সৌরশক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন আইইউবির তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীরা
Published: 17th, February 2025 GMT
সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা বর্তমানের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব, দাবি করছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগে পড়ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক সিমুলেশনের মাধ্যমে করা এক গবেষণায় এই ফল পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গবেষক দলটির সদস্যরা হলেন আবিয়াজ করিম, এ এফ এম আফনান উজ্জামান শেখ এবং সাজিদ আহমেদ চৌধুরী। সবাই আইইউবির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের প্রধান ও ফোটোনিকস সিমুলেশন ল্যাবরেটরির (আইইউবিপিএসএল) পরিচালক মুস্তাফা হাবিব চৌধুরী।
সিলিকনভিত্তিক পাতলা ফিল্মের সৌরকোষই বর্তমানে প্রচলিত। এটি সূর্যের মাত্র ১৫ শতাংশ আলো বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারে। তবে এই গবেষণায় উঠে এসেছে, সিলিকনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কাঠামোয় সাজানো হলে এবং অক্সিডেশন প্রতিরোধ করা গেলে রুপা, অ্যালুমিনিয়াম ও টাইটেনিয়ামের মতো ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণা (ন্যানো পার্টিকেল) আরও ভালোভাবে সূর্যের আলো ধরে রাখতে পারে।
বর্তমানে এই শিক্ষার্থীদের দুটি গবেষণা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস এবং কম্পিউটার প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (আইইইই) ডিজিটাল লাইব্রেরি ‘আইইইই এক্সপ্লোর’ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা ডেটাবেজ স্কোপাস-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নিজেদের কাজকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বললেন দলের সদস্য আবিয়াজ করিম। সৌরকোষের আলো শোষণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো দলের লক্ষ্য জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম আছে। এগুলোর দক্ষতা মাত্র ১৫ শতাংশ। যদি আমরা এটিকে ৪৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারি, তাহলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’
ধাতব কণার মুক্ত ইলেকট্রনগুলো আলো বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় তরঙ্গের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে বিদ্যুৎপ্রবাহ তৈরি করে। তবে বাতাসের সংস্পর্শে এলে ধাতব কণাগুলো ‘অক্সিডাইজ’ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে সাধারণ সিলিকনের অতি ক্ষুদ্র কণায় মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। গবেষণার এ বিষয়টি নিয়ে দলের আরেক সদস্য সাজিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাতাসের সংস্পর্শ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণার ওপর কাচের একটি পাতলা আবরণ দিতে হয়। আমরা প্লাজমনিক ধাতব কোর-ডাইলেকট্রিক শেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি উন্নত মানের থিন-ফিল্ম সৌরকোষ নকশা করেছি। এটি প্রচলিত সিলিকন ফিল্মের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।’
নির্দিষ্ট আকৃতির ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণাগুলোকে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ হিসেবে সাজিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখিয়েছেন তাঁরা। বিশেষ করে ‘বো টাই’ কাঠামো (দুটি ত্রিভুজ আকৃতির ও মাঝে একটি বৃত্তাকার অতি ক্ষুদ্র কণার সংমিশ্রণ) নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি শক্তি শোষণের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। ধাতব অতি ক্ষুদ্র কণার আকৃতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গোলাকার প্রান্তগুলোর মাধ্যমে আলো শোষণ বাড়ানো সম্ভব। এটির মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সূর্যালোককে বিদ্যুতে রূপান্তর করা যেতে পারে। কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের সৌর প্রযুক্তি তৈরিতে এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে বলে করেন দলের অন্য সদস্য এ এফ এম আফনান উজ্জামান শেখ।
দলটি বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক একটি অ্যালগরিদম তৈরিতে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সুপারভাইজার মুস্তাফা হাবিব বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেই যেতে হবে। কম কার্যক্ষমতার সৌর প্যানেল থেকে দেশের বিশাল সুবিধা পাওয়া কঠিন। তাই এর কার্যক্ষমতা বাড়ানোই গবেষণার লক্ষ্য। এই উচ্চস্তরের গবেষণা আমাদের তৃতীয় বর্ষের তরুণেরা করছে। এ জন্য অনেক বিষয়ের থিওরি এবং সফটওয়্যার নিজেদেরই শিখতে হয়েছে। এটা একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।’
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রসঙ্গে নিজের মতামত জানিয়েছেন আইইউবির উপাচার্য ম.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫