যত দ্রুত সম্ভব মস্কো ও ওয়াশিংটনে দূতাবাস চালু করবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া
Published: 18th, February 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের বৈঠক সাড়ে চার ঘণ্টা পর শেষ হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈঠকে সব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবি বলেছেন, এই বৈঠক একটি দীর্ঘ ও কঠিন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার প্রথম ধাপ। বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে বলে উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এই সময়ের মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় বসল ওয়াশিংটন ও মস্কো। তবে এই আলোচনায় ইউক্রেনকে যুক্ত করা হয়নি। আমন্ত্রণ পায়নি ইউরোপে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোও।
আলোচনার মাধ্যমে ওয়াশিংটন ও মস্কোর অবস্থান একই দিকে এগোচ্ছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল আলোচনায় অংশ নেওয়া রুশ প্রতিনিধি ইউরি উশাকভের কাছে। তিনি বলেন, ‘তারা কাছাকাছি আসছে কি না, তা বলা কঠিন। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।’
ক্রেমলিনের এই সহযোগী আরও বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম, তার সব কটি নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় হয়েছে।’ ইউক্রেন নিয়ে কথা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা আলোচনা করেছি এবং আমাদের নীতিগত পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেছি। আর একমত হয়েছি যে সময়মতো মধ্যস্থকারীদের দুটি দল এ বিষয়ে যোগাযোগ করবে।’
বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন। সেগুলো হলো:
দুই পক্ষই ওয়াশিংটন ও মস্কোতে দুই দেশের দূতাবাসে কর্মীদের ফিরিয়ে সেগুলো সচল করার বিষয়ে একমত হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় সহায়তার জন্য দুই দেশই একটি করে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র খতিয়ে দেখবে দুই পক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুঝতে পেরেছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের একটি ‘ন্যায্য ও স্থায়ী’ সমাপ্তি টানার জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায়’ সম্পৃক্ত হতে মস্কো আগ্রহী।
মার্কো রুবিও বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউক্রেনের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ হবে। এই প্রক্রিয়া থেকে ইউক্রেন ও ইউরোপকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নাকচ করেছেন তিনি।
অপর দিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তিনটি বিষয়ে মতৈক্য হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো:
যত দ্রুত সম্ভব দুই দেশ একটি অন্যটিতে অবস্থিত দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেবে। দূতাবাসগুলোতে ব্যাংক লেনদেন বাধা অপসারণসহ কূটনৈতিক মিশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।
ইউক্রেন বিষয়ে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে। তারপর রাশিয়া তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পুরোদমে সহযোগিতা পুনরায় চালু এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা হবে।
আরও পড়ুনপ্রয়োজন হলে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন পুতিন: ক্রেমলিন২ ঘণ্টা আগেলাভরভ বলেছেন, ‘এটা খুবই উপকারী আলোচনা হয়েছে। আমরা একে অপরের কথা শুনেছি।’
দুই পক্ষের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ নেন। আলোচনা শুরুর আগে সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
এই আলোচনা ‘খুবই গঠনমূলক’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান এবং মস্কোর অর্থনীতিবিষয়ক মধ্যস্থতাকারী কিরিল দমিত্রিয়েভ। তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছি.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালুসহ ১১টি বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এবি পার্টি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দল দুটি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার পরিবেশ তৈরি হবে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ধর্মবিরোধী, ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী। কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে এবি পার্টিও একমত।
বৈঠক সম্পর্কে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বানানো পর্যন্ত এই ঐক্য টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
দুই দলের বৈঠকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন–সার্বভৌম টেকসই কল্যাণকর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; ভোটাধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা এবং প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা; আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা; দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সংবিধানে বিদ্যমান শরিয়াহবিরোধী আইন বাতিল এবং ইসলামসহ সব ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য পরিহার করা, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো কথা বা বক্তব্য না দেওয়া।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, মাওলানা সৈয়দ এসহাক মু. আবুল খায়ের ও মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম।
অপর দিকে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও বি এস নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান, সংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) গাজী নাসির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।