ফেনীতে কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। ঢাকার ধামরাইয়ে গাড়িচাপায় স্বামী-স্ত্রীসহ প্রাণ গেছে তিনজনের। রাজধানীর মাতুয়াইলে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেছে আরেক দম্পতির। এ ছাড়া পিরোজপুরের নাজিরপুরে বাবা-ছেলে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দু’জন এবং নওগাঁর ধামইরহাট, নাটোরের বড়াইগ্রাম, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘন কুয়াশায় পাঁচ গাড়ির সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২২ জন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর হাফিজিয়া এলাকায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। মহিপাল হাইওয়ে থানার ওসি হারুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পিকআপে বেশ কয়েকজন শ্রমিক ছিলেন।

ঢাকার ধামরাইয়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী ও এক মানসিক ভারসাম্যহীন প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন বাবুল হোসেন (৩০), তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৮) ও সুভাষ লৌহকার (৭৪)। গত রোববার রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বাথুলি এলাকায় গাড়িচাপায় প্রাণ যায় মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতির। তারা টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বাসিন্দা। ধামরাইয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এর আগে একই সড়কের বালিথা এলাকায় গাড়িচাপায় নিহত হন পথচারী সুভাষ লৌহকার। 

রাজধানী যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে রাস্তা পার হওয়ার সময় পিকআপের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। গুরুতর আহত হয়েছে মেয়ে জুঁই আক্তার। স্বজনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে মাতুয়াইলের বাসা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাওয়ার পথে গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেটের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত দম্পতি হলেন আবদুল জব্বার ও রুনা খানম।

পিরোজপুরের নাজিরপুরে বাসের ধাক্কায় ভ্যানযাত্রী বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার উপজেলার রুহিতলাবুনিয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন চালিতাবাড়ী গ্রামের মাহাবুব মোল্লা (৪৫) ও তাঁর ছেলে ইয়াত মোল্লা (১৫)। দুর্ঘটনায় তিনজন আহত হন। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাউশিয়া এলাকায় অজ্ঞাত গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন পুড়াজক বাউশিয়া গ্রামের নাঈম মৃধা (২৫) ও মধ্য বাউশিয়া গ্রামের সজিব প্রধান (২৩)। আহত হয়েছেন পুড়াচক বাউশিয়ার মো.

হামজা। 

নওগাঁর ধামইরহাটে মোটরসাইকেল গাছে ধাক্কা খেয়ে আসাদুজ্জামান রঞ্জু (৩৮) নামে এক পশুচিকিৎসকের প্রাণ গেছে। তিনি উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বস্তাবর গ্রামের ওয়ারেছ আলী মণ্ডলের ছেলে। 

নাটোরের বড়াইগ্রামে তিন গাড়ির সংঘর্ষে পিকআপচালক নাহিদ হোসেন (৩০) নিহত হয়েছেন। সামনে থাকা সারবাহী ট্রাকের গতি কমিয়ে দিলে পেছনের চিটাগুড়বাহী লরি মাঝখানে থাকা ফলবাহী পিকআপকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপ দুমড়েমুচড়ে গিয়ে চালক নাহিদের প্রাণ যায়। তিনি নওগাঁ জেলার রেজ্জাকপুর এলাকার শাহিন আলমের ছেলে। 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বাবাকে খাবার দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইটভর্তি ট্রলির ধাক্কায় সাকিম হোসেন (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে। সে দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের আকবর মণ্ডলের ছেলে ও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে মথুরাপুর ইউনিয়নের কৈপাল হিসনাপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উপজেলার ভাঙ্গাপোল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রফিতুলের বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তিনি দৈনিক ৭১ বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কামারখোলা এলাকায় গতকাল সকালে ঘন কুয়াশায় পাঁচটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। যাত্রীরা জানান, ঘন কুয়াশা ও গাড়ির চালকদের অসাবধানতার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন র উপজ ল র এ দ র ঘটন র স ঘর ষ গতক ল স প কআপ র জন আহত এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ