এমসি কলেজে তালামীয নেতাকে ‘রড দিয়ে পেটানোর’ অভিযোগ শিবিরের বিরুদ্ধে
Published: 20th, February 2025 GMT
ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে সিলেটের এমসি কলেজ (মুরারিচাঁদ) আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এক নেতাকে রড দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।
মারধরের শিকার মো. মিজানুর রহমানের দাবি, তাঁকে এমসি ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা মারধর করেছেন। তিনি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে কলেজ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
তবে কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো নেতা–কর্মীরা জড়িত নন। ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে তৃতীয় একটি পক্ষ কলকাঠি নাড়াচ্ছে। মূলত কলেজ ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামের ওই শিক্ষার্থী ও একই কলেজের জাকিরুল ইসলাম নামের অন্য একজন শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছেন। এতে দুজনই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত মিজানুর রহমান তালামীযে ইসলাম এমসি কলেজ শাখার সহতথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রক্ত দেওয়ার পরও আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখন যারা আসছে, তাদের মধ্যেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই এমন মন্তব্য করার অধিকার তাঁর আছে। ওই মন্তব্যের জেরে রাতে কলেজের ১০-১২ জন ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মী তাঁর কক্ষে গিয়ে মন্তব্যটি বের করে মারধর করেছেন। এ সময় রড দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। তাঁর কক্ষে থাকা জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষার্থী তাঁদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাঁর ওপরও চড়াও হয়েছিলেন হামলাকারীরা।
হামলাকারীদের চিনতে পেরেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের ইসমাঈল, নাজমুল, আদনান, সাদমানসহ অনেকে ছিলেন। শিবিরের নেতা–কর্মীরা ‘দাওয়াত’ নিয়ে তাঁর কক্ষে গিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, সে সময় তাঁর কক্ষে ইসলামিক ও হাদিস লেখা কিছু ক্যালেন্ডার পেয়েছিলেন। সেটি তাঁরা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন তালামীয ছাত্রলীগের দোসর।
এদিকে জাকিরুল ইসলাম নামে ছাত্রাবাসের আরেক শিক্ষার্থীর দাবি, তাঁকে মিজানুর রহমান মারধর করেছেন। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফেসবুকে একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামে ছাত্রলীগের এক সদস্য থাকেন। তিনি সাধারণ ছাত্রদের তথ্য ছাত্রলীগের কাছে আদান–প্রদান করেন। তাঁকে অস্ত্রসহ ধরা হয়েছিল। এ সময় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়েছেন। এতে তাঁর হাত ভেঙে গেছে।
এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান বলেন, কলেজে তিন দিনব্যাপী বইমেলা চলমান। সেখানে শিবিরের একটি স্টল রয়েছে। স্টলে দলের নেতা–কর্মীসহ তিনি দিনরাত থাকেন। বুধবার রাতে ছাত্রাবাসে একটি ঘটনা শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। পরে আহত শিক্ষার্থীদের তিনি হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালেও দুজনকেই হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে দুই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। হামলার ঘটনার সঙ্গে শিবির জড়িত থাকলে তিনি সেখানে যেতেন না। আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারও তাঁদের স্বাগত জানাত না।
আনজুমানে তালামীযে ইসলামের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিজানুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। শিবিরের নেতা–কর্মীরা তাঁর ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছেন। পতিত স্বৈরাচারের আমলে যেমন ফেসবুকে পোস্ট–কমেন্ট করলে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্যাম্পাসে হামলা হতো। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময় কোনোভাবেই কাম্য নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের কর্মীকে যেভাবে দোসর–স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, তা নিন্দনীয়।
এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এ ব্লকেরøসুপার মুসলেহ উদ্দিন খান বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে দুই শিক্ষার্থীকে দেখতে গিয়েছিলেন। রাতে কী বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।
কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন কল জ ছ ত র কর ম র কল জ র কর ছ ন ইসল ম এ ঘটন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।