামো (দুটি ত্রিভুজ আকৃতির ও মাঝে একটি বৃত্তাকার অতি ক্ষুদ্র কণার সংমিশ্রণ) নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি শক্তি শোষণের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণার আকৃতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গোলাকার প্রান্তগুলোর মাধ্যমে আলো শোষণ বাড়ানো সম্ভব। এটির মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সূর্যালোককে বিদ্যুতে রূপান্তর করা যেতে পারে। কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের সৌর প্রযুক্তি তৈরিতে এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে বলে করেন দলের অন্য সদস্য এ এফ এম আফনান উজ্জামান শেখ।

দলটি বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক একটি অ্যালগরিদম তৈরিতে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সুপারভাইজার মুস্তাফা হাবিব বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেই যেতে হবে। কম কার্যক্ষমতার সৌর প্যানেল থেকে দেশের বিশাল সুবিধা পাওয়া কঠিন। তাই এর কার্যক্ষমতা বাড়ানোই গবেষণার লক্ষ্য। এই উচ্চস্তরের গবেষণা আমাদের তৃতীয় বর্ষের তরুণেরা করছে। এ জন্য অনেক বিষয়ের থিওরি এবং সফটওয়্যার নিজেদেরই শিখতে হয়েছে। এটা একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।’

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রসঙ্গে নিজের মতামত জানিয়েছেন আইইউবির উপাচার্য ম.

তামিম। ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সহজলভ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো সৌরশক্তি। এর কার্যকারিতা বাড়ানো গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা অনেকটাই এগোতে পারব। শিক্ষার্থীদের এই গবেষণা প্রমাণ করে, সঠিক পরিবেশ পেলে আমাদের মেধাবী তরুণেরা বাস্তব সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আইইউবি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে তাদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়নে অবদান রাখছে, এটি সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র সদস য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স, সিজিপিএ ২.৫ হলেই আবেদন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ১৬তম ব্যাচে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫) প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রোগ্রামের বিবরণ

১. প্রোগ্রামের মেয়াদ-২ বছর।

২. ক্রেডিট ঘণ্টা-৫১।

৩. কোর্সের সংখ্যা-১৬, প্রজেক্ট পেপার থাকবে একটি।

৪. অনলাইনে আবেদন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

ভর্তির যোগ্যতা

১. যেকোনো বিভাগে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে।

২. সব পাবলিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি বা ডিভিশন অথবা সিজিপিএ ২.৫ (৪.০০ এর মধ্যে) থাকতে হবে।

২. কমপক্ষে এক বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

৩. অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, অডিটিং ও আয়কর বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

৪. কাজের অভিজ্ঞতা ICAB, ICMAB, ACCA, গ্লোবাল ICSB ও FCA প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকতে হবে।

আরও পড়ুনইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ওয়াইপিপি প্রোগ্রাম, আরবি অথবা ফরাসি ভাষায় দক্ষতায় বাড়তি সুযোগ০৩ মে ২০২৫পরীক্ষার বিস্তারিত

১. এমসিকিউ অংশ: গণিত, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান বা সাধারণ জ্ঞান (যেকোনো একটি ব্যবসায় শিক্ষার বাইরের ছাত্রছাত্রীদের)।

২. লিখিত অংশ: ট্রান্সলেশন ও প্যারাগ্রাফ রাইটিং।

৩. মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

ভর্তির বিস্তারিত তথ্য

১. আবেদনের শেষ তারিখ: ১৭ জুন ২০২৫।

২. ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার।

ক. এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার সময়: বেলা ৩টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

খ. মৌখিক পরীক্ষার সময়: বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট।

আবেদনপত্রের মূল্য

১ হাজার ৫০০ টাকা।

আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের এআইটি স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, জেনে নিন সব তথ্য০৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ