বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়েছে, মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি: অ্যাটর্নি জেনারেল
Published: 20th, February 2025 GMT
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বিগত সময় (আওয়ামী সরকার) পুলিশ বাদী হয়ে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ৩৬ জুলাইয়ের পর রাজনৈতিক মামলা ও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হয়নি। বিগত সময় ৭০০ মানুষ গুম হয়েছে, বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। বিগত সরকার সাড়ে চার হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। ৩৬ জুলাইয়ের পর বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখনো মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি। ময়মনসিংহ নগরের একটি রিসোর্টে আজ বৃহস্পতিবার এক কর্মশালায় এ কথাগুলো বলেন তিনি।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক দিনব্যাপী এই কর্মশালা বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়। এতে বিভাগের চার জেলার বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মো.
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সঙ্গে দেখেছি, গত ১৫ বছর কীভাবে ফ্যাসিজমকে লালন করেছেন, এখনো অনেকে মদদ দিচ্ছেন। ফ্যাসিজমকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা আছে। আমরা এসেছি ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করতে। আমরা এসেছি শহীদদের রক্তের দায় থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিতে। এ যাত্রায় ফেল করলে দেশের গণতন্ত্র সার্বভৌমত্ব হারাবে।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষক ও আইসিটি) লুৎফন নাহারের সঞ্চালনায় কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মাহবুবুর রহমান।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ কোনো অঙ্গ যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে তার প্রভার অন্যদের ওপর পড়ে। গত ৫ আগস্টের আগে কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে নানা অপকর্ম করেছেন। ৫ আগস্টের পর মামলার হিড়িক পড়ে। তখন মামলায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার আসামি দেওয়া হয়, কিন্তু কিছু করার ছিল না। নিরীহ কোনো লোককে গ্রেপ্তার না করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলাগুলোর তদন্তে যে অসুবিধা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বিচার বিভাগ বিবেচনায় নেবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণি। তিনি জানান, ঢাকার পর ময়মনসিংহে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই কর্মশালা হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন, পুলিশের ডিআইজি আশরাফুর রহমান প্রমুখ।
কর্মশালায় জুলাই-আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতির পর পুলিশ ও বিচার বিভাগের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে এবং মানবাধিকার সমুন্নত রেখে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, জনগণ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব দূর করা, বিচার বিভাগ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার ও শাসন বিভাগ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’